পাতা:ঝাঁশির রাণী - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঝাঁশির রাণী ।

কতকটা বর্ণ-পরিচয় হইয়াছিল। নানাসাহেব ও রাওসাহেব যখন ঘোড়ায় চড়িয়া বাহির হইতেন, মনুবাইও তাহাদের সঙ্গে যাইত। নানাসাহেবকে তলবার-খেলা অভ্যাস করিতে দেখিয়া মনুবাইও তলবার ঘুরাইতে চেষ্টা করিত। নানাসাহেব হস্তী আরোহণ করিলে, মনুবাইও হাতীতে চড়িবার জন্য উৎসুক হইত। শ্রীমন্ত বাজীরাওর নিকট তখন একটা মাত্র হস্তী ছিল। একদিন পেশোয়া বাজীরাও, বালিকাকে লইয়া হাতীর উপর বসাইতে নানাসাহেবদিগকে আদেশ করিলেন। কিন্তু তাহারা কিছুতেই কথা শুনে না, বালিকাও জেদ ছাড়ে না। এই সময়ে, মোরোপন্ত অত্যন্ত বিরক্ত হইয়া মনুবাইকে বলিল “তোর অদৃষ্টে হাতী কোথা হইতে আসিবে?” এই কথা শুনিয়া সেই উজ্জ্বল-চেতা বালিকা উত্তর করিল “এক ছেড়ে দশটা হাতী আমার ভাগ্যে আছে।” এইরূপে তেজস্বী রাজকুমারদিগের সংসর্গে থাকিয়া বালিকা মনুবাইর পুরুষোচিত বিবিধ শিক্ষা লাভ হইয়াছিল।

 মনু-বাইর বিবাহের বয়স উপস্থিত হইলে, তাহার পিতা মোরোপন্ত অতিশয় উদ্বিগ্ন হইয়া যোগ্য পাত্রের অনুসন্ধান করিতে লাগিলেন। এক দিন, তিনি কন্যার জন্ম নক্ষত্র ও গ্রহাদির ফলাফল জানিবার জন্য তাহার জন্ম-পত্রিকা কোন উৎকৃষ্ট গ্রহাচার্য্যকে দেখাইতে মনস্থ করিলেন। দৈবক্রমে সেই সময়ে জ্যোতিঃশাস্ত্রপটু বেদশাস্ত্রবিদ তাতা-দীক্ষিত নামক এক পণ্ডিত শ্রীমন্ত বাজীরাও-সাহেবের সহিত সাক্ষাৎ করিতে আসিয়া- ছিলেন। মোরোপন্ত স্বীয় কন্যার জন্ম-পত্রিকা তাঁহার সম্মুখে আনিয়া, তাহার ফলাফল গণনা করিবার জন্য তাঁহাকে অনুরোধ করিলেন। কোষ্ঠী দেখিয়া আচার্য-ঠাকুর বলিলেন, কন্যার গ্রহফল এতাদৃশ শুভ- দায়ক যে, সে একদিন রাণী' পদবী প্রাপ্ত হইবে। কিন্তু মোরোপন্ত ইহাতে বিশেষ হর্ষ প্রদর্শন না করিয়া কঁশি-প্রদেশে কোন যোগ্য বর পাওয়া যাইতে পারে কি না, সেই বিষয়ে দীক্ষিতকে জিজ্ঞাসা করিলেন।