বাঙ্গলা ব্যাকরণ/লিঙ্গ

উইকিসংকলন থেকে

লিঙ্গ।

 লিঙ্গ দুই প্রকার। পুং লিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গ। বঙ্গভাষায় ক্লীবলিঙ্গঘটিত কোন বৈলক্ষণ্য প্রায়ই দেখা যায় না। ক্লীবলিঙ্গ শব্দের জ্ঞান সহজও নহে। সুতরাং তাহা উপেক্ষিত হইল। সংস্কৃত ভাষায় যে সকল শব্দ ক্লীবলিঙ্গ, বঙ্গভাযায় তাহারা পুংলিঙ্গবৎ ব্যবহৃত হয়।

 এক্ষণে স্ত্রীলিঙ্গ শব্দগুলি জানিতে পারিলেই অবশিষ্ট গুলিকে পুংলিঙ্গ বলিয়া স্থির করা যাইতে পারে। লিঙ্গ বুঝিবার নিমিত্ত নিমে কয়টি সঙ্কেত লিখিত হইল।

 যাহারা স্বভাবতঃ স্ত্রীজাতি,[১] আর যে শব্দ দ্বারা বিদ্যুৎ, রাত্রি, লতা, বীণা, দিক, পৃথিবী, তৃষ্ণা, নদী, লজ্জা, শ্রেণী, শোভা, জ্যোৎস্না, সেনা, তিথি, বুদ্ধি, ইচ্ছা, সম্পদ্, বিপদ্ বুঝায়, সেই সমুদায়ই প্রায় স্ত্রীলিঙ্গ[২]

 নিজন্ত ধাতুর উত্তর অন ও আ প্রত্যয় করিয়া ও সনন্ত ধাতুর উত্তর আ প্রত্যয় করিয়া যে সমুদায় পদ হয়, আর তি প্রত্যয়ান্ত কৃদন্ত পদ সকল এবং তা প্রত্যয় করিয়া যে সমুদায় পদ হয়, তাহারা স্ত্রীলিঙ্গ। অবশিষ্ট পদ প্রায়ই পুংলিঙ্গ।

 হরীতকী প্রভৃতি কতকগুলি বৃক্ষবাচক শব্দ স্ত্রীলিঙ্গ হইয়া থাকে।

 যাহার স্ত্রীলিঙ্গ পদের বিশেষণ, তাহাদিগের প্রায়ই রূপান্তর হইয়া থাকে। যথা; সুন্দরী নারী, মনোহারিণী লতা ইত্যাদি। কখন কখন শ্রুতিকটুদোষ পরিহারের নিমিত্ত স্ত্রীলিঙ্গের বিশেষণ পুংলিঙ্গের ন্যায়ও হইয়া থাকে। যথা; তাহার বুদ্ধি অত্যন্ত তীক্ষ্ণ ছিল[৩]

  1. দার ও কলত্র শব্দ স্ত্রী বাচক হইয়াও পুংলিঙ্গবৎ হয়।
  2. সংস্কৃত ভাষায় যাহারা স্ত্রীলিঙ্গ, বাঙ্গালা ভাষাতেও তাহারা সেই স্ত্রীলিঙ্গ হইবে। তাহার সাধারণ জ্ঞানের নিমিত্ত স্থূল বৃত্তান্ত মাত্র লিখিত হইল।
  3. স্ত্রীলিঙ্গের বিশেষণ যখন বিশেষ্যের পরবর্ত্তী হয়, তখনই প্রায় পুংলিঙ্গ হয়। আর যখন পূর্ববর্ত্তী থাকিয়াও পুংলিঙ্গ হইয়া থাকে, তখন কর্ম্মধারয় সমাস করিয়া পূর্ব্বপদ পুংলিঙ্গের ন্যায় হয়।