পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪০
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

প্রত্যহ মনে করেন, কাল বলিব; কিন্তু সে কাল আর কিছুতেই আসিতে চায় না! অবশেষে একদিন দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করিলেন। বিভা আসিল, বিভাকে বলিলেন, “বিভা, তুই আর এখানে থাকিস্‌নে। তুই না গেলে আমি কিছুতেই শান্তি পাইতেছি না। প্রতিদিন সন্ধ্যা বেলায় এই কারাগৃহের অন্ধকারে কে আসিয়া আমাকে যেন বলে, বিভার বিপদ কাছে আসিতেছে। বিভা, আমার কাছ হইতে তােরা শীঘ্র পালাইয়া যা! আমি শনিগ্রহ, আমার দেখা পাইলেই চারিদিক্ হইতে দেশের বিপদ ছুটিয়া আসে। তুই শ্বশুর বাড়ি যা। মাঝে মাঝে যদি সংবাদ পাই, তাহা হইলেই আমি সুখে থাকিব।”

 বিভা চুপ করিয়া রহিল।

 উদয়াদিত্য মুখ নত করিয়া বিভার সেই মুখখানি অনেকক্ষণ ধরিয়া দেখিতে লাগিলেন। তাঁহার দুই চক্ষু দিয়া ঝরঝর করিয়া অশ্রু পড়িতে লাগিল। উদয়াদিত্য বুঝিলেন, “আমি কারাগার হইতে না মুক্ত হইলে বিভা কিছুতেই আমাকে ছাড়িয়া যাইবে না, কি করিয়া মুক্ত হইতে পারিব!”

ষড়বিংশ পরিচ্ছেদ।

 রামচন্দ্র রায় ভাবিলেন, বিভা যে চন্দ্রদ্বীপে আসিল না, সে কেবল প্রতাপাদিত্যের শাসনে ও উদয়াদিত্যের মন্ত্রণায়। বিভা যে নিজের ইচ্ছায় আসিল না, তাহা মনে করিলে তাঁহার আত্ম-গৌরবে অত্যন্ত আঘাত লাগে। তিনি ভাবিলেন, প্রতাপাদিত্য আমাকে অপমান করিতে চাহে, অতএব সে কখন বিভাকে আমার কাছে পাঠাইবে না। কিন্তু এ অপমান আমিই তাহাকে ফিরাইয়া দিই না কেন? আমিই তাহাকে এক পত্র লিখি না কেন যে, তােমার মেয়েকে আমি পরিত্যাগ করিলাম, তাহাকে যেন আর চন্দ্রদ্বীপে পাঠান না হয়। এইরূপ সাতপাঁচ ভাবিয়া পাঁচ