পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
১২৯

—“তােমাদের যাহা ইচ্ছা তাহাই কর, আমি আর কোন কথায় থাকিব না।”

 উদয়াদিত্য সমস্ত শুনিয়া বিস্মিত হইলেন। তিনি বিভাকে আসিয়া অনেক করিয়া বুঝাইলেন; বিভা চুপ করিয়া কাঁদিতে লাগিল, ভাল বুঝিল না!

 হতাশ্বাস রামমােহন আসিয়া ম্লানমুখে কহিল, “মা, তবে চলিলাম। মহারাজকে গিয়া কি বলিব?”

 বিভা কিছু বলিতে পারিল না, অনেক ক্ষণ নিরুত্তর হইয়া রহিল!

 রামমােহন কহিল, “তবে বিদায় হই মা!” বলিয়া প্রণাম করিয়া উঠিয়া গেল। বিভা একেবারে আকুল হইয়া কাঁদিয়া উঠিল, কাতর স্বরে ডাকিল “মােহন!”

 মােহন ফিরিয়া আসিয়া কহিল, “কি মা?”

 বিভা কহিল, “মহারাজকে বলিও, আমাকে যেন মার্জ্জনা করেন। তিনি স্বয়ং ডাকিতেছেন, তবু আমি যাইতে পারিলাম না, সে কেবল নিতান্তই আমার দুরদৃষ্ট?”

 রামমােহন শুষ্কভাবে কহিল, “যে আজ্ঞা!”

 রামমােহন আবার প্রণাম করিয়া বিদায় হইয়া গেল। বিভা দেখিল, রামমােহান বিভার ভাব কিছুই বুঝিতে পারে নাই, তাহার ভারি গােলমাল ঠেকিয়াছে। একে ত বিভার প্রাণ যেখানে যাইতে চায়, বিভা সেখানে যাইতে পারিল না;—তাহার উপর রামমােহন, যাহাকে সে যথার্থ স্নেহ করে, সে আজ রাগ করিয়া চলিয়া গেল। বিভার প্রাণে যাহা হইল তাহা বিভাই জানে!

 বিভা রহিল। চোখের জল মুছিয়া প্রাণের মধ্যে পাষাণ-ভার বহিয়া সে তাহার দাদার কাছে পড়িয়া রহিল। ম্লান, শীর্ণ একখানি ছায়ার মত সে নীরবে সমস্ত ঘরের কাজ করে। উদয়াদিত্য স্নেহ করিয়া, আদর