পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩০
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

করিয়া কোন কথা কহিলে চোখ নীচু করিয়া একটুখানি হাসে। সন্ধ্যাবেলায় উদয়াদিত্যের পায়ের কাছে বসিয়া একটু কথা কহিতে চেষ্টা করে। যখন মহিষী তিরস্কার করিয়া কিছু বলেন, চুপ করিয়া দাঁড়াইয়া শােনে, ও অবশেষে এক খণ্ড মলিন মেঘের মত ভাসিয়া চলিয়া যায়। যখন কেহ বিভার চিবুক ধরিয়া বলে, “বিভা তুই এত রােগা হতেছিস্ কেন?” বিভা কিছু বলে না, কেবল একটু হাসে।

 এই সময়ে ভাগবত পূর্ব্বোক্ত জাল দরখাস্তটি লইয়া প্রতাপাদিত্যকে দেখায়, প্রতাপাদিত্য আগুন হইয়া উঠিলেন—পরে অনেক বিবেচনা করিয়া উদয়াদিত্যকে কারারুদ্ধ করিবার আদেশ দিলেন। মন্ত্রী কহিলেন, “মহারাজ, যুবরাজ যে একাজ করিয়াছেন, ইহা কোন মতেই বিশ্বাস হয় না। যে শোনে সেই জিভ কাটিয়া বলে, ওকথা কানে আনিতে নাই। যুবরাজ একাজ করিবেন ইহা বিশ্বাসযােগ্য নহে।” প্রতাপাদিত্য কহিলেন, “আমারাে ত বড় একটা বিশ্বাস হয় না। কিন্তু তাই বলিয়া কারাগারে থাকিতে দোষ কি? সেখানে কোন প্রকার কষ্ট না দিলেই হইল। কেবল গােপনে কিছু না করিতে পারে তাহার জন্য পাহারা নিযুক্ত থাকিবে।”

চতুর্ব্বিংশ পরিচ্ছেদ।

 যখন রামমােহন চন্দ্রদ্বীপে ফিরিয়া গিয়া একাকী যোড়হস্তে অপরাধীর মত রাজার সম্মুখে গিয়া দাঁড়াইল, তখন রামচন্দ্র রায়ের সর্ব্বাঙ্গ জ্বলিয়া উঠিল। তিনি স্থির করিয়াছিলেন,বিভা আসিলে পর তাহাকে প্রতাপাদিত্য ও তাহার বংশ সম্বন্ধে খুব দুচারিটা খরধার কথা শুনাইয়া তাঁহার শ্বশুরের উপর শােধ তুলিবেন। কি কি কথা বলিবেন, কেমন করিয়া বলিবেন, কখন্ বলিবেন, সমস্ত তিনি মনে মনে স্থির করিয়া রাখিয়াছিলেন। রামচন্দ্র রায় গোঁয়ার নহেন, বিভাকে যে কোন প্রকারে পীড়ন করিবেন, ইহা