কথামালা (১৮৭৭)/অশ্ব ও গর্দ্দভ (২)

উইকিসংকলন থেকে

অশ্ব ও গর্দ্দভ

এক গর্দ্দভ, ভারি বোঝাই লইয়া, অতি কষ্টে চলিয়া যাইতেছে। এমন সময়ে, এক যুদ্ধের অশ্ব, অতি বেগে খট খট করিয়া, সেই খান দিয়া চলিয়া যায়। অশ্ব, গর্দ্দভের নিকটবর্ত্তী হইয়া, কহিল, অরে গাদা! পথ ছাড়িয়া দে; নতুবা, এক পদাঘাতে, তোর প্রাণ নাশ করিব। গর্দ্দভ, ভয় পাইয়া, তাড়াতাড়ি পথ ছাড়িয়া দিল; কিন্তু আপনার দুর্ভাগ্য ও অশ্বের সৌভাগ্য ভাবিয়া, মনে মনে অত্যন্ত দুঃখ করিতে লাগিল।

 কিছু দিন পরে, ঐ অশ্ব যুদ্ধে গেল। তথায় এমন বিষম আঘাত লাগিল যে, সে একবারে অকর্ম্মণ্য হইয়া গেল; সুতরাং আর যুদ্ধে যাইবার উপযুক্ত রহিল না। তাহা দেখিয়া, অশ্বস্বামী তাহাকে কৃষিকর্ম্মে নিযুক্ত করিয়া দিল।

 এক দিন, বেলা দুই প্রহরের রৌদ্রে, অশ্ব লাঙ্গল বহিতেছে, এমন সময়ে, সেই গর্দ্দভ ঐ স্থানে উপস্থিত হইল, এবং অশ্বের ক্লেশ দেখিয়া, মনে মনে কহিতে লাগিল, আমি অতি মূঢ়, এজন্যে তখন, ইহার সৌভাগ্য দেখিয়া, দুঃখ ও ঈর্ষ্যা করিয়াছিলাম। এক্ষণে ইহার দুর্দশা দেখিয়া, চক্ষে জল আইসে। আর, এও অতি মূঢ়, সৌভাগ্যের সময় গর্ব্বিত হইয়া, অকারণে আমার অপমান করিয়াছিল। তখন জানিত না যে, সৌভাগ্য চিরস্থায়ী নহে। এখন, আমার অপেক্ষাও, ইহার দুর্ভাগ্য অধিক।