পাতা:পাহাড়ে মেয়ে - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮
দারোগার দপ্তর, ১৪৬ সংখ্যা।

আমার আন্তরিক পূর্ণ-অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাহার খাতিরে সেই ঘৃণিত প্রস্তাবে কতক সম্মত হইলাম, সম্পূর্ণরূপে তাহা অনুমোদন করিতে পারলাম না। মনে ভয়, একবারে অসম্মত হইলে পাছে তারাদিদি আমার উপর অসন্তুষ্ট হয়, এবং আমাদিগের সংসারের খরচপত্র একবারে বন্ধ করিয়া দেয়। দ্বিতীয় দিবস তারাদিদি পুনরায় সেই প্রস্তাবের অবতারণা করিল। সেই দিবস আমার মনের ভাব আরও নরম হইয়া আসিল; কিন্তু একবারে সম্মত হইতে পারিলাম না।

 “ক্রমে যত দিন গত হইতে লাগিল, তারাদিদিও আমার মনের গতি ক্রমে তত পরিবর্ত্তিত করিয়া আসিতে লাগিল। এইরূপে সপ্তাহকাল অতীত হইতে না হইতেই তারাদিদি আমার মনকে সম্পূর্ণরূপে তাহার আয়ত্বে আনিতে সমর্থ হইল। সপ্তম দিবসে তাহারই উত্তেজনায় আমি আমার মনকে কলুষিত করিলাম, পবিত্র হৃদয়কে অপবিত্র করিলাম, ক্ষণিক সুখে প্রবৃত্ত হইয়া চিরজীবনের নিমিত্ত নিত্যসুখে জলাঞ্জলি দিলাম! হায়! সেই আমার মহাপাতকের প্রথম সোপানে উত্থিত হইবার প্রথম দিন। এখন সেই দিন মনে করিলে, আমার হৃদয়ে ভয়ানক আতঙ্ক আসিয়া উপস্থিত হয়, বিষম অনুতাপ আসিয়া মনকে ভয়ানক যন্ত্রণা দেয়! সেই সময় তাবাদিদির প্রলোভনময় বাক্যস্রোতে ভাসিয়া না গিয়া, যদি আমি আমার হৃদয়ের গতি রুদ্ধ করিতে পারিতাম, সর্ব্বনাশী কুহকিনীর প্রলোভনে না ভুলিতাম, তাহা হইলে কি আজ আমার এই দশা হইত! হতভাগিনী আমি, তাই আমি তখন বুঝিয়াও বুঝি নাই, সর্বনাশী আমাদিগের নিমিত্ত কেন এত অর্থ জলের ন্যায় ব্যয় করিতেছে, আর কোথা হইতেই বা সেই অর্থরাশি প্রাপ্ত হইতেছে!