পাতা:জোড়া পাপী - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮
দারোগার দপ্তর, ২০৪ সংখ্যা।

তাঁহার নিকট সে কথা গোপন করিতে ইচ্ছা হইল না। আমি বলিলাম, “হাটখোলায় নরেন্দ্রনাথ বাবুর বাড়ীতে যাইব। আপনার সহিত তাহার আলাপ আছে কি?”

 কিছুক্ষণ চিন্তা করিয়া যুবক উত্তর করিলেন, “আজ্ঞে না, চিনিতে পারিতেছি না। আমাদের বাড়ী হইতে হাটখোলা অনেকটা দূর। হাটখোলার সকল লোকের সহিত আম দের আলাপ থাক। এক প্রকার অসম্ভব। তবে আমিও আপনার সঙ্গে যাইতেছি, উভয়ে মিলিয়া শীঘ্রই উহার সন্ধান করিতে পারিব।”

 আমি আন্তরিক প্রীত হইলাম এবং ক্রমাগত হাটখোলার দিকে যাইতে লাগিলাম। কোচমান উপর হইতে বলিল, “বাবু, বড় দুর্য্যোগ-আপনাদের ছাতাটা এক বার দিন। ঝড় উঠিয়াছে, এখনই বৃষ্টি আসিবে।”

 উভয়েরই নিকট ছাতা ছিল—আমি আমার ছাতাটা কোচমানকে দিলাম এবং সঙ্গে সঙ্গে একবার আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করিলাম। দেখিলাম, একখানি ভয়ানক কৃষ্ণবর্ণ মেঘ সমস্ত আকাশ ছাইয়া ফেলিয়াছে। একটাও তারকা নয়নগোচর হইল না। এতক্ষণ প্রকৃতি নিস্তব্ধ ছিল-গাছের পাতাটা পর্যন্ত নড়ে নাই। সহসা দুর হইতে এক প্রকার সে সে। শব্দ উথিত হইল। দেখিতে দেখিতে পথের ধূলিকণা মেঘকারে উড়িতে লাগিল, মধ্যে মধ্যে দামিনী চমকিতে লাগিল, সঙ্গে সঙ্গে ভয়ানক গর্জনও হইতে লাগিল। মড় মড় শব্দে বৃক্ষের বড় বড় শাখাগুলি ভাঙ্গিতে লাগিল। একাণ্ড মহীরুহ সকল দুলিতে দুলিতে ভূমিসাৎ হইতে লাগিল। ক্রমে দুই এক ফেঁটা বৃষ্টি ও পড়িতে লাগিল।

 কাচমন ঝড়ের সময় অতি কষ্টে শকট চালনা করিয়াছিল।