পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
৩৫

আর সামলাইতে পারিল না, তাহার মুখখানি লাল হইয়া উঠিল ও সে কাঁদিয়া ফেলিল।

 সুরমা বিভার মুখ বুকে রাখিয়া তাহার চোখের জল মুছাইয়া কহিল, “আচ্ছা, বিভা, তুই যদি পুরুষ হইতিস্ ত কি করিতিস্? নিমন্ত্রণ পত্র পাস্ নাই বলিয়া কি শ্বশুর বাড়ি যাইতিস্ না?”

 বিভা বলিয়া উঠিল, “না, তাহা পারিতাম না। আমি যদি পুরুষ হইতাম ত এখনি চলিয়া যাইতাম; মান অপমান কিছুই ভাবিতাম না। কিন্তু তাহা বলিয়া তাঁহাকে আদর করিয়া না ডাকিয়া আনিলে তিনি কেন আসিবেন?”

 বিভা এত কথা কখন কহে নাই। আজ আবেগের মাথায় অনেক কথা বলিয়াছে। এতক্ষণে একটু লজ্জা করিতে লাগিল। মনে হইল, বড় অধিক কথা বলিয়া ফেলিয়াছি। আবার, যে রকম করিয়া বলিয়াছি, বড় লজ্জা করিতেছে? ক্রমে তাহার মনের উত্তেজনা হ্রাস হইয়া আসিল ও মনের মধ্যে একটা গুরুভার অবসাদ আস্তে আস্তে চাপিয়া পড়িতে লাগিল। বিভা বাহুতে মুখ ঢাকিয়া সুরমার কোলে মাথা দিয়া শুইয়া পড়িল; সুরমা মাথা নত করিয়া কোমল হস্তে তাহার ঘন কেশভার পৃথক্ করিয়া দিতে লাগিল! এমন কতক্ষণ গেল। উভয়ের মুখে একটি কথা নাই। বিভার চোখ দিয়া এক এক বিন্দু করিয়া জল পড়িতেছে ও সুরমা আস্তে আস্তে মুছাইয়া দিতেছে।

 অনেকক্ষণ বাদে যখন সন্ধ্যা হইয়া আসিল তখন বিভা ধীরে ধীরে উঠিয়া বসিল ও চোখের জল মুছিয়া ঈষৎ হাসিল! সে হাসির অর্থ— “আজ কি ছেলেমানুষিই করিয়াছি!” ক্রমে মুখ ফিরাইয়া সরিয়া গিয়া পালাইয়া যাইবার উদ্যোগ করিতে লাগিল। সুরমা কিছু না বলিয়া তাহার হাত ধরিয়া রহিল। পূর্ব্বকার কথা আর কিছু উত্থাপন না করিয়া কহিল, “বিভা শুনিয়াছিস্, দাদামহাশয় আসিয়াছেন?”