বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র/সতের

উইকিসংকলন থেকে

সতের

 সুভাষচন্দ্রের ‘সাম্যবাদ সংঘ’ পরিকল্পনায় ও ইটালী পরিভ্রমণের সময় রোমে তাঁহার অভ্যর্থনার সমারোহ দেখিয়া ও তাঁহার মুখে ইটালীর পুনরভ্যুত্থান ও সেখানকার যুবশক্তির অজস্র প্রশংসাবাদ শুনিয়া যাহারা সুভাষচন্দ্রের চিন্তাধারা ও কার্য্যক্রমের মধ্যে ‘ফ্যাসিবাদ’ আবিষ্কার করিয়া শঙ্কিত হইয়াছিলেন হরিপুরা কংগ্রেসে রাষ্ট্রপতির অভিভাষণ পড়িয়া তাঁহাদের সে আশঙ্কা দূরীভূত হইবে।

 অভিভাষণের প্রথমেই তিনি ঘোষণা করেন, “ব্রিটীশ সাম্রাজ্যকে হয় ধ্বংসপ্রাপ্ত হইতে হইবে অথবা স্বাধীন জাতিসমূহের স্বেচ্ছাগঠিত যুক্তরাষ্ট্রে পরিণত হইতে হইবে। ১৯১৭ সালে জারের সাম্রাজ্য ধ্বংস হইয়াছিল এবং সেই ধ্বংসস্তুপের ভস্মরাশি হইতেই সোভিয়েট রাশিয়ার উদ্ভব হইয়াছে। ব্রিটিশের পক্ষে রাশিয়ার ইতিহাস হইতে শিক্ষা লাভের এখনও অবকাশ রহিয়াছে। ব্রিটেন ইহার সুযোগ গ্রহণ করিবে কী?” তিনি আরও ঘোষণা করেন যে, ব্রিটীশ জনসাধারণের স্বাধীনতা রক্ষা হইতে পারে যদি ব্রিটেন একটি সোস্যালিষ্ট রাষ্ট্রে পরিণত হয়; এবং সোশ্যালিষ্ট রাষ্ট্র গঠন করিতে হইলে ব্রিটীশ সাম্রাজ্যের বন্ধন শিথিল করিতে হইবে ও ঔপনিবেশিক অধিকার হস্তচ্যূত করিতে হইবে। যেহেতু, “ব্রিটেনের পূঁজিবাদী শাসকশ্রেণী ও উপনিবেশ সমূহের মধ্যে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক বিদ্যমান। বহুদিন পূর্ব্বে লেনিন বলিয়াছিলেন ‘কতকগুলি জাতির দাসত্বই গ্রেট ব্রিটেনের প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিকে অধিকতর শক্তিশালী ও পুষ্ট করিতেছে।’ ইংলণ্ডের বাহিরে বিভিন্ন উপনিবেশ ও অধীন দেশ সমূহ শোষণক্ষেত্ররূপে রহিয়াছে, মুখ্যতঃ এই কারণেই ব্রিটিশ অভিজাততন্ত্র ও বুর্জোয়া শ্রেণীর অস্তিত্ব এখনও বজায় আছে।” তিনি আরও বলেন—

 “এই সব উপনিবেশ ও অধীনদেশ সমূহ স্বাধীনতা লাভ করিলে নিঃসন্দেহে গ্রেট ব্রিটেনের ধনতান্ত্রিক শাসকশ্রেণীর বিলোপ ঘটিবে; এবং সমাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা হইবে। অতএব ইহা নিঃসন্দেহে বুঝিতে হইবে যে, উপনিবেশতন্ত্রের উচ্ছেদ ব্যতীত ইংলণ্ডে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা অসম্ভব। আমাদের মধ্যে যাহারা ভারতের স্বাধীনতার জন্য ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্গত অন্যান্য অধীন দেশের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করিতেছেন, তাঁহারা সঙ্গে সঙ্গে ব্রিটিশ জাতির অর্থনৈতিক মুক্তিসাধনের জন্যও সংগ্রাম করিতেছেন, সন্দেহ নাই।” যতদিন ব্রিটেন ঔপনিবেশিক অধিকার কায়েম রাখিবে ততদিন ব্রিটেনের আপামর জনসাধারণের সত্যিকারের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হইতে পারিবে না—কেবল উপনিবেশসমূহকে পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদানের দ্বারাই ব্রিটেনে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পত্তন হইতে পারে। আমরা ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের দ্বারা পরোক্ষভাবে ব্রিটীশ জনসাধারণের অর্থনৈতিক মুক্তিলাভে সহায়তা করিতেছি—রাষ্ট্রপতি এই ঘোষণার দ্বারা পৃথিবীর সমস্ত পরাধীনদেশসমূহের এবং সমাজসচেতন ও গণতান্ত্রিক মনোভাবসম্পন্ন জনগণের প্রাণের আকুতিকে ভাষা দিয়াছেন।

 ‘সাম্যবাদ সংঘে’ সুভাষচন্দ্র One-party State গঠনের পক্ষে মত প্রচার করেন কিন্তু হরিপুরা কংগ্রেসে তাঁহার সে মত সম্পূর্ণ পরিবর্ত্তিত হয়। স্বাধীন ভারতে কংগ্রেসের স্থান ও কার্য্য কি হইবে সে সম্বন্ধে তিনি বলেন:—“আমার সন্দেহ হয়, আমাদের জাতীয় সংগ্রামের ইতিহাসে কংগ্রেসের যথাযথ কর্ত্তব্য ও অংশ সম্বন্ধে আমাদের কংগ্রেস কর্ম্মীদের অনেকেরই কোন স্পষ্ট ধারণা ও সুনির্দ্দিষ্ট চিন্তা নাই। আমাদের কোন কোন বন্ধু মনে করেন কংগ্রেসের স্বাধীনতালাভ-রূপ অভীষ্ট সিদ্ধ হইলেই কংগ্রেসী দলের বিলোপ সাধন করা হইবে। এইরূপ চিন্তা সর্ব্বৈব ভ্রমপ্রসূত। স্বাধীনতালাভের পরে কংগ্রেসী দল ভাঙ্গিয়া দিবার কোন প্রশ্নই উঠিতে পারে না। প্রকৃত পক্ষে, কংগ্রেসকে ক্ষমতা অধিকার করিয়া শাসন কার্য্যের দায়িত্ব গ্রহণ করিতে হইবে ও জাতীয় পুনর্গঠনের কর্ম্মপন্থা কার্য্যকরী করিতে হইবে। কেবল তখনই কংগ্রেসের কর্ত্তব্য পূর্ণরূপে সম্পন্ন হইবে। বলপূর্ব্বক কংগ্রেসের বিলোপ সাধনের ফলে দারুণ বিশৃঙ্খলা ঘটিবে। যুদ্ধোত্তর ইয়োরাপের প্রতি দৃষ্টিপাত করিলে আমরা দেখিতে পাই যে, যে দেশে ক্ষমতা অধিকার করিয়া বিজয়ীদল পুনর্গঠনের দায়িত্ব ও কর্ম্মপন্থা গ্রহণ করিয়াছে, কেবল সেই সেই দেশগুলিতেই সুশৃঙ্খল ও অব্যাহত উন্নতি সম্ভব হইয়াছে। এইরূপ তর্ক উঠিতে পারে যে, ক্ষমতা লাভের পর বিজয়ী দল রাষ্ট্রের কর্ণধার হইলে, ঐ রাষ্ট্র একটি
আলােচনারত—সুভাষ ও জওহরলাল
একদলীয় কর্ত্তৃত্বশালী সর্ব্বগ্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত হইবে; কিন্তু এই অভিযোগ আমি স্বীকার করিতে পারি না। রাশিয়া, জার্ম্মানি ও ইটালীর মত যদি রাষ্ট্রে মাত্র একটি দলেরই কর্ত্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়, তবে সেই রাষ্ট্র একটি সর্ব্বগ্রাসী ও একদলীয় প্রভুত্বাধীন রাষ্ট্র হইতে পারে সন্দেহ নাই। কিন্তু আমাদের দেশে অন্যান্য দলগুলিকে নিষিদ্ধ ও ক্ষমতাচ্যুত করার কোন যুক্তি নাই। আমাদের কংগ্রেস “নাৎসী দলের” মত “একনায়ক-নীতি’র উপর প্রতিষ্ঠিত হইবে না; কংগ্রেসের ভিত্তি হইবে সম্পূর্ণরূপে গণতান্ত্রিক। কংগ্রেসে একাধিক দল ও গণতান্ত্রিক ভিত্তি থাকার ফলে ভবিষ্যৎ ভারতীয় রাষ্ট্র একটি সর্ব্বগ্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত হইতে পারিবে না। অধিকন্তু গণতান্ত্রিক ভিত্তির উপর কংগ্রেস সংগঠন প্রতিষ্ঠিত থাকায় এই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাইবে যে, উপর হইতে নেতাদিগকে জনগণের উপর চাপাইয়া দেওয়া যাইবে না; জননেতারা নিচ হইতেই নির্ব্বাচিত হইবেন।”

 কংগ্রেসকে একটি সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করাই সুভাষচন্দ্রের লক্ষ্য ছিল। মহাত্মা গান্ধীর সার্ব্বভৌম নেতৃত্বেই কংগ্রেসের কার্য্যক্রম নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হইয়া আসিতেছে। সুভাষচন্দ্র এই একনায়কত্বের ঘোর বিরোধী ছিলেন। জাতীয় আন্দোলনে যেমন কংগ্রেস স্বাধীনতাকামী বিভিন্ন সংগ্রামশীল দল বা প্রতিষ্ঠানের মিলন-ক্ষেত্র স্বাধীনভারতেও কংগ্রেস জাতীয় পুনর্গঠন কার্য্যে প্রগতিপন্থী সকল দলের মিলনক্ষেত্র হইবে সুভাষচন্দ্রের ইহাই ছিল অভিমত। কংগ্রেসের অভ্যন্তরে কংগ্রেস সমাজতন্ত্রীদলের উপর গান্ধীবাদীদের তেমন স্নেহদৃষ্টি ছিল না; কিন্তু, সুভাষচন্দ্র সমাজতন্ত্রীদলের প্রয়োজনও স্বতন্ত্র অস্তিত্বকে স্বীকার করিয়া জাতীয় সংগ্রামে এই দলের সহযোগিতা ও সহায়তা কামনা করেন। কংগ্রেসের বাহিরেও যে সব সামাজ্যবাদবিরোধী দল বা প্রতিষ্ঠান আছে, দলগত বিভেদ ভুলিয়া, মত ও পথের চুলচেরা বিচারে কালক্ষেপ না করিয়া সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে কংগ্রেসও ঐ সকল দল বা প্রতিষ্ঠানের সহিত সহযোগিতা করিবে ইহাই সুভাষচন্দ্রের ইচ্ছা ছিল। কংগ্রেস সমাজতন্ত্রীদল সম্বন্ধে তিনি বলেন: “সম্প্রতি কংগ্রেসের অভ্যন্তরে “কংগ্রেস সমাজতন্ত্রীদল” গঠন সম্পর্কে বহু বিতর্ক হইয়াছে। আমি কংগ্রেস সমাজতন্ত্রীদলের পক্ষে ওকালতি করিতেছি না—আমি এই দলের সভ্য নই। তথাপি আমি বলিব যে, এই দলের সূচনা হইতেই এই দলের সাধারণ আদর্শ ও কর্ম্মনীতিতে আমার সম্মতি আছে। প্রথমতঃ, বামপন্থী কর্ম্মী ও সংগঠন সমূহের একটি দলে সুসংহত হওয়া বাঞ্ছনীয়। দ্বিতীয়তঃ, বামপন্থী দল সৃষ্টির সুসঙ্গত কারণ তখনই থাকিতে পারে, যখন ঐ দল সমাজতান্ত্রিক নীতি গ্রহণ করে। কিন্তু “কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল” অথবা অনুরূপ কোন দলের কংগ্রেসের “বামপক্ষ” হিসাবে কার্য্য করা উচিত। যদিও সমাজতন্ত্র আমাদের বর্ত্তমানে প্রত্যক্ষ সমস্যা নহে, তথাপি, স্বাধীনতালাভের পরে দেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করিতে হইলে, দেশকে প্রস্তুত করিবার জন্য সমাজতান্ত্রিক প্রচার কার্য্য প্রয়োজন। সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী ও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠাকামী “কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী” দলের মত এইরূপ একটি দলই শুধু এইরূপ প্রচার কার্য্য চালাইতে পারে।”

 এখানে সুস্পষ্টভাবে এই মতই ব্যক্ত হইয়াছে যে, স্বাধীনভারতের সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় সমাজতান্ত্রিক নীতিই অনুসৃত হইবে। সংগ্রামাত্মক কর্ম্মপন্থায় আস্থাশীল ও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠাকামী কংগ্রেস সমাজতন্ত্রীদলকে তিনি অভিনন্দিত করেন— এই দল গণ-বিপ্লব ও সংগ্রামশীল মনোভাবের প্রতীক হইবে। সমাজতন্ত্রের ভিত্তিতে সমাজ ও রাষ্ট্রের পুনর্গঠনকল্পে প্রচারকার্য্য চালাইবার অন্য সমাজতন্ত্র বাদে বিশ্বাসী এইরূপ একটি সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। সুতরাং এই প্রতিষ্ঠানকে স্বীকার করিয়া না লইলে কংগ্রেস গণতন্ত্রের প্রতি বিশ্বাসভঙ্গের অপরাধে অপরাধী হইবে। গণতন্ত্রের মূলনীতি রক্ষার প্রচেষ্টায়ই সুভাষচন্দ্রের সহিত কংগ্রেস হাই কমাণ্ডের বিরোধ উপস্থিত হয়। “Hitlerism inside and outside the Congress” এর উচ্ছেদকল্পে তিনি সমস্ত শক্তি নিয়োজিত করেন। ১৯৩১ সালের মাঘ মাসে করাচী কংগ্রেসের সময় নওজোয়ান ভারতসভার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত নওজোয়ান সম্মেলনে সভাপতির অভিভাষণে সুভাষচন্দ্র স্বাধীন ভারতের জন্য নিম্নলিখিত রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রবর্তন করিতে বলেন: “I want a Socialist Republic in India ...The message I have to give is one of complete, alround undiluted freedom. We want political freedom, whereby is meant the constitution of an Independent Indian State; free from the control of British Imperialism. It should be quite clear to everybody that independence means severance from the British Empire, and on this point there should be no vagueness or mental reservation. Secondly, we want complete economic emancipation, Every human being must have the right to work, and the right to a living wage. There shall be no droves in our society, and no unearned incomes. There must be equal opportunities for all. Above all there should be a fair, just and equitable distribution of wealth. For this purpose it may be necessary for the State to take over the control of the means of production, distribution of wealth. Thirdly, we want complete social equality. There shall be no caste, no depressed classes. Every man will have the same rights, the same status in society. Further, there shall be no inequality between the sexes either in Social status or in Law—and woman will be in every way an equal partner of man.

 সুভাষচন্দ্রের অভিপ্রায় এই যে, ভারতবর্ষের বাহিরে যে সকল রাষ্ট্র ভারতবর্ষের রাজনৈতিক অধিকার লাভের আকাঙ্ক্ষার প্রতি সহানুভূতিশীল সেই সব রাষ্ট্রের শাসনতান্ত্রিক মতবাদ যাহাই হউক না কেন ভারতবর্ষ তাহাদের সহিত যোগাযোগ রক্ষা করিয়া চলিবে। হরিপুরা অভিভাষণে ভারতবর্ষের পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে তিনি বলেন—“In this matter we should take a leaf out of Soviet diplomacy. Though Soviet Russia is a Communist State her diplomats have not hesitated to make alliances with non-socialist states and have not declined sympathy or support coming from any quarter. We should therefore aim at developing a nucleus of men and women in every country who would feel sympathetic towards India.” অবশ্য এই পররাষ্ট্রনীতির অর্থ এই নয় যে, ভারতের জাতীয় আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতিপরায়ণ রাষ্ট্রসমূহের আভ্যন্তরীণ শাসনতান্ত্রিক নীতি ও কার্য্যক্রম ভারতবর্ষের শাসনব্যবস্থায়ও অহেতুক প্রভাব বিস্তার করিবে। সুভাষচন্দ্র বলেন, “In connection with our foreign poliey, the first suggestion I have to make is that we should not be influenced by the internal politics of any country or the form of its State.” বহুদিন পূর্বে পূর্বোক্ত নওজোয়ান সম্মেলনেই তিনি সুস্পষ্টরূপে ঘোষণা করিয়াছিলেন—“while seeking light and inspiration from abroad we cannot forget that we should not blindly imitate any other people, and that we should assimilate what we learn elsewhere after finding out what will suit our national requirements.” ১৯৩১ সালের ৪ঠা জুলাই কলিকাতায় নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশনে সভাপতির অভিভাষণে সুভাষচন্দ্র বলেন, “I have no doubt in my mind that the salvation of India, as of the world, depends on socialism. India should learn from and profit by the experience of other nations—but India should be able te evolve her own method in keeping with her own needs and her own environments. In applying any theory to practice, you can never rule out your geography or history. If you attempt it, you are bound to fail. I also think that India should form her own form of socialism. When the whole world is engaged in socialistic experiments, why should we not do the same thing? It may be that the form of socialism which India will evolve will have something new and original about it which will be of benefit to the whole world”.

 সুভাষচন্দ্রকে যাহারা ফ্যাসিষ্ট আখ্যায় আখ্যাত করিয়া আত্মপ্রসাদ লাভ করেন তাহাদের সুভাষচন্দ্রের বিভিন্ন সময়ের উল্লিখিত উক্তিসমূহ বিশেষ করিয়া প্রণিধান করা উচিত। সুভাষচন্দ্রের রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি, সূক্ষ্ম বিচারশক্তি ও পরমতসহিষ্ণুতা দলনির্বিশেষে সকল দেশকর্মীরই অনুকরণীয়। বিদেশের কোন ‘ismকেই তিনি যেমন নির্বিচারে চালাইতে চাহেন নাই, তেমনি কোন ‘ism’কেই তিনি কটাক্ষ করিতেন না। Fascism-কে অস্বীকার করিয়াও সুভাষচন্দ্র Fascism-এর উজ্জ্বল ও শ্রেয় অংশ গ্রহণ করিয়াই ‘সাম্যবাদ সংঘে’র পরিকল্পনায় তিনি Fascism ও Communism-এর সমন্বয় সাধন করিতে চেষ্টা করেন। সুভাষচন্দ্র Communism এর অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণেরই পক্ষপাতী ছিলেন। সুভাষচন্দ্রের রাষ্ট্রিক দর্শন ও মতবাদ মূলতঃ সমাজতান্ত্রিক চিন্তা ও কর্মপন্থা দ্বারাই গঠিত—এ বিষয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নাই।