পাতা:এপিক্‌টেটসের উপদেশ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিরহ বিচ্ছেদ।
৫৫

ধরাশায়ী হইবে। ইহারাই আমাদের পরিবেষ্টন—ইহারাই আমাদের সঙ্গী। শীত, গ্রীষ্ম, অযথারূপে জীবনযাপন, জলে স্থলে ভ্রমণ, ঝঞ্ঝাবাত,—এইরূপ কত অবস্থায় পড়িয়া মনুষ্য মৃত্যুমুখে পতিত হয়। কেহ বা নির্ব্বাসনে, কেহ বা দৌত্যকার্য্যে, কেহ বা রণক্ষেত্রে গিয়া প্রাণ বিসর্জ্জন করে। তুমি তবে এই-সবে ত্রস্ত হইয়া চুপ্ করিয়া ঘরে বসিয়া থাক, কেবলি বিলাপ কর, ক্রন্দন কর, অসুখী হও, পরের উপর নির্ভর করিয়া থাক;—একটি নহে—দুইটী নহে—সহস্র বাহ্য ঘটনার উপর নির্ভর করিয়া থাক।

 ৭। তুমি কি তবে ইহাই শুনিয়াছ? ইহাই কি তত্ত্বজ্ঞানীদের নিকট উপদেশ পাইয়াছ? তুমি কি জান না, এখানে সংগ্রামই জীবনের একমাত্র কাজ? তোমার প্রতি সেনাপতির কোন কঠিন আদেশ হইলে, তুমি যদি দুঃখ প্রকাশ কর—যদি তুমি তাহা পালন না কর, তাহা হইলে সমস্ত সৈন্যমণ্ডলীকে কু-দৃষ্টান্ত দেখানো হইবে, তাহা কি তুমি জান না? তাহা হইলে তোমার দৃষ্টান্তে কেহই আর খাত খনন করিবে না, প্রাকার নির্ম্মাণ করিবে না, পাহারা দিবে না—কেহই বিপদের মুখে অগ্রসর হইবে না, সকলেই অকর্ম্মণ্য হইয়া পড়িবে। আবার যদি জাহাজের নাবিক হইয়া একস্থানেই তুমি বসিয়া থাক, কোথাও নড়িতে না চাহ, যদি মাস্তুলে উঠিতে বলিলে না ওঠো, গলুইয়ের মুখে বাইতে বলিলে না যাও, তাহা হইলে কোন্ জাহাজের কাপ্তেন তোমার সম্বন্ধে ধৈর্য্য ধারণ করিতে পারেন?—তিনি কি আবর্জ্জনা মনে করিয়া, কাজের প্রতিবন্ধক মনে করিয়া, অন্য নাবিকের পক্ষে কুদৃষ্টান্ত মনে করিয়া, তোমাকে জাহাজ হইতে বাহির করিয়া দেন না?

 ৮। সেই প্রকার এখানেও প্রত্যেক মনুষ্যের জীবন, দীর্ঘকালব্যাপী একপ্রকার সংগ্রাম বলিয়াই জানিবে;—উহা বিচিত্র ঘটনায়