পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ছয়

 বিলাতে থাকিয়া সুভাষচন্দ্র ভারতবর্ষের কথা ভুলিতে পারেন নাই। তাঁহার কলিকাতাস্থ বন্ধুদের নিকট পত্র লিখিয়া তিনি সর্ব্বদা দেশের খবর লইতেন এবং দেশসেবার কার্য্যে তাঁহাদের উৎসাহিত করিতেন। দেশে রাজনৈতিক আন্দোলন সম্বন্ধে তাঁহার কৌতুহলের সীমা ছিল না। বিলাতে ভারতীয়দের যেসব প্রতিষ্ঠান ছিল, সেই সব প্রতিষ্ঠানে তিনি নিয়মিত উপস্থিত থাকিয়া প্রবাসী ভারতীয়দের সহিত আত্মীয় সম্বন্ধ স্থাপন করিয়াছিলেন। মিঃ ওটেন সংক্রান্ত ব্যাপারে সুভাষচন্দ্রের যে পরিচয় পাইয়াছি এখানেও তাহার ব্যতিক্রম হয় নাই। শাসক বলিয়া ইংরেজ জাতির যে মিথ্যা দম্ভ তাহা তিনি কিছুতেই সহ্য করিতে পারিতেন না। পরাধীন হইলেও শিক্ষা-দীক্ষা, শৌর্য্য-বীর্য্য ও মনুষ্যত্বের দিক হইতে কোন ভারতীয় যে স্বাধীন দেশের যে কোন অধিবাসীর তুলনায় হীন নহে, সুভাষচন্দ্রের চাল-চলন, কথা-বার্ত্তা, আলাপ-ব্যবহার, আদব-কায়দা অনুক্ষণ এই কথাই স্মরণ করাইয়া দিত। ভারতবর্ষে ইংরেজের হৃদয়হীন শাসন, ভারতীয়ের প্রতি দুর্ব্ব্যবহার, শ্বেতকায় বলিয়া অসঙ্গত অহমিকাবোধ পূর্ব্ব হইতেই তাঁহাকে ইংরেজ জাতির প্রতি বিদ্বেষপরায়ণ করিয়া তুলিয়াছিল। বিলাতের এক চিঠিতে তিনি লিখিয়াছিলেন, “আমার সব চাইতে বেশী আনন্দ হয় যখন দেখি শ্বেতাঙ্গ আমার পরিচর্য্যা করিতেছে ও জুতা সাফ করিয়া দিতেছে।” দেশাত্মবোধ ও স্বজাতিগৌরবে সুভাষচন্দ্র আপন বৈশিষ্ট্য সযত্নে রক্ষা করিয়া চলিতেন। ভারতবর্ষের গৌরবময় ঐতিহ্য ও অতীত তাঁহার নিকট গর্ব্বের বস্তু ছিল—নিজের জীবনেও সুভাষচন্দ্র সেই সুপ্রাচীন ঐতিহ্যের ধারা অক্ষুন্ন রাখিয়াছিলেন। বিলাতে কোন ভারতীয়ের সুখ্যাতির পরিচয় পাইলে তিনি গর্ব্ব অনুভব করিতেন। বিলাতের একখানি পত্রে তিনি লিখিয়াছিলেন, “সেদিন