পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

“স্বদেশী সমাজ” প্রবন্ধের পরিশিষ্ট।[১]

 “স্বদেশী সমাজ” শীর্ষক যে প্রবন্ধ আমি প্রথমে মিনার্ভা ও পরে কর্জ্জন্ রঙ্গমঞ্চে পাঠ করি,[২] তৎসম্বন্ধে আমার শ্রদ্ধেয় সুহৃদ শ্রীযুক্ত বলাইচাঁদ গোস্বামী মহাশয় কয়েকটি প্রশ্ন উত্থাপন করিয়াছেন। নিজের ব্যক্তিগত কৌতুহলনিবৃত্তির জন্য এ প্রশ্নগুলি তিনি আমার কাছে পাঠান নাই, হিন্দুসমাজনিষ্ঠ ব্যক্তিমাত্রেরই যে যে স্থানে লেশমাত্র সংশয় উপস্থিত হইতে পারে, সেই সেই স্থানে তিনি আমার মনোযোগ আকর্ষণ করিয়া আন্তরিক কৃতজ্ঞতা-ভাজন হইয়াছেন।

 কিন্তু প্রশ্নোত্তরের মত লিখিতে গেলে লেখা নিতান্তই আদালতের সওয়াল-জবাবের মত হইয়া দাঁড়ায়। সেরূপ থাপ্‌ছাড়া লেখায় সকল কথা সুস্পষ্ট হয় না, এইজন্য সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধ-আকারে আমার কথাটা পরিস্ফুট করিবার চেষ্টা করি।

 কর্ণ যখন তাঁহার সহজ কবচটি ত্যাগ করিয়াছিলেন, তখনি তাঁহার মৃত্যু ঘনাইয়াছিল; অর্জ্জুন যখন তাঁহার গাণ্ডীব তুলিতে পারেন নাই, তথনি তিনি সামান্য দস্যুর হাতে পরাস্ত হইয়াছিলেন। ইহা হইতে বুঝা যাইবে, শক্তি সকলের এক জায়গায় নাই—কোনো দেশ নিজের অস্ত্রশস্ত্রের মধ্যে নিজের বল রক্ষা করে, কোনো দেশ নিজের সর্ব্বাগ্রে শক্তিকবচ ধারণ করিয়া জয়ী হয়।

 য়ুরোপের যেথানে বল, আমাদের সেখানে বল নহে। য়ুরোপ


  1. ইহা ইতিপূর্ব্বে বঙ্গবাসীতে বাহির হইয়া গেছে। কিন্তু “স্বদেশী সমাজ” প্রবন্ধের সহিত এই প্রবন্ধের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। সেজন্য অনেকের আগ্রহে ও অনুরোধে এবং ইহার স্থায়িত্বসঙ্কল্পে উক্ত “স্বদেশী সমাজ” প্রবন্ধের পরিশিষ্টরূপে ইহা বঙ্গদর্শনে প্রকাশিত হইল।—(সহ: স:)
  2. গত ৭ই শ্রাবণ শুক্রবার মিনার্ভারঙ্গমঞ্চে চৈতন্যলাইব্রেরির বিশেষ অধিবেশনে প্রবন্ধটি প্রথম পঠিত হইয়াছিল। তাহার পর পরিবর্দ্ধিত আকারে ১৬ই শ্রাবণ রবিবার কর্জ্জনরঙ্গমঞ্চে ভাদ্রের বঙ্গদর্শন হইতে পুনঃপঠিত হয়।