পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ব্রতধারণ।[১]

 আজ এই স্ত্রীসমাজে আমি যে উপদেশ দিতে উঠিয়াছি বা আমার কোনো নূতন কথা বলিবার আছে, এমন অভিমান আমার নাই।

 আমার কথা নূতন নহে বলিয়াই, কাহাকেও উপদেশ দিতে হবে না বলিয়াই, আমি আজ সমস্ত সঙ্কোচ পরিহার করিয়া আপনাদের সম্মুখে দণ্ডায়মান হইয়াছি।

 যে কথাটি আজ দেশের অন্তরে অন্তরে সর্ব্বগ্র জাগ্রত হইয়াছে, তাহাকেই নারীসমাজের নিকট সুস্পষ্টরূপে গোচর করিয়া তুলিবার জন্যই আমাদের অদ্যকার এই উদ্যোগ।

 আমাদের দেশে সম্প্রতি একটি বিশেষ সময় উপস্থিত হইয়াছে, তাহা আমরা সকলেই অনুভব করিতেছি। অল্পদিনের মধ্যে আমাদের দেশে আঘাতের পর আঘাত প্রাপ্ত হইয়াছে। হঠাৎ বুঝিতে পারিয়াছি যে, আমাদের যাত্রাপথের দিক্‌পরিবর্ত্তন করিতে হইবে।

 যে সময়ে এইরূপ দেশব্যাপী আঘাতের তাড়না উপস্থিত হইয়াছে, যে সময়ে আমাদের সকলেরই হৃদয় কিছু না কিছু চঞ্চল হইয়া উঠিয়াছে সেই সময়কে যদি আমরা উপেক্ষা করি, তবে বিধাতার প্রেরণাকে অবজ্ঞা করা হইবে।

 ইহাকে দুর্যোগ বলিব কি? এই যে দিগ্‌দিগন্তে ঘন মেঘ করিয়া শ্রাবণের অন্ধকার ঘনাইয়া আসিল, এই যে বিদ্যুতের আলোক এবং বজ্রের গর্জ্জন আমাদের হৃৎপিণ্ডকে চকিত করিয়া তুলিতেছে, এই যে, জলধারাবর্ষণে পৃথিবী ভাসিয়া গেল—এই দুর্যোগকেই যাহারা সুযোগ করিয়া তুলিয়াছে, তাহারাই পৃথিবীর অন্ন যোগাইবে। এখনি স্কন্ধে


  1. কোন “স্ত্রীসমাজে” জনৈক-মহিলা-কর্ত্তৃক পঠিত।