পাতা:জল খাবার - কিরণলেখা রায়.pdf/১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
১৯ : জল খাবার

ঝাড়িয়া লইতে হয়।এক একবারে যে পরিমিত শস্য হাঁড়িতে ছড়িয়া ভাজা যায় তাহাকে এক এক ‘চার’ কহে।

 ভৃষ্টশস্যকে পুনঃ চুর্ণ করিয়া ‘ছাতু’ বা ‘সাতু’ প্রস্তুত করিতে ইচ্ছা করিলে উহাকে অপেক্ষাকৃত গুরু বা ‘গম-পেষা জাঁতা’য় ফেলিয়া অথবা ঢেঁকিতে কুটিয়া চুর্ণ করিয়া লইতে হয়। এই সকল ভাজার কার্য্যের নিমিত্ত অপেক্ষাকৃত লঘু ঢেঁকি হইলেই ভাল হয়। চূর্ণ শস্যকণাকে পুনঃ চালিবার নিমিত্ত সুক্ষ্মতারের ‘আটা-চাল-চালুনী’র প্রয়োজন করে। ঢেঁকিতে কুটিয়া শস্য চুর্ণ করিলে সাধারণতঃ একেবারে কার্য্য সিদ্ধ হয় না, হককে পুনঃ পুনঃ কুটিয়া ও হকিয়া লইতে হয়। এই নিমিত্ত সাতু প্রস্তুত কার্য্যে ঢেঁকি অপেক্ষা পাথরের গুরু জাতাই অধিক উপযোগী। উপবি লিখিত যন্ত্রপাতি ছাড়া ভৃষ্ট শস্যাদি রক্ষাকরিবার নিমিত্ত আরও ‘ধামা’,‘কাঠা’,ডালা, পাকান মৃৎ-হাঁড়ি বা হালি কাচের ‘জারের’ (Jar) বা কুম্ভের প্রয়োজন হইয়া থাকে। ভৃষ্ট শস্য শুষ্ক পাকান হাঁড়িতে বা কাচের জারে ভরিয়া সযত্নে তাহার মুখ সরা ও সীপি দ্বারা বন্ধ করতঃ আর্দ্র বায়ু সম্পর্ক বর্জ্জিত করিয়া শুষ্ক ঘরেউঠাইয়া রাখিলে বহুকাল অবিকৃত থাকে।

 স্থল বিশেষে এবং আবশ্যক অনুসারে ভাজিবার পুর্ব্বে শস্যকে সিদ্ধ’, ‘শুকান’,পাল্‌টান’ প্রভৃতি বিবিধ প্রক্রিয়া দ্বারা তৈয়ার করিয়া লইতে হয়। এই সকল প্রক্রিয়া যথাস্থানেবিবৃত হইবে। আবার সকল প্রকার শস্যের দ্বারাই কিছুসকল প্রকার ‘ভাজ্জা’ প্রস্তুত হয় না, বিশেষতঃ ধান্য সম্বন্ধে এই বিধি বিশেষভাবে প্রযুয্য। যথা, বরেন্দ্রে (উত্তরবঙ্গে) খইর নিমিত্ত কনকচুর ধন্যই উৎকৃষ্ট বলিয়া গণ্য হয়। তদভাবে ‘গজাল-গড়িয়া’,‘কেঁকে’, বগা-ঝুল’ প্রভৃতি ধন্যও ব্যবহৃত হইয়া থাকে। মুড়ী ‘হিদে ‘কেকে’, ‘ভোজনকপুর’, ‘মেটে-গরল’ প্রভৃতি আমন ধান্যের এবং পানেতি’ প্রভৃতি শালি ধানের দ্বারা প্রস্তুও হয়।

 ভাজিবার নিমিত্ত কলাই সুপ এবং সুপুষ্ট হওয়া আবশ্যক। পোকরা’, ‘চিটা’, অপক, অধিক শুষ্ক বা চিমড়া গোছ কলাই ভাজা ভাল হয় না।

খই(খদি)

মাটির খোলায় বা হাঁড়িতে বা লৌহ কড়ায়ে করিয়া পরিষ্কৃত বালুকা জ্বালে উঠাও। পরীক্ষা করিয়া যখন বুঝিবে বালু যথোপযুক্ত তপ্ত হইয়াছে তখন তাহাতে বালুর আন্দাজে ধান ঘড়। কুচি দিয়া নাড়। অচিরাৎ চটচটা শব্দে ফুটিয়া ধান্যগুলি ফাপিয়া উঠিয়া হাঁড়ির ভিতরে বালুকার উপরে লাফাইতে থাকিবে—

“এট্টু খালি পোলা গুয়া জলে নাও জাচে।
চিনা জুহে কামড় দিলে তুড় তুড়াইয়া নাচে॥” ——সবাব একাদশী।

 অতঃপর চট্‌চটা শব্দের নিবৃত্তি হইলে তৎক্ষণাৎ কুচির সাহায্যে ‘খই’গুলি