পাতা:ঝাঁশির রাণী - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৬
ঝাঁশির রাণী।

করিয়াছেন বটে, কিন্তু সে পত্র নির্বিঘ্নে পৌঁছিলেও সমস্ত বিষয়ের স্পষ্ট বোঝাপড়া হইবে কি না, সে বিষয়ে আমার বিলক্ষণ সন্দেহ আছে।” নানার ন্যায় দুরদৃষ্টিসম্পন্ন ও বিচারক্ষম ব্যক্তির এই কথা শুনিয়া, রাণীঠাকুরাণী, গোয়ালিয়র ও ইন্দোরের পোলিটিক্যাল এজেণ্টের নিকট ইংরাজি ভাষাভিজ্ঞ একজন সুচতুর ব্যক্তিকে দূতস্বরূপ পাঠাইবার জন্য দেওয়াজিকে হুকুম করিলেন। দেওয়ান, নবীন কর্মচারিদিগের মধ্য হইতে, অকৃতকর্ম্মা, রাষ্ট্রব্যবহারানভিজ্ঞ এক ব্যক্তিকে এই কার্যে নিযুক্ত করিয়া পাঠাইলেন, সে ব্যক্তি এজেণ্ট সাহেবের সহিত সাক্ষাৎ না করিয়া, অন্যস্থানে বসিয়া কতকগুলা জাল-পত্র লিখিয়া পাঠাইল এবং ঝঁশিদরবারের লোকেরাও সেই সকল পত্রের উপর নির্ভর করিয়া নিশ্চিন্ত রহিল। কথায় বলে, “দুমন্ত্রী রাজনাশায়;”—এ কথার যাথার্থ এইস্থলে বিলক্ষণ প্রতিপাদিত হইল।

 এদিকে, ইংরাজদিগের প্রতিশোধ-তৃষ্ণা প্রবল হইয়া উঠিয়াছে, ঝাঁশির হত্যাকাণ্ডে রাণীর বিলক্ষণ যোগ ছিল এইরূপ তাহাদের দৃঢ়বিশ্বাস জন্মিয়াছে। মধ্য-হিন্দুস্থান মধ্যে ঝাঁশি-রাজ্যই বিদ্রোহীদিগের প্রধান সংকেত-স্থল ও ঝাঁশির কেল্লাই সর্বাপেক্ষা সুদৃঢ় ও দুর্জয়; অতএব ঝঁশি জয় করা সর্বাগ্রে কর্তব্য—এই বিবেচনা করিয়া ইংরাজ কর্তৃপক্ষয়েরা য়ুরোপ-প্রসিদ্ধ, নবাগত সেনানী সর-হিউ-রোজকে এই কার্যে নিযুক্ত করিলেন। সর-হিউ-রোজ পথিমধ্যে একে একে কতিপয় কেল্লা দখল ও তত্রস্থ বিদ্রোহীদিগকে পরাভূত করিয়া অবশেষে ২০ মার্চ তারিখে, প্রাতঃকাল ৭ টার সময় ঝাঁশিতে আসিয়া পৌছিলেন। এই সংবাদ পাইবামাত্র লক্ষ্মণরাও দেওয়ান প্রভৃতি প্রধান-মণ্ডলীর মধ্যে ভারী গণ্ডগোল বাধিয়া গেল। তাহাদিগের মধ্যে তেমন সুবিজ্ঞ ও সুচতুর লোকথাকায়, যে যাহা খুশি বলিতে লাগিল। নানা-ভোপটকর প্রভৃতি পুরাতন মন্ত্রী-মণ্ডলী, গোয়ালিয়ারের প্রবীণ সুবিজ্ঞলোকদিগের নিকট পত্র।