পাতা:সীমান্ত গান্ধী - সুকুমার রায়.pdf/১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাল্য ও শিক্ষা

গফুর খান সর্বপ্রথম মৌলানা আবুল কালাম আজাদের সংস্পর্শে আসেন। মৌলানা আজাদ তখনই উর্দু ভাষায় একজন শক্তিশালী লেখকরূপে সমগ্র ভারতে বিশেষ প্রতিষ্ঠালাভ করিয়াছিলেন। তাঁহার “আল-হেলাল” সে সময় সে যুগের মনীষী এবং বিশেষ করিয়া মুসলমান যুবকগণের মনকে নাড়া দিয়াছিল। “প্রথমত, আলিগড় দলের গতানুগতিক চিন্তাধারার বিরুদ্ধে সংগ্রাম; দ্বিতীয়তঃ, মুসলমানদের অন্তর হইতে বৈদেশিক শাসনের প্রতি আনুগত্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামের” উদ্দেশ্য লইয়াই মৌলানা আজাদ “আল-হেলাল” প্রকাশে উদ্যোগী হন। প্রতিক্রিয়াশীল মুসলিমদের নেতৃবৃন্দ আল- হেলালের তরুণ লেখকের প্রতি নানাপ্রকার কটুক্তি করিতে থাকে। মৌলানা আজাদ কাহারও বিরুদ্ধাচরণের প্রতি ক্ষেপ করিয়া এবং বন্ধুবিচ্ছেদের ভয়ে ভীত না হইয়া স্বাধীনভাবে একাকী মুক্তির পতাকা হস্তে ‘আল-হেলাল’ প্রচার করেন। স্বাধীন চিন্তা, নির্ভীক মনােভাব, সংস্কার ও বিপ্লব—ইহাই হইল তাহার পাথেয়। গফুর খান তাহার সংস্পর্শে আসিবার পর উভয়ের মধ্যে আত্মীয়তা ঘনিষ্ঠ হইয়া উঠে। মৌলানা আজাদের জাতীয়তা, তাহার স্বাধীন চিন্তাধারা ও প্রগতিমূলক রচনাবলী গফুর খানের হৃদয়ে গভীর রেখাপাত করে।

 আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয় হইতে গফুর খান প্রবল আত্মবিশ্বাস ও একটা উদার আদর্শবাদ লইয়া স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। তাঁহার সুদীর্ঘ দেহ, প্রশস্ত বক্ষ, উন্নত মস্তক ও তেজদীপ্তিময় ব্যক্তিত্বের একটা অসাধারণ আকর্ষণী শক্তি আছে, যাহা মন্ত্রের ন্যায় চেতনাকে মুগ্ধ করে। সে সময় তিনি দৈর্ঘ্যে ৬ ফুট ৪ ইঞ্চি ও ওজনে ২ মণ ১৫ সের ছিলেন।