পাতা:অদ্ভুত ফকির - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দারোগার দপ্তর, ১৯৫ সংখ্যা।

এখানে রাখিবার জন্য বারম্বার অনুরোধ করিতে লাগিলাম; আমার ঐকান্তিক অনুরোধ এড়াইতে না পারিয়া অবশেষে তিনি সম্মত হইলেন।

 “সেই অবধি তিনি আমারই আলয়ে বাস করিতে লাগিলেন। প্রত্যেক বিষয়ে আমি তাঁহার পরামর্শ লইয়া কার্য্য করিতে লাগিলম এবং ঈশ্বরের ইচ্ছায় অতি অল্প দিনের মধ্যেই আমার অবস্থার পরিবর্ত্তন হইল, ক্ষেত্র সমূহে প্রচুর শস্য উৎপন্ন হইতে লাগিল, প্রজাগণ সানন্দ অন্তঃকরণে খাজনা দিতে লাগিল, আমারও বেশ স্বচ্ছলে ও সুখে স্বচ্ছন্দে দিনপাত হইতে লাগিল। বিশেষত, দৈনিক কাজকর্ম্ম শেষ করিয়া সন্ধ্যার সময় যখন তাঁহার নিকটে। বসিয়া নানা শাস্ত্র ও ধর্ম্মচর্চ্চা করিতাম, তখন আমার বোধ হইত, যেন আমি এই নরলোক ত্যাগ করিয়া স্বর্গে গমন করিয়াছি। হায়! আর কি সেই মধুমাখা কণ্ঠস্বর আমার কর্ণকুহরে প্রবেশ করিবে না?”

 এই বলিয়া গৌরীশঙ্কর স্থির হইলেন। তাঁহার মুখ দিয়া আর বাক্য নিঃসরণ হইল না, তিনি দুই হস্তে আপনার মুখমণ্ডল আবৃত করিয়া বালকের মত রোদন করিতে লাগিলেন।

 আমি কোনরূপ সান্ত্বনা করিবার চেষ্টা করিলাম না। সে সময় কোন প্রকারে সহানুভূতি প্রকাশ করিলে পাছে আরও শোকান্বিত হন, এই ভয়ে আমি কোন কথা কহিলাম না; অন্যমনস্কভাবে ঘরের চারিদিক লক্ষ্য করিতে লাগিলাম।

 কিছুক্ষণ পরে গৌরীশঙ্কর আত্মসংবরণ করিলেন। পরে বলিলেন, “ঈশ্বর আমার অদৃষ্টে সুখ লিখেন নাই। যদি তাহা হইত, তাহা হইলে আজ আমার এ দুর্দ্দশা হইত না; আমার