পাতা:ঝাঁশির রাণী - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঝাঁশির রাণী।
৫১

এইরূপ তাঁর মনে হইতেছিল। তাহার সৈন্যমধ্যেও এই কারণে, উদাসভাব স্পষ্টরূপে লক্ষিত হইতেছিল। এইরূপ অবস্থা দেখিয়া রাণীঠাকুরাণী তাহার সারদিগকে ডাকাইয়া একত্র করিলেন এবং আবেশময় বাক্যে তাহাদিগকে এইরূপ বলিলেন—“আজ পর্যন্ত ঝুঁশি, ইংরাজের সহিত যে লড়িয়াছে সে পেশোয়ার বলের উপর নির্ভর করিয়া লড়ে নাই এবং কখনও তাহার সাহায্য আমাদের আবশ্যক হয় নাই। আজ পর্যন্ত তোমরা যেরূপ আপন স্বাভিমান, আপন সাহস, আপন ধৈর্য্য, আপন শৌর্য্য পূর্ণরূপে প্রকাশ করিয়া আপন খ্যাতি চারিদিকে বিস্তার করিয়াছ, সেইরূপ এখনও প্রাণপণে যুদ্ধ করিয়া কঁশি সংরক্ষণ করা তোমাদের কর্তব্য।” এইরূপে রাণীঠাকুরাণী, উৎসাহজনক বাক্য বলিয়া, সৈন্যের প্রধান প্রধান লোকদিগকে সুবর্ণ বলয় ও পরিচ্ছদ বকশিশ করিলেন; ইহাতে সৈন্যগণ পুনৰ্বার উত্তেজিত হইয়া উঠিল; পুনর্বার রণোৎসাহে তাহাদের হৃদয় পূর্ণ হইল। ঝুঁশির মুখ্য গোলন্দাজ গুলাম গোষ-খা, তোপের উত্তম বন্দোবস্ত করিয়া পূর্ববৎ ইংরাজ-সৈন্যের উপর প্রচণ্ড গোলাবর্ষণ করিতে লাগিল। স্বয়ং রাণীঠাকুরাণী কেল্লার বন্দোবস্ত ঠিক করিবার জন্য, বপ্রের উপর ইতস্ততঃ বিচরণ করিতে লাগিলেন। সেই রাত্রে ইংরাজ গোলন্দাজরাও কেল্লা ও সহরের উপর ভয়ঙ্কর গোলাবর্ষণ করিয়া বপ্র-প্রাকারের স্থানে স্থানে, সছিদ্র ও ভগ্নপ্রায় করিয়া তুলিয়াছিল। ইংরাজের গহ্বরনলী তোপ হইতে, ঝুঁশির প্রাসাদের উপর গোলাবৃষ্টি হওয়ায় তাহারও অনেকটা জখম হইয়াছিল। তাহার দ্বিতীয়তলে গণপতির সিংহাসন ও আয়না-ঘর ছিল। এই আয়নাঘর, লক্ষ্ণৌয়ের উৎকৃষ্ট মূল্যবান্ আর্শির দ্বারা সজ্জিত ছিল। ইহার উপর গোলা আসিয়া পড়ায় কাচের সামগ্রী সব চুরমার হইয়া গিয়াছিল এবং “কুল্পী গোলা” হইতে পেরেক ও ছাগু। চারিদিকে ছড়াইয়া পড়ায় রাজবাটীর চারিজম লোক নিহত হয়। ইহাতে চারিদিকে হাহাকার পড়িয়া গিয়াছিল। কিন্তু