পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/১১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মনে করেন, হজরত মোহম্মদকে শেষ নবী বলে বিশ্বাস করেন, কোরান ও হাদিস নির্দিষ্ট পথে চলাকে মানব জীবনের চরম সার্থকতা বলে মনে করেন, কেয়ামতে বিশ্বাস করেন, বিশ্বাস করেন বেহস্ত ও দোজখে, আত্মার অমরত্বে ফেরস্তা ও নিপাকে, রোবাক ও মেয়ারাজের অস্তিত্বে, তিনিই মুসলমান। যাঁরা বাইবেলের ‘নিউ টেস্টামেণ্ট'-এর কাহিনী অনুযায়ী যিশুকে ঈশ্বরের একমাত্র পুত্র ও প্রতিনিধি বলে বিশ্বাস করেন এবং মান্য করেন, যিশুর পুনরুত্থানের কাহিনী সত্যি বলে বিশ্বাস করেন, নিউ টেস্টামেণ্টের নির্দেশ মত আচার-আচরণকে সদাচার মনে করেন, আত্মা তত্ত্বে বিশ্বাস করেন, তিনিই খ্রিস্টান।

 কিন্তু শুধুমাত্র এতেই হিন্দু, মুসলিম বা খ্রিস্ট ধর্মগুলো চূড়ান্ত রূপ পায় না। প্রত্যেক ধর্মেরই রয়েছে কাশী, পুরী, মক্কা, মদিনা, জেরুজালেমের মত পবিত্র তীর্থস্থান; মন্দির, মসজিদ, গীর্জার মত উপাসনাকক্ষ; ঈশ্বরকে তুষ্ট করার নানা উপচার-পদ্ধতি-প্রকরণ, বেদ-কোরান-বাইবেলের মত পবিত্র ধর্মগ্রন্থ এবং ধর্মগুরু বা পুরোহিত শ্রেণী। এই সবকিছু মিলিয়ে, সবকিছুকে সম্পর্কীত করে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্ট এবং আরও বিভিন্ন ধর্মই তাদের সাংগঠনিক কাঠামো বা প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তুলেছে। তাই এইসব ধর্মকে সমাজ-বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম বলে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।

 ‘ধর্ম বলতে 'Religion' বা প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের কথা না বলে আমরা যদি কোনও কিছুর গুণ বা বৈশিষ্ট্য অর্থাৎ 'Property'কে বোঝাতে চাই, বোঝাতেই পারি; কোনও অসুবিধে নেই। বরং বলা যায় ‘ধর্ম' বলতে আত্মা-পরমাত্মা-পরলোক ইত্যাদি অলীক-বিশ্বাস নির্ভর সাংগঠনিক কাঠামোর চেয়ে, ধর্ম বলতে কোনও কিছুর গুণ বা বৈশিষ্ট্য'-কে চিহ্নিত করাই যুক্তির নিরিখে কাঁটায় কাঁটায় ঠিক। কারণ, প্রথমটি অলীক-বিশ্বাস নির্ভর; দ্বিতীয়টি বাস্তব নির্ভর, যুক্তি নির্ভর। এরপর আমরা নিশ্চয়ই বলতে পারি—'ধর্ম' মানে শনি, শীতলার পুজো, দরগার সিরনি বা গীর্জার মোম জ্বালানো নয়। 'ধর্ম' মানে আত্মা-পরমাত্মা-পরলোকের অলীক চিন্তায় নতজানু হওয়া নয়। ধর্ম মানে বেদ-কোরান- বাইবেল-কে অপৌরুষেয় মনে করে ধর্মগ্রন্থের নির্দেশমত অমানবিক জীবন যাপন নয়। 'ধর্ম' মানে জীবে প্রেম বিলোবার নামে দুর্নীতিগ্রস্ত শোষকের প্রতি প্রেম বিলানো নয়। আগুনের 'ধর্ম' যেমন 'দহন', তলোয়ারের ‘ধর্ম' 'তীক্ষ্ণতা', মানুষের ‘ধর্ম' তেমনই 'মনুষ্যত্ব’ বা ‘মানবতা', যে মানবতা সাম্যের সুন্দর সমাজ গড়তে শেখায়, মানুষকে এগিয়ে যেতে শেখায়। এই ‘এগিয়ে যাওয়া', এই 'প্রগতি' আজকের অসাম্যের সমাজ কাঠামোর 'প্রগতি' নয়, যেখানে 'মানুষের প্রগতি' বলতে মুষ্টিমেয় মানুষের প্রগতি ও তামাম মানুষের দুর্গতিকে বোঝায়।

O
‘ধর্ম’ বলতে আত্মা-পরমাত্মা-পরলোক ইত্যাদি অলীক-বিশ্বাস নির্ভর

১১০