বত্রিশ সিংহাসন/২০

উইকিসংকলন থেকে

চন্দ্রজ্যোতি বিংশ পুত্তলিকা

বলিল মহারাজ আমি এক প্রসঙ্গ বলি শ্রবণ কর।

 এক দিবস রাজা বিক্রমাদিত্য হৃষ্টান্তঃকরণে মন্ত্রীকে কহিলেন কার্তিক মাস ধর্ম্মমাস, এই মাসে ধর্ম্ম কর্ম্ম করা কর্তব্য, অতএব শারদ পূর্ণিমার দিবস রাসলীলা হউক। মন্ত্রী রাজাজ্ঞানুসারে দেশ বিদেশীয় ভূপতি পণ্ডিত গণকে নিমন্ত্রণ করিয়া আনিলেন, এবং নগরস্থ ব্রাহ্মণ পণ্ডিত ও যোগী উপস্থিত হইলেন। দেবতাগণও মন্ত্র দ্বারা আহূত হইলেন। এই প্রকার রাসারম্ভ হইলে চতুর্দিক হইতে জয়ধ্বনি হইতে লাগিল। রাজা দেখিলেন সকল দেবতা আসিয়াছেন, কেবল চন্দ্র আইসেন ও নাই। তাহাতে দুঃখিত হইয়া বেতালের স্কন্ধারোহণে চন্দ্রলোকে গমন পূর্ব্বক, চন্দ্রের সম্মুখে দণ্ডবৎ প্রণাম পুরঃসর কৃতাঞ্জলি হইয়া বলিলেন আমার কি অপরাধ হইয়াছে যে আপনি আমার প্রতি নির্দয় হইয়াছেন। সকল দেবতা, আমার প্রতি সদয় হইয়া আগমন করিয়াছেন, কিন্তু আপনার অনাগমনে আমার কর্ম সম্পূর্ণ হইতেছে না, অতএব আপনি আগমন করিয়া আমার কর্ম সম্পূর্ণ করুন, ইহাতে আপনারও ধর্ম এবং যশোলাভ হইবে। যদি আপনি গমন না করেন তবে আমি আপনার সমক্ষে প্রাণত্যাগ করিব। নিশানাথ সহাস্য। বদনে কহিলেন, হে নরোত্তম, আমার অগমনে তুমি ক্ষুন্ন হইওনা, আমি গমন করিলে তাবৎ পৃথিবী অন্ধ কারময় হইবে, এজন্য আমার গমন হইতে পারেনা। আমাকে দর্শন করিবার তোমার যে অভিলাষ ছিল তাহ পূর্ণ হইল। তোমার কর্ম্ম সফল হইবে, তুমি আপন নগরে যাইয়া যে কর্ম্ম আরম্ভ করিয়াছি তাহা সমাপন কর। চন্দ্র, রাজাকে এই প্রকার প্রবোধ বাক্যে সন্তুষ্ট করিয়া অমৃত দিয়া বিদায় করিলেন।

 রাজা সেই অমৃত শিবোধার্য্য করিয়া প্রণাম পূর্ব্বক আপন রাজধানীতে প্রত্যাগমন করিতেছেন। পথি মধ্যে দেখিলেন দুই যমদূত এক ব্রাহ্মণের আত্মা পুরুষ লইয়া আসিতেছে। রাজা তাহা বুঝিয়া দণ্ডায়মান হইলেন। ব্রাহ্মণের আত্মা দূর হইতে রাজাকে দেখিয়া কহিল এই রাজার সহিত আমার আলাপ আছে। রাজা ব্রাহ্মণের স্বর-পরিচয়ে যমদূতকে জিজ্ঞাসা করিলেন তোমরা কে। তাহারা কহিল আমরা যমের দাস উজ্জয়িনী নগরে গিয়াছিলাম, তথা হইতে এক ব্রাহ্মণের প্রাণ লইয়া যমরাজের নিকটে যাইতেছি। রাজা বলিলেন তোমরা কোন ব্রাহ্মণের প্রাণ লইয়া যাইতেছ আমার সঙ্গে আসিয়া তাহাকে দেখাইয়া দাও, পশ্চাৎ আপন কর্মে যাইবে। এই কথায় দূতদ্বয় রাজাকে উজ্জয়িনী নগরে লইয়া গিয়া ব্রাহ্মণের মৃত দেহ দেখাইল। রাজা দেখিলেন ঐ ব্রাহ্মণ তাঁহার পুরোহিত, অতএব দূতদ্বয়ের সহিত কথোপকথন করিতে ২ গোপন ভাবে তাহার গাত্রে অমৃত প্রক্ষেপ করিলেন। ব্রাহ্মণ প্রাণ দান পাইয়া রাম নাম উচ্চারণ পূর্ব্বক গাত্রোত্থান করিয়া দাণ্ডাইলে, রাজা তাহাকে প্রণাম করিলেন। ব্রাহ্মণ রাজাকে আশীর্বাদ পূর্ব্বক কহিলেন আমি মহারাজের কৃপাতে জীবন দান পাইলাম। ব্রাহ্মণকে পুনজীবিত দেখিয়া দূতদ্বয় চমৎকৃত হইয়া মনে মনে কহিল হায় রাজা কি করিলেন, আমরা যম সদনে যাইয়া কি কহিব। ইহা ভাবিতে ভাবিতে রিক্তহস্তে শমন সদনে গিয়া সকল বিবরণ কহিল।’ যমরাজ তাহা শুনিয়া মৌন থাকিলেন। এ দিকে রাজা ব্রাহ্মণের হস্ত ধারণ পূর্ব্বক তাহাকে আপন আলয়ে লইয়া গেলেন, এবং অনেক অর্থ দিয়া বিদায় করিলেন।

 এই কথা শেষ করিয়া পুত্তলিক। কহিল, হে ভোজরাজ যদি তোমার এমত পুরুষত্ব থাকে তবে সিংহাসনোপবেশন কর, নতুবা এ আশা পরিত্যাগ কর। এই প্রকারে সে দিবসের শুভক্ষণও অতীত হইল, রাজা আপন মন্দিরে গেলেন। রাত্রি কোন প্রকারে বঞ্চন হইল। প্রাতঃকালে রাজা প্রাতঃকৃত্যাদি করিয়া সিংহাসনারোহণার্থ তৎসমীপে আসিয়া দণ্ডায়মান হইলে,