পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪২
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

বাঁচিতে পারেন না, চারিদিক অকূল পাথার দেখিয়া মহিষী কাঁদিতে কাঁদিতে প্রতাপাদিত্যের কাছে গেলেন। কহিলেন—“মহারাজ, বিভার ত যাহা হয় একটা কিছু করিতে হইবে।”

 প্রতাপাদিত্য কহিলেন, “কেন বল দেখি?”

 মহিষী কহিলেন, “নাঃ, কিছু যে হইয়াছে তাহা নহে—তবে বিভাকে ত এক সময়ে না এক সময়ে শ্বশুরবাড়ি পাঠাইতেই হইবে!”

 প্রতাপাদিত্য—“সে ত বুঝিলাম, তবে এত দিন পরে আজ যে সহসা তাহা মনে পড়িল?”

 মহিষী ভীত হইয়া কহিলেন—“ঐ তােমার এক কথা, আমি কি বলিতেছি যে কিছু হইয়াছে? যদি কিছু হয়—”

 প্রতাপাদিত্য বিরক্ত হইয়া কহিলেন “হইবে আর কি?”

 মহিষী—“এই মনে কর যদি জামাই বিভাকে একেবারে ত্যাগ করে।” বলিয়া মহিষী রুদ্ধকণ্ঠ হইয়া কাঁদিতে লাগিলেন।

 প্রতাপাদিত্য অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হইয়া উঠিলেন। তাঁহার চোখ দিয়া অগ্নিকণা বাহির হইল।

 মহারাজের সেই মূর্ত্তি দেখিয়া মহিষী জল মুছিয়া তাড়াতাড়ি কহিলেন, “তাই বলিয়া জামাই কি আর সত্য সত্যই লিখিয়াছে যে, ওগাে তােমাদের বিভাকে আমি ত্যাগ করিলাম, তাহাকে আর চন্দ্রদ্বীপে পাঠাইও না, তাহা ত নহে—তবে কথা এই, যদি কোন দিন তাই লিখিয়া বসে!”

 প্রতাপাদিত্য কহিলেন—“তখন তাহার বিহিত বিধান করিব, এখন তাহার জন্য ভাবিবার অবসর নাই।”

 মহিষী কাঁদিয়া কহিলেন,—“মহারাজ তােমার পায়ে পড়ি, আমার একটি কথা রাখ। একবার ভাবিয়া দেখ বিভার কি হইবে! আমার পাষাণ প্রাণ বলিয়া আজও রহিয়াছে, নহিলে আমাকে যতদূর যন্ত্রণা দিবার