পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
১৪৩

তা দিয়াছ। উদয়কে—আমার বাছাকে—রাজার ছেলেকে—সামান্য অপরাধীর মত রুদ্ধ করিয়াছ—সে-আমার কাহারাে কোন অপরাধ করে না, কিছুতেই লিপ্ত থাকে না, দোষের মধ্যে সে কিছু বােঝে সােঝে না, রাজকার্য্য শেখে নাই, প্রজা শাসন করিতে জানে না, তাহার বুদ্ধি নাই, তা ভগবান্ তাহাকে যা করিয়াছেন, তাহার দোষ কি।” বলিয়া মহিষী দ্বিগুণ কাঁদিতে লাগিলেন।

 প্রতাপাদিত্য ঈষৎ বিরক্ত হইয়া কহিলেন, “ও কথা ত অনেকবার হইয়া গিয়াছে। যে কথা হইতেছিল তাহাই বল না।”

 মহিষী কপালে করাঘাত করিয়া কহিলেন, “আমারি পোড়া কপাল! বলিব আর কি? বলিলে কি তুমি কিছু শােন? একবার বিভার মুখপানে চাও মহারাজ! সে যে কাহাকেও কিছু বলে না—সে কেবল দিনে দিনে শুকাইয়া যায়, ছায়ার মত হইয়া আসে, কিন্তু সে কথা কহিতে জানে না! তাহার একটা উপায় কর।”

 প্রতাপাদিত্য বিরক্ত হইয়া উঠিলেন—মহিষী আর কিছু না বলিয়া ফিরিয়া আসিলেন।

সপ্তবিংশ পরিচ্ছেদ।

 ইতিমধ্যে এক ঘটনা ঘটিয়াছে। যখন সীতারাম দেখিল, উদয়াদিত্যকে কারারুদ্ধ করা হইয়াছে, তখন সে আর হাত পা আছড়াইয়া বাঁচে না। প্রথমেই ত সে রুক্মিণীর বাড়ি গেল। তাহাকে যাহা মুখে আসিল তাহাই বলিল। তাহাকে মারিতে যায় আর কি! কহিল, “সর্ব্বনাশী, তাের ঘরে আগুন জ্বালাইয়া দিব, তাের ভিটায় ঘুঘু চরাইব, আর যুবরাজকে খালাস করিব, তবে আমার নাম সীতারাম! আজই আমি রায়গড়ে চলিলাম, রায়গড় হইতে আসি, তারপরে তাের ঐ কালামুখ লইয়া এই শানের