বুদ্ধদেব/ব্রহ্মবিহার
ব্রহ্মবিহার
ব্রহ্মবিহারের এই সাধনার পথে বুদ্ধদেব মানুষকে প্রবর্তিত করবার জন্যে বিশেষরূপে উপদেশ দিয়েছেন। তিনি জানতেন কোনো পাবার যোগ্য জিনিস ফাঁকি দিয়ে পাওয়া যায় না, সেইজন্যে তিনি বেশি কথা না ব’লে একেবারে ভিত খোঁড়া থেকে কাজ আরম্ভ করে দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, শীল গ্রহণ করাই মুক্তিপথের পাথেয় গ্রহণ করা। চরিত্র শব্দের অর্থই এই যাতে করে চলা যায়। শীলের দ্বারা সেই চরিত্র গড়ে ওঠে; শীল আমাদের চলবার সম্বল।
পাণং ন হানে: প্রাণীকে হত্যা করবে না—এই কথাটি শীল। ন চাদিন্নমাদিয়ে: যা তোমাকে দেওয়া হয় নি তা নেবে না— এই একটি শীল। মুসা ন ভাসে: মিথ্যা কথা বলবে না— এই একটি শীল। ন চ মজ্জপো সিয়া: মদ খাবে না— এই একটি শীল। এমনি করে যথাসাধ্য একটি একটি ক’রে শীল সঞ্চয় করতে হবে।
আর্যশ্রাবকেরা প্রতিদিন নিজেদের এই শীলকে স্মরণ করেন: ইধ অরিয়সাবকো অত্তনো সীলানি অনুসরতি।
শীলসকলকে কী বলে অনুস্মরণ করেন?
অখণ্ডানি, অচ্ছিদ্দানি, অসবলানি, অকস্মাসানি, ভুজিস্— সানি, বিঞ্ঞুপৃপসখানি, অপরামট্ঠানি, সমাধিসংবত্তনিকানি।
অর্থাৎ, আমার এই শীল খণ্ডিত হয় নি, এতে ছিদ্র হয় নি, আমার এই শীল জোর করে রক্ষিত হয় নি, অর্থাৎ ইচ্ছা করেই রাখছি, এই শীলে পাপ স্পর্শ করে নি, এই শীল ধন মান প্রভৃতি কোনো স্বার্থসাধনের জন্য আচরিত নয়, এই শীল বিজ্ঞজনের অনুমোদিত, এই শীল বিদলিত হয় নি এবং এই শীল মুক্তিপ্রবর্তন করবে। এই বলে আর্যশ্রাবকগণ নিজ নিজ শীলের গুণ বারম্বার স্মরণ করেন।
এই শীলগুলিই হচ্ছে মঙ্গল। মঙ্গললাভই প্রেম ও মুক্তিলাভের সোপান। বুদ্ধদেব কাকে যে মঙ্গল বলেছেন তা মঙ্গলসুত্তে কথিত আছে। সেটি অনুবাদ করে দিই—
বহু দেবা মনুস্সা চ মঙ্গলানি অচিন্তয়ুং
আকঙ্খমানা সোত্থানং ব্রূহি মঙ্গলমুত্তমং।
বুদ্ধকে প্রশ্ন করা হচ্ছে যে, ‘বহু দেবতা বহু মানুষ যাঁরা শুভ আকাঙ্ক্ষা করেন তাঁরা মঙ্গলের চিন্তা করে এসেছেন, সেই মঙ্গলটি কী বলো।’
বুদ্ধ উত্তর দিচ্ছেন—
অসেবনা চ বালানং পণ্ডিতানঞ্চ সেবনা
পূজা চ পূজনেয়্যানং এতং মঙ্গলমুত্তমং।
অসৎগণের সেবা না করা, সজ্জনের সেবা করা, পূজনীয়কে পূজা করা —এই হচ্ছে উত্তম মঙ্গল।
পতিরূপদেসবাসো পুব্বে চ কতপুঞ্তা
অত্তসম্মাপণিধি চ এতং মঙ্গলমুত্তমং।
যে দেশে ধর্মসাধন বাধা পায় না সেই দেশে বাস, পূর্বকৃত পুণ্যকে বর্ধিত করা, আপনাকে সৎকর্মে প্রণিধান করা—এই উত্তম মঙ্গল।
বহুসখঞ্চ সিপৃপঞ্চ বিনয়ো চ সুসিখিতো
সুভাসিতা চ যা বাচা এতং মঙ্গলমুত্তমং।
বহু-শাস্ত্র-অধ্যয়ন, বহু-শিল্প-শিক্ষা, বিনয়ে সুশিক্ষিত হওয়া এবং সুভাষিত বাক্য বলা—এই উত্তম মঙ্গল।
মাতাপিতু-উপট্ঠানং পুত্তদারস্স সংগহো
অনাকুলা চ কম্মানি এতং মঙ্গলমুত্তমং।
মাতাপিতাকে পূজা করা, স্ত্রীপুত্রের কল্যাণ করা, অনাকুল কর্ম করা —এই উত্তম মঙ্গল।
দানঞ্চ ধম্মচরিয়ঞ্চ ঞ্ঞাতকানঞ্চ সংগহো
অনবজ্জানি কম্মানি এতং মঙ্গলমুত্তমং।
দান, ধর্মচর্যা, জ্ঞাতিবর্গের উপকার, অনিন্দনীয় কর্ম —এই উত্তম মঙ্গল।
আরতী বিরতি পাপা মজ্জপানা চ সঞ্ঞমো
অপৃপমাদো চ ধম্মেসু এবং মঙ্গলমুত্তমং।
পাপে অনাসক্তি এবং বিরতি, মদ্যপানে বিতৃষ্ণা, ধর্মকর্মে অপ্রমাদ—এই উত্তম মঙ্গল।
গারবো চ নিবাতো চ সন্তুট্ঠী চ কতঞ্ঞুতা
কালেন ধম্মসবনং এতং মঙ্গলমুত্তমং।
গৌরব অথচ নম্রতা, সন্তুষ্টি, কৃতজ্ঞতা, যথাকালে ধর্মকথাশ্রবণ —এই উত্তম মঙ্গল।
খন্তী চ সোবচস্সতা সমণানঞ্চ দস্নং
কালেন ধম্মসাকচ্ছা এতং মঙ্গলমুত্তমং।
ক্ষমা, প্রিয়বাদিতা, সাধুগণকে দর্শন, যথাকালে ধর্মালোচনা —এই উত্তম মঙ্গল।
তপো চ ব্রহ্মচরিয়ঞ্চ অরিয়সচ্চান দস্সনং
নিব্বানসচ্ছিকিরিয়া এতং মঙ্গলমুত্তমং।
তপস্যা, ব্রহ্মচর্য, শ্রেষ্ঠ সত্যকে জানা, মুক্তিলাভের উপযুক্ত সৎকার্য —এই উত্তম মঙ্গল।
ফুট্ঠস্স লোকধন্মেহি চিত্তং যস্স ন কম্পতি
অসোকং বিরজং খেমং এতং মঙ্গলমুত্তমং।
লাভ ক্ষতি নিন্দা প্রশংসা প্রভৃতি লোকধর্মের দ্বারা আঘাত পেলেও যার চিত্ত কম্পিত হয় না, যার শোক নেই, মলিনতা নেই, যার ভয় নেই —সে উত্তম মঙ্গল পেয়েছে।
এতাদিসানি কত্বান সব্বত্থমপরাজিতা
সব্বখ সোত্থি গচ্ছন্তি তং তেসং মঙ্গলমুত্তমন্তি।
এই রকম যারা করেছে তারা সর্বত্র অপরাজিত, তারা সর্বত্র। স্বস্তি লাভ করে, তাদের উত্তম মঙ্গল হয়।
যারা বলে ধর্মনীতিই বৌদ্ধধর্মের চরম তারা ঠিক কথা বলে না। মঙ্গল একটা উপায় মাত্র। তবে নির্বাণই চরম? তা হতে পারে, কিন্তু সেই নির্বাণটি কী? সে কি শূন্যতা?
যদি শূন্যতাই হ’ত তবে পূর্ণতার দ্বারা তাতে গিয়ে পৌছনো যেত না। তবে কেবলই সমস্তকে অস্বীকার করতে করতে, ‘নয় নয় নয়’ বলতে বলতে, একটার পর একটা ত্যাগ করতে করতেই, সেই সর্বশূন্যতার মধ্যে নির্বাপণ লাভ করা যেত।
কিন্তু, বৌদ্ধধর্মে সে পথের ঠিক উল্টা পথ দেখি যে। তাতে কেবল তো মঙ্গল দেখছি নে, মঙ্গলের চেয়েও বড়ো জিনিসটি দেখছি যে।
মঙ্গলের মধ্যেও একটা প্রয়োজনের ভাব আছে। অর্থাৎ, তাতে একটা কোনো ভালো উদ্দেশ্য সাধন করে, কোনো-একটা সুখ হয় বা সুযোগ হয়।
কিন্তু, প্রেম যে সকল প্রয়োজনের বাড়া। কারণ, প্রেম হচ্ছে স্বতই আনন্দ, স্বতই পূর্ণতা; সে কিছুই নেওয়ার অপেক্ষা করে না, সে যে কেবলই দেওয়া।
যে দেওয়ার মধ্যে কোনো নেওয়ার সম্বন্ধ নেই সেইটেই হচ্ছে শেষের কথা, সেইটেই ব্রহ্মের স্বরূপ—তিনি নেন না।
এই প্রেমের ভাবে, এই আদানবিহীন প্রদানের ভাবে আত্মাকে ক্রমশ পরিপূর্ণ ক’রে তোলবার জন্যে বুদ্ধদেবের উপদেশ আছে, তিনি তার সাধনপ্রণালীও বলে দিয়েছেন।
এ তত বাসনাসংহরণের প্রণালী নয়, এ তো বিশ্ব হতে বিমুখ হবার প্রণালী নয়, এ যে সকলের অভিমুখে আত্মাকে ব্যাপ্ত করবার পদ্ধতি। এই প্রণালীর নাম ‘মেত্তিভাবনা’— মৈত্রীভাবনা।
প্রতিদিন এই কথা ভাবতে হবে: সব্বে সত্তা সুখিতা হোন্তু, অবেরা হোন্তু, অব্যাপজ্ঝা হোন্তু, সুখী অত্তানং পরিহরন্তু, সব্বে সত্তা মা যথালব্ধসম্পত্তিতো বিগচ্ছন্তু।
সকল প্রাণী সুখিত হোক, শত্রুহীন হোক, অহিংসিত হোক, সুখী আত্মা হয়ে কালহরণ করুক। সকল প্রাণী আপন যথালব্ধ সম্পত্তি হতে বঞ্চিত না হোক।
মনে ক্রোধ দ্বেষ লোভ ঈর্ষা থাকলে এই মৈত্রীভাবনা সত্য হয় না, এইজন্য শীলগ্রহণ শীলসাধন প্রয়োজন। কিন্তু, শীলসাধনার পরিণাম হচ্ছে সর্বত্র মৈত্রীকে দয়াকে বাধাহীন ক’রে বিস্তার। এই উপায়েই আত্মাকে সকলের মধ্যে উপলব্ধি করা সম্ভব হয়।
এই মৈত্রীভাবনার দ্বারা আত্মাকে সকলের মধ্যে প্রসারিত করা, এ তো শূন্যতার পন্থা নয়।
তা যে নয় তা বুদ্ধ যাকে ব্রহ্মবিহার বলছেন তা অনুশীলন করলেই বোঝা যাবে।
করণীয় মত্থ কুসলেন
যন্তং সন্তং পদং অভিসমেচ্চ
সক্কো উজু চ সুহুজু চ।
সুবচো চস্স মৃদু অনতিমানী।
শান্তপদ লাভ করে পরমার্থকুশল ব্যক্তির যা করণীয় তা এই— তিনি শক্তিমান, সরল, অতি সরল, সুভাষী, মৃদু, নম্র এবং অনভিমানী হবেন।
সন্তুস্সকো চ সুভরো চ,
অপ্পকিচ্চো চ সল্লহুকবুত্তি
সন্তিন্দ্রিয়ো চ নিপকো চ
অপৃপগব্ভো কুলেসু অননুগিদ্ধো।
তিনি সন্তুষ্টহৃদয় হবেন, অল্পেই তাঁর ভরণ হবে; তিনি নিরুদ্বেগ, অল্পভোজী, শান্তেন্দ্রিয়, সদ্বিবেচক, অপ্রগল্ভ এবং সংসারে অনাসক্ত হবেন।
ন চ খুদ্দং সমাচরে কিঞ্চি
যেন বিঞ্ঞুপরে উপবদে্য্যুং।
সুখিনো বা খেমিনো বা
সব্বে সত্তা ভবন্তু সুখিতত্তা
এমন ক্ষুদ্র অন্যায়ও কিছু আচরণ করবেন না যার জন্যে অন্যে তাঁকে নিন্দা করতে পারে। তিনি কামনা করবেন সকল প্রাণী সুখী হোক, নিরাপদ হোক, সুস্থ হোক।
যে কেচি পাণভূতত্থি
তসা বা থাবরা বা অনবসেস।
দীঘা বা যে মহন্তা বা
মজ্ঝিমা রস্সকা অণুকথূলা।
দিট্ঠা বা যে চ অদিট্ঠা
যে চ দূরে বসন্তি অবিদূরে।
ভূতা বা সম্ভবেসী বা
সব্বে সত্তা ভবন্তু সুখিতত্তা।
যে কোনো প্রাণী আছে, কী সবল কী দুর্বল, কী দীর্ঘ কী প্রকাণ্ড, কী মধ্যম কী হ্রস্ব, কী সূক্ষ্ম কী স্থূল, কী দৃষ্ট কী অদৃষ্ট, যারা দূরে বাস করছে বা যারা নিকটে, যারা জন্মেছে বা যারা জন্মাবে, অনবশেষে সকলেই সুখী-আত্মা হোক।
ন পরোপরং নিকুব্বেথ
নাতিমঞ্ঞেথ কত্থচি ন কঞ্চি
ব্যারোসনা পটিঘ সঞ্ঞা
নঞ্ঞ মঞ্ঞস্স দুক্খমিচ্ছেয্য।
পরস্পরকে বঞ্চনা কোরো না, কোথাও কাউকে অবজ্ঞা কোরো না, কায়ে বাক্যে বা মনে ক্রোধ ক’রে অন্যের দুঃখ ইচ্ছা কোরো না।
মাতা যথা নিযং পুত্তং
আয়ুসা একপুত্তমনুরক্খে
এবম্পি সব্বভূতেসু
মানসং ভাবয়ে অপরিমাণং।
মা যেমন একটিমাত্র পুত্রকে নিজের আয়ু দিয়ে রক্ষা করেন সমস্ত প্রাণীতে সেইপ্রকার অপরিমিত মানস রক্ষা করবে।
মেত্তঞ্চ সব্বলোকস্মিং
মানসং ভাবয়ে অপরিমাণং।
উদ্ধং অধো চ তিরিষঞ্চ
অসম্বধং অবেরমসপত্তং।
উর্ধ্বে অধোতে চারদিকে সমস্ত জগতের প্রতি বাধাহীন হিংসাহীন শত্রুতাহীন অপরিমিত মানস এবং মৈত্রী রক্ষা করবে।
তিট্ঠং চরং নিসিন্নো বা।
সয়ানো বা যাবতস্স বিগতমিদ্ধো
এতং সতিং অধিট্ঠেয্যং
ব্রহ্মমেতং বিহারমিধমাহু।
যখন দাঁড়িয়ে আছ বা চলছ, বসে আছ বা শুয়ে আছ, যে পর্যন্ত না নিদ্রা আসে সে পর্যন্ত, এইপ্রকার স্মৃতিতে অধিষ্ঠিত হয়ে থাকাকে ব্রহ্মবিহার বলে।
অপরিমিত মানসকে প্রীতিভাবে মৈত্রীভাবে বিশ্বলোকে ভাবিত করে তোলাকে ব্রহ্মবিহার বলে। সে প্রীতি সামান্য প্রীতি নয়— মা তাঁর একটিমাত্র পুত্রকে যেরকম ভালোবাসেন। সেইরকম ভালোবাসা।
ব্রহ্মের অপরিমিত মানস যে বিশ্বের সর্বত্রই রয়েছে, এক পুত্রের প্রতি মাতার যে প্রেম সেই প্রেম যে তাঁর সর্বত্র। তাঁরই সেই মানসের সঙ্গে মানস, প্রেমের সঙ্গে প্রেম না মেশালে সে তো ব্রহ্মবিহার হল না।
কথাটা খুব বড়ো। কিন্তু, বড়ো কথাই যে হচ্ছে, বড়ো কথাকে ছোটো কথা ক’রে তো লাভ নেই। ব্রহ্মকে চাওয়াই যে সকলের চেয়ে বড়োকে চাওয়া। উপনিষৎ বলেছেন: ভূমাত্বেব বিজিজ্ঞাসিতব্যঃ। ভূমাকেই, সকলের চেয়ে বড়োকেই, জানতে চাইবে।
সেই চাওয়া সেই পাওয়ার রূপটা কী সে তো স্পষ্ট ক’রে, পরিষ্কার ক’রে সম্মুখে ধরতে হবে। ভগবান্ বুদ্ধ ব্রহ্মবিহারকে সুস্পষ্ট করে ধরেছেন; তাকে ছোটো ক’রে, ঝাপসা ক’রে, সকলের কাছে চলনসই করবার চেষ্টা করেন নি।
অপরিমিত মানসে অপরিমিত মৈত্রীকে সর্বত্র প্রসারিত ক’রে দিলে ব্রহ্মের বিহারক্ষেত্রে ব্রহ্মের সঙ্গে মিলন হয়।
এই তো হল লক্ষ্য। কিন্তু, এ তো আমরা একেবারে পারব না। এই দিকে আমাদের প্রত্যহ চলতে হবে। এই লক্ষ্যের সঙ্গে তুলনা করে প্রত্যহ বুঝতে পারব আমরা কতদূর অগ্রসর হলুম।
ঈশ্বরের প্রতি আমার প্রেম জন্মাচ্ছে কি না সে সম্বন্ধে আমরা নিজেকে নিজে ভোলাতে পারি। কিন্তু সকলের প্রতি আমার প্রেম বিস্তৃত হচ্ছে কি না, আমার শত্রুতা ক্ষয় হচ্ছে কি না, আমার মঙ্গলভাব বাড়ছে কি না তার পরিমাণ স্থির করা শক্ত নয়।
একটা-কোনো নির্দিষ্ট সাধনার সুস্পষ্ট পথ পাবার জন্যে মানুষের একটা ব্যাকুলতা আছে। বুদ্ধদেব এক দিকে উদ্দেশ্যকে যেমন খর্ব করেন নি তেমনি তিনি পথকেও খুব নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। কেমন করে ভাবতে হবে এবং কেমন করে চলতে হবে তা তিনি খুব স্পষ্ট করে বলেছেন। প্রত্যহ শীলসাধনার দ্বারা তিনি আত্মাকে মোহ থেকে মুক্ত করতে উপদেশ দিয়েছেন এবং মৈত্রীভাবনা-দ্বারা আত্মাকে ব্যাপ্ত করবার পথ দেখিয়েছেন। প্রতিদিন এই কথা স্মরণ করো যে, আমার শীল অখণ্ড আছে, অচ্ছিদ্র আছে এবং প্রতিদিন চিত্তকে এই ভাবনায় নিবিষ্ট করে যে, ক্রমশ সকল বিরোধ কেটে গিয়ে আমার আত্মা সর্বভূতে প্রসারিত হচ্ছে। অর্থাৎ, এক দিকে বাধা কাটছে আর-এক দিকে স্বরূপলাভ হচ্ছে। এই পদ্ধতিকে তো কোনোক্রমেই শূন্যতালাভের পদ্ধতি বলা যায় না। এই তো নিখিললাভের পদ্ধতি, এই তো আত্মলাভের পদ্ধতি, পরমাত্মলাভের পদ্ধতি।
১১ চৈত্র [১৩১৫]