গল্পস্বল্প/বিশুদ্ধ জল বাতাস

উইকিসংকলন থেকে

বিশুদ্ধ জলবাতাস।

 কলিকাতায় কলের জলের প্রসাদে পরিষ্কার জলের অভাব নাই, কিন্তু অনেক গ্রাম জলের দোষে পীড়ার আকর হইতেছে। এরূপ স্থলে গ্রামের যে সকল পুষ্করিণীর জল পান করা যায় তাহাতে স্নানাদি করিয়া পানীয় জল কলুষিত করা উচিত নহে। এমন কি কাহারও একখানি কাপড় পর্য্যন্ত সে জলে যাহাতে ডুবান না হয় তাহার প্রতি লক্ষ্য রাখা কর্ত্তব্য। এইরূপ যত্নরক্ষিত পুষ্করিণীর জল প্রথমে উষ্ণ করিয়া পরে ফিলটার করিয়া লইলে অনেক পরিমাণে তাহার দূষণীয়তা দূর হইতে পারে।

 যাঁহাদের কলিকাতা হইতে ফিলটার কিনিয়া লইয়া যাইবার সুবিধা নাই, তাঁহারা নিম্নলিখিত সহজ উপায়ে জল পরিষ্কার করিয়া লইতে পারেন। অর্দ্ধ হস্ত দূরে দূরে তিনটি মৃত্তিকা কলস উপর্য্যুপরি থাকিতে পারে এইরূপ একটি কাষ্ঠের মধ্য-শূন্য ত্রিস্তর কুম্ভস্থাপন মঞ্চ প্রস্তুত করাইয়া তাহার উপর একে একে কলস তিনটি স্থাপিত করিবে। উপরের দুইটি কলসের তলদেশে অল্প ছিদ্র করিয়া সর্ব্বোপরিস্থ কলসটিতে বালি এবং তন্নিমস্থটিতে কয়লা রাখিয়া প্রথমটি উষ্ণজল পূর্ণ করিবে। সেই বালিপূর্ণ কলসের জল ক্রমে কয়লাপূর্ণ দ্বিতীয় কলসটিতে সঞ্চিত হইয়া তন্মধ্য দিয়া আবার নিম্নের কলসটিতে বিশুদ্ধ হইয়া পড়িবে। তখন তাহা কূঁজা বা মৃত্তিকা-কলসে রাখিয়া পান করিবে।

 প্রতি সপ্তাহে কলসির পুরাতন বালি ও কয়লা ফেলিয়া দিয়া তাহার মধ্যে পুনরায় যেন নূতন বালি ও কয়লা রাখা হয়।

 এইটুকু পরিশ্রম স্বীকার করিয়া যাঁহারা পানীয় জল বিশুদ্ধ করিয়া লইতে না চাহেন তাঁহাদিগকে স্বাস্থ্যের উপদেশ দেওয়া বৃথা।

 পল্লীগ্রামে বিশুদ্ধ জলের অভাব হউক, কিন্তু বিশুদ্ধ বায়ুর সাধারণত অভাব নাই। এ হিসাবে পল্লীগ্রামবাসিগণ কলিকাতা বাসী হইতে সৌভাগ্যবান। কলিকাতার অধিকাংশ বাঙ্গালীর বাস গলি ঘুঁজির মধ্যে। সুতরাং স্বাস্থ্যের জন্য সকল বালকেরই অন্ততঃ একবার করিয়া মুক্ত প্রান্তরে বিশুদ্ধ বায়ুসেবনের নিমিত্ত বহির্গমন করা কর্ত্তব্য। মুক্ত বিশুদ্ধ বায়ুতে শরীর কিরূপ স্ফূর্ত্তি লাভ করে তাহা কলিকাতা হইতে অল্প দিনের জন্যও যাঁহারা পল্লিগ্রাম বা পশ্চিম প্রভৃতি দেশে গিয়াছেন তাঁহারা বিলক্ষণ জানেন।

 এইখানে একটি কথা বলা আবশ্যক। বালিকাদিগকে ময়দান প্রভৃতি কোন মুক্তস্থানে পাঠান প্রায়ই বাঙ্গালীর পক্ষে সুবিধা হয় না, এরূপ স্থলে সকালে সন্ধ্যায় যাহাতে তাহারা অন্ততঃ বাড়ীর ছাদেও ভ্রমণ করিয়া বেড়ায় ইহার প্রতি দৃষ্টি রাখিতে মাতৃগণ যেন না ভুলেন।

 আর একটি কথা। আজ কাল কি গ্রামে কি সহরে সর্ব্বত্রই কেরোসিন তৈলের দীপ ব্যবহৃত হইয়া থাকে। কিন্তু যেরূপ কেরোসিন দীপ হইতে অনর্গল ধূম নির্গত হইয়া গৃহ দুর্গন্ধময় ও শীঘ্র উত্তপ্ত করিয়া তুলে, সেরূপ নিকৃষ্ট দীপ গৃহে প্রজ্জ্বলিত করা স্বাস্থ্যের পক্ষে নিতান্ত ক্ষতিজনক। উৎকৃষ্ট কিরোসিন দীপ হইলেও বদ্ধগৃহে উহা ব্যবহার করা ভাল নহে। কারণ, উৎকৃষ্ট দীপ হইতেও অল্প পরিমাণে ধূম নির্গত হয় এবং অন্যান্য তৈল অপেক্ষা কিরোসিন তৈলের দীপ সমুদ্দীপ্ত বলিয়া এই দীপ্তির প্রভাবে শীঘ্রই গৃহের বাতাস উষ্ণ হইয়া উঠে। এই সকল কারণে কিরোসিন দীপের সম্মুখে বসিয়া পাঠ করা অপেক্ষা পাঠের সময় মোমবাতি অথবা অন্ততঃ পক্ষে দুইটি পলিতাবিশিষ্ট সরিষা বা নারিকেল তৈলের দীপ ব্যবহার করাও ভাল। শয়নকক্ষে সারারাত্রি কিরোসিনের আলো জ্বালাইয়া রাখা কোন ক্রমেই উচিত নহে।