পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
৯৭

বাছা! ও দিনকতক এখান হইতে গেলেই দেখিতে পাইবে, বাড়ির শ্রী ফেরে কি না!”

 উদয়াদিত্য এ কথার আর কোন উত্তর করিলেন না, কিছুক্ষণ চুপ করিয়া বসিয়া রহিলেন, তাহার পরে উঠিয়া চলিয়া গেলেন।

 মহিষী কাঁদিয়া প্রতাপাদিত্যের কাছে গিয়া পড়িলেন, কহিলেন “মহারাজ, রক্ষা কর! সুরমাকে পাঠাইলে উদয় বাঁচিবে না। বাছার কোন দোষ নাই, ঐ সুরমা, ঐ ডাইনীটা তাহাকে কি মন্ত্র করিয়াছে।” বলিয়া মহিষী কাঁদিয়া আকুল হইলেন।

 প্রতাপাদিত্য বিষম রুষ্ট হইয়া কহিলেন, “সুরমা যদি না যায় ত আমি উদয়াদিত্যকে কারারুদ্ধ করিয়া রাখিব!”

 মহিষী মহারাজার কাছ হইতে আসিয়া সুরমার কাছে গিয়া কহিলেন, “পােড়ামুখি, আমার বাছাকে তুই কি করিলি? আমার বাছাকে আমাকে ফিরাইয়া দে! আসিয়া অবধি তুই তাহার কি সর্ব্বনাশ না করিলি? অবশেষে—সে রাজার ছেলে—তা’র হাতে বেড়ী না দিয়া কি তুই ক্ষান্ত হইবি না?”

 সুরমা শিহরিয়া উঠিয়া কহিল, “আমার জন্য তাঁর হাতে বেড়ী পড়িবে? সে কি কথা মা! আমি এখন চলিলাম!”

 সুরমা বিভার কাছে গিয়া সমস্ত কহিল; বিভার গলা ধরিয়া কহিল, “বিভা, এই যে চলিলাম, আর বােধ করি আমাকে এখানে ফিরিয়া আসিতে দিবে না।” বিভা কাঁদিয়া সুরমাকে জড়াইয়া ধরিল। সুরমা সেইখানে বসিয়া পড়িল। অনন্ত ভবিষ্যতের অনন্ত প্রান্ত হইতে একটা কথা আসিয়া তাহার প্রাণে বাজিতে লাগিল, “আর হইবে না!” আর আসিতে পাইব না, আর হইবে না, আর কিছু রহিবে না! এমন একটা মহাশূন্য ভবিষ্যৎ তাহার সমুখে প্রসারিত হইল, —যে ভবিষ্যতে সে মুখ নাই, সে হাসি নাই, সে আদর নাই, চোখে চোখে বুকে বুকে প্রাণে প্রাণে