পাতা:লঘুগুরু প্রবন্ধাবলী - রাজশেখর বসু.pdf/৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৪
লঘুগুরু

দাও এবং উদ্‌ভিজ্জ পদার্থ বলিয়া প্রচার কর, উহা যে অতি সস্তা মাছের তেল হইতে প্রস্তুত নয় তাহারই বা প্রমাণ কি? বিলাতী ব্যবসাদার মাত্রেই তাে ধর্মপুত্র নয়। আরও এক কথা-ঘনীকৃত তৈলে ঈষৎ মাত্রায় নিকেল ধাতু দ্রবীভূত থাকে, রাসায়নিকগণ তাহা জানেন। তাহাতে কালক্রমে স্বাস্থ্যহানি হয় কিনা কে বলিতে পারে?

 এই বিতর্ক লইয়া বেশী মাথা ঘামাইবার দরকার নাই। দূরদর্শী দেশহিতৈষী মাত্রই বুঝিবেন—বিদেশী ঘনীকৃত তৈল সর্বথা বর্জনীয়। কেবল একটা কথা বলা যাইতে পারে―ভাইটামিনের অভাব জনিত আপত্তি প্রবল নয়। সাবধানে মাখন গলাইয়া ঘি করিলে ভাইটামিন সমস্তই বজায় থাকে। কিন্তু বাজারের ঘি তৈয়ারির সময় বিশেষ যত্ন লওয়া হয় না, গােয়ালা ও আড়তদারের গৃহে বহুবার উন্মুক্ত কটাহে জাল দেওয়া হয়, তাহাতে ভাইটামিন অনেকটা নষ্ট হয়, অবশ্য কিছু অবশিষ্ট থাকে। হালুইকরের কটাহে যে ঘি দিনের পর দিন উত্তপ্ত করা হয় তাহাতে কিছুমাত্র ভাইটামিন থাকে কিনা সন্দেহ। এবিষয়ে কেহ পরীক্ষা করিয়াছেন কিনা জানি না। মােট কথা, বাড়ির রান্নায় যে ঘি দেওয়া হয় তাহাতে ভাইটামিন থাকিতে পারে কিন্তু বাজারের ঘৃতপক্ব খাবারে না থাকাই সম্ভবপর। ইহাও বিবেচ্য—দেশের অধিকাংশ লােক ঘি খাইতে পায় না, রান্নায় তেলই বেশী চলে, এবং তেলে ভাইটামিন নাই, অন্তত ঘিএ যে ভাইটামিন থাকে তাহা নাই।