পাতা:অদ্ভুত ফকির - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪
দারোগার দপ্তর, ১৯৫ সংখ্যা।

 আমি ঈষৎ হাসিয়া উত্তর করিলাম, “বেশ কথা। দেখ দেখি, লাঠীগাছিটীতে শাণিতঅস্ত্র বসে কি না? আমিত উহাতে অনেক কষ্টে ছুরি দিয়া দাগ করিতে পারিয়াছি। লাঠীগাছটা বড়ই শক্ত। এরূপ কাঠ তুমি আর কোথাও দেখিয়াছ কি?”

 আবদুল অতি বিনীতভাবে উত্তর করিল, “না হুজুর, এরূপ কাঠ পূর্ব্বে আর কখনও আমার দৃষ্টিগোচর হয় নাই।”

 আমি উত্তর করিলাম, “আমিও সেইরূপ ভাবিয়া ছিলাম। এই কাষ্ঠ এদেশীয় নহে। ইহাকে লোহা কাঠ বলে। লৌহের মত শক্ত বলিয়াই ইহার ঐ নাম। এ গাছ কেবল আণ্ডামান দ্বীপে পাওয়া যায়। খাঁ সাহেব! ইহা দ্বারা তুমি কিছু বুঝিতে পারিলে কি? যদি না পারিয়া থাক, শোন। আমার বোধ হয় গৌরী বাবুর সহোদর হরশঙ্কর-অণ্ডামান হইতে মুক্তিলাভ করিয়া এখানে আসিয়াছিল। কিন্তু আশ্চর্য্যের বিষয় এই যে, এপর্য্যন্ত কেহই তাহাকে দেখিতে পায় নাই। কেন? যদি হরশঙ্কর সত্য সত্যই এদেশে আসিয়া থাকে, এবং যদি সে গৌরীশঙ্কর বা তাঁহার কোন আত্মীয় বা উপকারী বন্ধুকে হত্যা করিতেই মনস্থ করিয়া থাকে, তাহা হইলে সে যে এই অঞ্চলে বারম্বার আসিবে তদ্বিষয়ে কিছুমাত্র সন্দেহ করা যায় না। সুযোগ সুবিধা না বুঝিয়া হরশঙ্কর কখনও এই ভয়ানক কার্য্যে হস্তক্ষেপ করিতে পারিবে না। হরশঙ্করকে যখন কেহই দেখিতে পায় নাই, তখন সে যে ফকিরের বেশেই এখানে আসিয়াছিল, তাহা বেশ বুঝিতে পারা যায়। বিশেষতঃ হরশঙ্কর যখন এরূপ আশ্চর্য্য ছদ্মবেশ ধরিতে পারিত, যখন সে তাহার মুখ ও চক্ষের ভাব সম্পূর্ণরূপে পরিবর্ত্তন করিতে গারিত, তখন তাহাকে কে হরশঙ্কর বলিয়া চিনিতে পারিবে।”