পাতা:ভূতের বিচার - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১০
ভূতের বিচার

দ্রব্যাদি বিশেষ কিছু ঘরে ছিল না, কাজেই তৈজসপত্র বা বস্ত্রাদি যাহা কিছু সম্মুখে পাইল, তাহাই লইয়া প্রস্থান করিল। মূল্যবান দ্রব্যের মধ্যে একটী সোনার ঘড়ি, চেন, চেনে সংলগ্ন একখানি মোহর, একটী আংটী ও কয়েকখানি রূপার বাসন অপহৃত হইয়াছে। উহারা যখন মশালের আলো জ্বালিয়া বাহির হইয়া যায়, তখন আমি উহাদিগের অনেককে উত্তমরূপে দেখিয়াছি, বোধ হয় চিনিলেও চিনিতে পারি। উহাদিগের মধ্যে আমি হানিফ খাঁর মূর্ত্তি স্পষ্ট দেখিয়াছি। সেই ঐ দলের দলপতির কার্য্যে নিযুক্ত ছিল, কিন্তু আমি কিছুই বুঝিয়া উঠিতে পারিতেছি না যে, যে ব্যক্তিকে ফাঁসি দেওয়া হইয়াছে, সেই ব্যক্তি পুনরায় কিরূপে আগমন করিল? ভূত-প্রেতের কথা আমি কখন বিশ্বাস করি নাই, কিন্তু হানিফ খাঁকে দেখিয়া আমি কিছুই স্থির করিতে পারিতেছি না। আমার বাড়ীতে যেরূপ অবস্থা ঘটিয়াছিল, তাহাই আপনাকে লিখিলাম, এ সম্বন্ধে যদি কোনরূপ অনুসন্ধান করা আবশ্যক বিবেচনা করেন, করিবেন। আমি যাহাকে দেখিয়া হানিফ খাঁ বলিয়া চিনিতে পারিয়াছি, সে প্রকৃত হানিফ খাঁই হউক বা তাহার ভূতই হউক, অথবা হানিফ খাঁর বেশধারী অপর কোন ছদ্মবেশী পুরুষই হউক, সে যে আমাকে হত্যা করিতে আসিয়াছিল, সে বিষয়ে আর কিছু মাত্র সন্দেহ নাই।”

 প্রধান পুলিস-কর্ম্মচারী সাহেব এই পত্র পাইয়া আর ক্ষণমাত্র স্থির থাকিতে পারিলেন না, তখনই তাঁহার অধীনস্থ উপযুক্ত পুলিস-কর্ম্মচারীগণকে সঙ্গে লইয়া এই ঘটনার অনুসন্ধানে গমন করিলেন।

 ঘটনাস্থলে গমন করিয়া জজ সাহেবের বাড়ীর অবস্থা স্বচক্ষে দেখিলেন। দেখিলেন, যে, সেই বাড়ীতে প্রকৃতই ডাকাইতি হইয়া গিয়াছে। সেই বাড়ীর নিকটে অপর কোন লোকের আবাসস্থান ছিল না। জেলায় সাহেবপাড়ায় যেরূপ বাঙ্‌লায় সাহেবগণ বাস করিয়া থাকেন, ইহাও সেই প্রকারের বাঙ্‌লা, ময়দানের মধ্যে স্থাপিত। সুতরাং ডাকাইতি হইবার সময় পাড়ার লোকের কোনরূপ সাহায্য পাইবার উপায় নাই। ভরসার মধ্যে কেবল ভৃত্যগণ, তাহার মধ্যেও অনেকেই রাত্রিকালে সেই স্থানে থাকে না, পাড়ার ভিতর প্রায় সকলেরই থাকিবার স্থান আছে, রাত্রিকালে তাহারা সেই স্থানে গমন করিয়া থাকে ও পরদিবস প্রত্যূষে আপনাপন কার্য্যে উপস্থিত হয়।

 সুতরাং নিকটবর্ত্তী কোন লোক-জনের নিকট হইতে বিশেষ কোনরূপ অবস্থা তাঁহারা অবগত হইতে পারিলেন না। কেবল মাত্র একজন চৌকিদার কহিল, সে যখন চৌকি দিতে বাহির হয়, সেই সময় জজ সাহেবের বাড়ীর দিকে মশালের আলো দেখিয়া ও লোকের কলরব শুনিয়া স্পষ্টই বুঝিতে পারে,