পাতা:ইন্দিরা - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৭৩).pdf/৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ইন্দিরা ।
২৯

 আমি বলিলাম, “আমি সে সকল ব্যাপারের পরেই দেশ হইতে আসিয়াছি। তবে বোধ হয়, আপনি অবার বিবাহ করিয়াছেন।”

 উত্তর। না।

 সপত্নী হয় নাই, শুনিয়া বড় আহ্লাদ হইল। বলিলাম, “আপনারা যেমন বড় লোক, এটি তেমনি বিবেচনার কাজ হইয়াছে। নহিলে যদি এর পরে আপনার স্ত্রীকে পাওয়া যায়, তবে দুই সতীনে ঠেঙ্গাঠেঙ্গি বাঁধিবে।”

 তিনি মৃদু হাসিয়া বলিলেন, “সে ভয় নাই। সে স্ত্রীকে পাইলেও আমি আর গ্রহণ করিব, এমত বোধ হয় না। তাহার আর জাতি নাই, বিবেচনা করিতে হইবে।”

 আমার মাথায় বজ্রাঘাত হইল। এত আশা ভরসা সব নষ্ট হইল। তবে আমার পরিচয় পাইলে, আমাকে আপন স্ত্রী বলিয়া চিনিলেও, আমাকে গ্রহণ করিবেন না! আমার এবারকার নারী জন্ম বৃথায় হইল।

 সাহস করিয়া জিজ্ঞাসা করিলাম, “যদি এখন তাঁহার দেখা পান, তবে কি করিবেন?”

 তিনি অম্লান বদনে বলিলেন, “তাকে ত্যাগ করিব।”

 কি নির্দ্দয়! আমি স্তম্ভিতা হইয়া রহিলাল। পৃথিবী আমার চক্ষে ঘুরিতে লাগিল।