পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮০
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র

যাহা মরিবার নহে তাহারে কেমনে চাপা দিবে
তব ব্যঙ্গবাণী।
যে তপস্যা সত্য তারে কেহ বাধা দিবে না ত্রিদিবে,
নিশ্চয় সে জানি।”

 এই পৃথিবীতে এমন দুই-একজন মানুষ দেখিতে পাই যাঁহাদের সম্বন্ধে আমাদের অভ্যস্ত বিচার-বুদ্ধি খাটে না—আমাদের মাপকাঠি দিয়া মাপিলে কিংবা আমাদের নিক্তিতে ওজন করিলে যাহাদের মনুষ্যত্বের ঠিক ঠিক পরিমাপ হয় না। আমাদের দৃষ্টি ক্ষুদ্র, আদর্শ ছােট, আমাদের জীবনের পরিধি সংকীর্ণ; কাজেই, আমাদের আদর্শ দিয়া তাঁহাদের বুঝিতে যাওয়া ভুল। হয়ত ইহাতে তাঁহাদের প্রাপ্য মর্য্যাদা দেওয়া হইবে না—আমাদের অকৃতজ্ঞতার মাত্রা আরও বাড়িয়া যাইবে। অতীতে অনেক মহাপুরুষের আবির্ভাব হইয়াছে যাঁহারা মানুষের হাতে কেবল লাঞ্ছনা ও নির্য্যাতনই সহিয়াছেন। তাঁহাদের অসাধারণত্বই বুঝি এই দুর্ভোগের জন্য দায়ী! কিন্তু তাঁহারা আত্মত্যাগের দ্বারাই আপনার প্রয়ােজন সিদ্ধ করিয়াছেন—নিঃশব্দে লাঞ্ছনা ও নির্যাতন সহ্য করিয়াই লােকের মনে স্থায়ী আসন লাভ করিয়াছেন। কেবল তাহাই নয়, যুগে যুগে তাঁহারাই আমাদের নীতি ও আদর্শবােধকে উন্নত করিয়া দেন—বিচারবুদ্ধিকে জাগ্রত ও সংস্কারমুক্ত করিয়া দেন। ইহাতেই তাঁহাদের জীবনের সার্থকতা—দুঃখ ও লাঞ্ছনা ভােগের চরম পুরস্কার ইহাই। নিজেদের জীবনের বিনিময়ে তাঁহারা উচ্চতর আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করিয়া দেয়—অনাগত কালের যাত্রাপথে পথ-নির্দেশ দিয়া যায়—জগতের সভ্যতা ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে অক্ষয় অবদান রাখিয়া যায়। সুভাষচন্দ্র এই শ্রেণীর মানুষ। ভারতের অভ্যন্তরে তাঁহার রাজনৈতিক জীবন আপাতদৃষ্টিতে ব্যর্থ হইয়াছে—বহির্দ্দেশে আজাদ হিন্দ আন্দোলন জয়যুক্ত হয় নাই। কিন্তু তাঁহার অভ্রান্ত দূরদৃষ্টি, অপরিমেয় সাহস, প্রখর ব্যক্তিত্ব, তীক্ষ বিচারক্ষমতা ও অনন্য-