পথের দাবী/৮

উইকিসংকলন থেকে

 ছেলেবেলা হইতেই মেয়েদের প্রতি অপূর্ব্বর শ্রদ্ধা ছিল না। বরঞ্চ কেমন যেন একটা বিতৃষ্ণার ভাব ছিল। বৌদিদিরা ঠাট্টা-তামাসা করিলে সে মনে মনে রাগ করিত, ঘনিষ্ঠতা করিতে আসিলে দূরে সরিয়া যাইত। মা ভিন্ন আর কাহারও সেবাযত্ন তাহার ভালই লাগিত না। কোন মেয়ে কলেজে পড়িয়া একজামিন পাশ করিয়াছে, শুনিলে সে খুব খুশী হইত না, এবং সেদিন যখন বিলাতে ইহারা কোমর বাঁধিয়া রাজনৈতিক অধিকারের জন্য লড়াই করিতেছিল, খবরের কাগজে সেই সকল কাহিনী পড়িয়া তাহার সর্ব্বাঙ্গ জ্বলিতে থাকিত। তবে একটা জিনিস ছিল তাহার স্বভাবতঃ কোমল ভদ্র হৃদয়। এইখানে সে নর-নারী নির্ব্বিশেষে প্রাণীমাত্রকেই অত্যন্ত ভালবাসিত, কাহাকেও কোন কারণেই ব্যথা দিতে তাহার বাধিত। তাহার এই একটি দুর্ব্বলতাই যে ভারতীকে অপরাধী জানিয়াও শেষ পর্য্যন্ত শাস্তি দিতে দেয় নাই এ সংবাদ তাহার অগোচর ছিল না। কিন্তু পুরুষের যৌবন-চিত্ততলে আরও যে অনেক প্রকারের দুর্ব্বলতা একান্ত সংগোপনে বাস করে, সেই খবরটাই আজও তাহার কাছে পৌঁছে নাই। এই ক্রীশ্চান মেয়েটিকে কোনদিন কঠিন দণ্ড দেওয়া যে তাহার পক্ষে একেবারেই অসম্ভব ইহা সত্য না হইতে পারে, কিন্তু নারীর প্রতি তাহার বিমুখতা সত্য বলিয়াই যে মন তাহার ভারতীকেও অনায়াসে চিরদিন দূরে সরাইয়া রাখিতে পারিবে তাহাও তেমনিই সত্য না হইতে পারে। অথচ আজ যে সেই নিষ্ঠুর মিথ্যাচারিণী রমণীর প্রতি তাহার বিরাগ ও বিদ্বেষের অবধি ছিল না, এ কথাও ত তাহার অন্তর্য্যামী দেখিতেছিলেন।

 দিন পনর হইল সে ভামোর আসিয়াছে। এখানকার কাজ তাহার একপ্রকার সমাধা হইয়াছে, কাল-পরশু তাহার মিক্‌থিলা রওনা হইবার কথা। সন্ধ্যার পরে আজ আফিস হইতে ফিরিয়া নিজের ঘরের বারান্দায় বসিয়া সে মনে মনে একটা অত্যন্ত জটিল সমস্যার সমাধানে নিযুক্ত ছিল। নারীর স্বাধীনতার প্রসঙ্গে মন তাহার কোনকালেই সায় দিতে চাহিত না। ইহাতে মঙ্গল নাই, ইহা ভাল নয়—তাহার রুচি ও আজন্ম সংস্কার এ কথা অনুক্ষণ তাহার কানে কানে বলিত। অথচ, শাস্ত্রীয় অনুশাসনগুলার মধ্যেও যে ইহাদের প্রতি গভীর অবিচার নিহিত আছে এ সত্য তাহার ন্যায়নিষ্ঠ চিত্ত কিছুতেই অস্বীকার করিতে পারিত না। ইহাতে সে দুঃখ পাইত, কিন্তু পথ পাইত না। অকস্মাৎ, আজ এই দ্বিধা তাহার যে কারণে একেবারে কাটিয়া গেল তাহা এইরূপ—

 যে দ্বিতল ঘরটিতে সে বাসা লইয়াছে তাহার নীচের তলায় একটি ব্রহ্মদেশীয় ভদ্রলোক সপরিবারে বাস করিতেছিলেন। সকালে অফিসে যাইবার পূর্ব্বে তাঁহার সংসারে এক বিষম অনর্থ ঘটে। তাঁহার চার কন্যা, সকলেই বিবাহিতা। কি একটা উৎসব উপলক্ষ্যে জামাতারা সকলেই আজ উপস্থিত হইয়া ছিলেন। ভোজের সমর সম্ভ্রম ও ইজ্জত লইয়া প্রথমে মেয়েদের মধ্যে এবং অনতিকাল পরেই বাবাজীবনদের মধ্যে লাঠালাঠি রক্তারক্তি বাঁধিয়া যায়, অপূর্ব্ব খবর লইতে গিয়া হতবুদ্ধি হইয়া শুনিল যে, ইহাদের একজন মাদ্রাজের চুলিয়া মুসলমান, একজন চট্টগ্রামের বাঙালী-পর্ত্তুগীজ, একজন এ্যাংলো-ইণ্ডিয়ান সাহেব এবং ছোট জামাতাটি চীনা, কয়েক পুরুষ হইতে এই সহরেই বাস করিয়া চামড়ার কারবার করিতেছেন। এইরূপ পৃথিবীসুদ্ধ জাতির শ্বশুর হইবার গৌরব অন্যত্র দুর্ল্লভ হইলেও এখানে অতিশয় সুলভ। তত্রাচ, প্রতিবারেই নাকি ভদ্রলোক সভয়ে প্রতিবাদ করিয়াছিলেন, কিন্তু মেয়েদের অপ্রতিহত স্বাধীনতা তাহাতে কান পর্য্যন্ত দেয় নাই। এক একদিন এক-একটি কন্যাকে বাটীর মধ্যে খুঁজিয়া পাওয়া গেল না, আবার এক-একদিন করিয়া তাহারা ফিরিয়া আসিল এবং সঙ্গে আসিল এই বিচিত্র জামাইয়ের দল। তাদের ভাষা আলাদা ভাব আলাদা, ধর্ম্ম আলাদা, মেজাজ আলাদা,—শিক্ষা, সংস্কার কাহারও সহিত কাহারও এক নয়,—এই যে দেশের মধ্যে ভারতের হিন্দু-মুসলমান প্রশ্নের মত ধীরে ধীরে এক অতি কঠিন সমস্যার উদ্ভব হইতেছে ইহার মীমাংসা হইবে কি করিয়া? ক্ষোভে, দুঃখে, ক্রোধে, বিরক্তিতে সে মনে মনে লাফাইতে লাগিল, এবং মেয়েদের এই সামাজিক স্বাধীনতাকেই একশবার করিয়া বলিতে লাগিল, এ হইতেই পারে না, এখন কিছুতেই চলিবে না। বর্ম্মা নষ্ট হইতেছে, ইউরোপ উচ্ছন্ন যাইতে বসিয়াছে—সেই ধার করা ভ্যতা আমাদের দেশেও আমদানী করিলে আমরা সমূলে মরিব। আমাদের সমাজ যাঁহারা গড়িয়াছিলেন, নারীকে তাঁহারা চিনিয়াছিলেন, তাই ত এই সতর্ক বিধি-নিষেধ। ইহা কঠোর হউক, কিন্তু কল্যাণে পরিপূর্ণ। এ দুর্দ্দিনে যদি না তাঁহাদের অসংশয়ে ধরিয়া থাকিতে পারি ত মৃত্যু হইতে কেহই আমাদের বাঁচাইতে পারিবে না। এমনি ধারা কত কি সে সেই অন্ধকারে একাকী বসিয়া আপন মনে বলিয়া চলিতে লাগিল। কিন্তু হায় রে! সোজা কথাটা তাহার মনে একবারও উদয় হইল না যে, যে মুক্তিমন্ত্রকে সে এ-জীবনে একমাত্র ব্রত বলিয়া কায়-মনে গ্রহণ করিতে চাহিতেছে, তাহারই আর এক মূর্ত্তিকে সে দুই হাতে ঠেলিয়া মুক্তির সত্যকার দেবতাকেই সসম্মানে দূর করিয়া দিতেছে। মুক্তি কি তোমার এমনই ছোট্ট একটুখানি জিনিস? তাহাকে কি তোমার আরামে চোখ বুজিয়া স্নান করিবার চৌবাচ্চা স্থির করিয়া বসিয়া আছ? সে সমুদ্র—আছেই ত তাহাতে ভয়, আছেই ত তাহাতে উত্তাল তরঙ্গ, আছেই ত তাহাতে কুমীর হাঙর! তরী সেইখানেই ডোবে,—তবু সেইখানেই আছে জগতের প্রাণ,—তারই মধ্যে আছে সকলশক্তি, সকল সম্পদ, সকল সার্থকতা! নিরাপদ পুকুর লইয়া কেবলমাত্র প্রাণ ধারণ করাটুকুই চলে, বাঁচা চলে না!

 বাবুজী, আপনার খাবার তৈরি!

 অপূর্ব্ব চকিত হইয়া কহিল, রামশরণ, একটা আলো নিয়ে আয়। কাল সকালের গাড়িতেই আমরা মিক্‌থিলা যাবো। ম্যানেজারকে একটা খবর দে।

 আরদালি কহিল, কিন্তু আপনার যে পরশু যাবার কথা ছিল?

 না, আর পরশু নয়, কালই,—একটা আলো দিয়ে যা, এই বলিয়া অপূর্ব্ব এ সম্বন্ধে আলোচনা বন্ধ করিয়া দিল। সমাজের মধ্যে মেয়েদের স্বাধীনতার একটা নূতন দিক দেখিয়া মন তাহার উদ্ভ্রান্ত হইয়া উঠিয়াছিল; কিন্তু আরও যে দিক আছে যাহার বর্ণ ও আলো সমস্ত গগন উদ্ভাসিত করিয়া তুলিতে পারে, এ দৃশ্য আজ তাহার মনে স্বপ্নেও উদয় হইল না।

 পরদিন যথাসময়ে সে মিক্‌থিলার উদ্দেশে যাত্রা করিল। কিন্তু এখানে আসিয়া তাহায় মন টিকিল না। দেশী ও বিলাতি পল্টনের ছাউনি আছে, বাঙালী অনেকগুলি সপরিবারে বাস করিতেছেন—খাসা সহর, নূতন লোকের পক্ষে দেখিয়া বেড়াইবার অনেক বস্তু আছে, কিন্তু এ-সকল তাহার ভাল লাগিল না। মনটা রেঙ্গুনের জন্য কেবলই ছট্‌ফট্ করিতে লাগিল। ভামোয় থাকিতে রিডাইরেক্ট করা মায়ের একখানা পত্র সে পাইয়াছিল, রামদাসেরও গোটা-দুই চিঠি তাহার আসিয়াছিল, কিন্তু সেও প্রায় দশ-বারো দিন পূর্ব্বে। রামদাস জানাইয়াছিল তাহার ফিরিয়া না আসা পর্য্যন্ত বাসা বদল করিবার প্রয়োজন নাই এবং সে নিজে গিয়া দেখিয়া শুনিয়া আসিয়াছে, তেওয়ারীজী সুখে এবং শান্তিতে বাস করিতেছে। কিন্তু ইতিমধ্যে সে কেমন আছে, তাহার সুখ-শান্তি বজায় আছে, কিংবা দুইই অন্তর্হিত হইয়াছে—কোন খবরই তাহাকে দেওয়া হয় নাই। খুব সম্ভব সমস্তই ঠিক আছে, ব্যাঘাত কিছুই হয় নাই, কিন্তু তবু একদিন সে ভামোর মতই হঠাৎ জিনিসপত্র বাঁধিয়া স্টেশনের জন্য গাড়ি ডাকিতে হুকুম করিয়া দিল। এই স্থানটাকে মনে রাখিবার মত কিছুই তাহার ঘটে নাই। যৎসামান্য কাজ-কর্ম্মের মধ্যে বিশেষত্ব কিছুই ছিল না, কিন্তু ছাড়িয়া যাইবার মিনিট পনর পূর্ব্বে স্টেশনে আসিয়া এমন একটা ব্যাপার ঘটিল যাহা আপাততঃ সামান্য ও সাধারণ বোধ হইলেও ভবিষ্যতে বহুদিন তাহাকে স্মরণ করিতে হইয়াছে। একজন মাতাল বাঙালীর ছেলেকে রেলের লোক ট্রেন হইতে নামাইয়াছে। পরণে তাহার মলিন ও ছিন্ন হ্যাটকোট প্রভৃতি বিলাতি পোষাক। সঙ্গে কেবল একটা ভাঙা বেহালার বাক্স, না আছে বিছানা, না আছে কিছু। টিকিটের পয়সায় সে মদ কিনিয়া খাইয়াছে। এইমাত্র তাহার অপরাধ। বাঙালীর ছেলে পুলিশে লইয়া যায়,—অপূর্ব্ব তাহার ভাড়া চুকাইয়া দিল, আরও গোটা-পাঁচেক টাকা তাহার হাতে দিয়া তাড়াতাড়ি সরিয়া পড়িতেছিল, হঠাৎ সে হাতজোড় করিয়া কহিল, মশাই, আমার এই বেহালাখানা আপনি নিয়ে যান, বিক্রী করে টাকাটা আপনার কেটে নিয়ে বাকী আমাকে ফিরিয়ে দেবেন। তাহার কণ্ঠস্বরের জড়িমা সত্ত্বেও ইহা বুঝা গেল সে সজ্ঞানেই কথা কহিতেছে।

 অপূর্ব্ব কহিল, কোথায় ফিরিয়ে দেবো?

 সে কহিল, আপনার ঠিকানা বলে দিন, আপনাকে চিঠি লিখে জানাব।

 অপূর্ধ্ব কহিল, তোমার বেহালা তোমার থাক বাপু, ও আমি বিক্রী করতে পারবো না। আমার নাম অপূর্ব্ব হালদার, রেঙ্গুনের বোথা কোম্পানীতে চাকরি করি, যদি কখনো তোমার সুবিধে হয় টাকা পাঠিয়ে দিয়ো।

 সে ঘাড় নাড়িয়া কহিল, আচ্ছা মশাই নমস্কার—আমি নিশ্চয়ই পাঠিয়ে দেব। বার হবার পথ বুঝি এই দিকে? বেশ বড় সহর, না? বোধ হয় সব জিনিসই পাওয়া যায়। বাস্তবিক মশায়, আপনার দয়া আমি কখনো ভুলব না। এই বলিয়া সে আর একটা নমস্কার করিয়া বেহালার বাক্স বগলে চাপিয়া চলিয়া গেল। তাহার চেহারাটা এইবার অপূর্ব্ব লক্ষ্য করিয়া দেখিল। বয়স বেশি নয়, কিন্তু ঠিক কত বলা শক্ত। বোধ হয় সর্ব্বপ্রকার নেশার মাহাত্ম্যে বছর দশেকের ব্যবধান ঘুচিয়া গেছে। বর্ণ গৌর, কিন্তু রৌদ্রে পুড়িয়া তামাটে হইয়াছে; মাথায় রুক্ষ লম্বা চুল কপালের নীচে ঝুলিতেছে, চোখের দৃষ্টি ভাষা ভাষা, নাক খাঁড়ার মত সোজা এবং তীব্র। দেহ শীর্ণ, হাতের আঙ্গুলগুলো দীর্ঘ এবং সরু— সমস্ত দেহ ব্যাপিয়া উপবাস ও অত্যাচারের চিহ্ন আঁকা। সে চলিয়া গেলে অপূর্ব্বর কেমন যেন একটা কষ্ট হইতে লাগিল। তাহাকে আর অধিক টাকা দেওয়া বৃথা এমন কি অন্যায় একথা সে বুঝিয়াছিল, কিন্তু আর কোন কিছু একটা উপকার করা যদি সম্ভব হইত! কিন্তু এ লইয়া চিন্তা করিবার আর সময় ছিল না, তাহাকে টিকিট কিনিয়া গাড়ির জন্য প্রস্তুত হইতে হইল।

 পরদিন রেঙ্গুনে যখন সে পৌঁছিল তখন বেলা বারোটা। যেমন কড়া রৌদ্র তেমনি গুমোট গরম। তাহার উপর বিপদ এই হইয়াছিল যে, তাড়াতাড়ি ও অসাবধানে তাহার খাবারের পাত্রটা মুসলমান কুলি ছুঁইয়া ফেলিয়াছিল। স্নান নাই, আহার নাই—ক্ষুধায় তৃষ্ণায় ক্লান্তিতে তাহার দেহ যেন টলিতে লাগিল। কোন মতে বাসায় পৌঁছিয়া স্নান করিয়া এইবার শুইতে পাইলে যেন বাঁচে। ঘোড়ার গাড়ি ভাড়া হইয়া আসিলে জিনিসপত্র বোঝাই দিয়া বাসার সম্মুখে আসিয়া দাঁড়াইতে মিনিট- দশেক মাত্র লাগিল। কিন্তু উপরের দিকে চাহিয়া তাহার ক্রোধের অবধি রহিল না। তেওয়ারীর কোন উৎকণ্ঠাই নাই, রাস্তার দিকে বারান্দার কবাটটা পর্য্যন্ত খোলে নাই, গাড়ির শব্দে একবার নামিয়াও আসিল না। দ্রুতপদে উঠিয়া গিয়া দ্বারের উপরে সজোরে করাঘাত করিয়া ডাকিল, তেওয়ারী! ওরে ও তেওয়ারী! ক্ষণকাল পরে আস্তে, অত্যন্ত সাবধানে কবাট খুলিয়া গেল। ক্রুদ্ধ অপূর্ব্ব ঘরের মধ্যে পা বাড়াইবে কি, বিস্ময়ে অবাক ও হতবুদ্ধি হইয়া গেল। সুমুখে দাঁড়াইয়া ভারতী। তাহার এ কি মূর্ত্তি! পায়ে জুতা নাই, পরণে একখানি কালো রঙের শাড়ি, চুল শুক্‌নো এলো-মেলো, মুখের উপর শান্ত গভীর বিষাদের ছায়া—এ যেন কোন বহুদূরের তীর্থযাত্রী, রোদে পুড়িয়া, জলে ভিজিয়া, অনাহারে অনিদ্রায় রাত্রি-দিবা পথ চলিয়াছে—যে কোন মুহূর্ত্তেই পথের ’পরে পড়িয়া মরিতে পারে। ইহার প্রতি কেহ যে কোনদিন রাগ করিতে পারে অপূর্ব্ব মনে করিতেই পারিল না। ভারতী মাথা নোয়াইয়া একটু নমস্কার করিয়া আস্তে আস্তে বলিল, আপনি এসেচেন, এবার তেওয়ারী বাঁচবে।

 ভয়ে অপূর্ব্বর স্বর জড়াইয়া গেল, কহিল, কি হয়েছে তার?

 ভারতী তেমনি মৃদুকণ্ঠে বলিল, এদিকে অনেকের বসন্ত হচ্ছে, তারও হয়েছে। কিন্তু আপনি ত এখন এত পরিশ্রমের পনে এঘরে ঢুকতে পাবেন না। উপরের ঘরে চলুন, ঐখানে বরঞ্চ স্নান করে একটু জিরিয়ে নীচে আসবেন। তাছাড়া ও ঘুমোচ্ছে, জাগলে আপনাকে খবর দেব।

 অপূর্ব্ব আশ্চর্য্য হইয়া কহিল, উপরের ঘরে?

 ভারতী বলিল, হাঁ। ঘরটা এখনো আমাদের আছে, কিন্তু আমি চলে গেছি। বেশ পরিষ্কার করা আছে, কলে জল আছে, কেউ নেই, আপনার কষ্ট হবে না, চলুন। কিন্তু আপনার লোকজন এই? সঙ্গের জিনিসপত্রগুলো তারা ওইখানেই নিয়ে আসুক।

 কিন্তু তাদের ত আমি স্টেশন থেকে ছেড়ে দিয়েছি। তারাও ত আমারি মত ক্লান্ত হয়েছিল।

 ভারতী কহিল, তা বটে, কিন্তু এখন কি কুলি পাওয়া যাবে? আচ্ছা, দেখি।

 আপনাকে দেখতে হবে না, আমিই দেখচি। ওই কটা জিনিস আমি নিজেই আনতে পারবো, বলিয়া অপূর্ব্ব নীচে যাইতেছিল, গাড়োয়ান মুখ বাড়াইয়া ভাড়া চাহিল। ভারতী তাহাকে ইসারায় উপরে ডাকিয়া কহিল, এখন ত লোক পাওয়া যাবে না, তুমি যদি একটু কষ্ট করে জিনিসগুলো তুলে দিয়ে যাও তোমাকে তার দাম দেব। তাহার স্নিগ্ধ কথায় খুশী হইয়া গাড়োয়ান জিনিস আনিতে গেল।

 সমস্ত আসিয়া পড়িলে ভারতী পথের দিকের ঘরটার মেঝের উপর পরিপাটি করিয়া নিজের হাতে বিছানা করিয়া দিয়া কহিল, এইবার, স্নান করে আসুন।

 অপূর্ব্ব কহিল, সমস্ত ব্যাপারটা আগে আমাকে খুলে বলুন।

 ভারতী কলের ঘরটা দেখাইয়া দিয়া মাথা নাড়িয়া বলিল, না, আগে স্নান করে আপনার সন্ধ্যে-আহ্নিকগুলো সেরে আসুন।

 অপূর্ব্ব জিদ্ করিল না। খানিক পরে সে স্নান প্রভৃতি সারিয়া আসিলে ভারতী একটু হাসিয়া বলিল, আপনার এই গেলাসটা নিন, জানালায় উপরে কাগজে মোড়া ওই চিনি আছে নিয়ে আমার সঙ্গে কলের কাছে আসুন, কি করে সরবৎ তৈরি করিতে হয় আমিই শিখিয়ে দিই। চলুন।

 অধিক বলার প্রয়োজন ছিল না, তৃষ্ণায় তাহার বুক ফাটিতেছিল, সে নির্দ্দেশ মত সরবৎ তৈরি করিয়া পান করিল এবং একটু নেবুর রস হইলে আরও ভাল হইত তাহা নিজেই কহিল।

 ভারতী বলিল, আপনাকে যে আরও একটা দুঃখ আমাকে দিতে হবে, বলিয়া সে মুখের দিকে চাহিয়া রহিল।

 অপূর্ব্বর সেই ছুটির দিনের কথাবার্ত্তা কাজ-কর্ম্মের ধরণ-ধারণ মনে পড়িয়া নিজেরও কথা কথা যেন সহজ হইয়া পড়িল, জিজ্ঞাসা করিল, কি রকম দুঃখ?

 ভারতী কহিল, নীচে থেকে আমি কয়লা এনে রেখেচি, টেলিগ্রাম পেয়ে সুমুখের বাড়ির উড়ে ছেলেটিকে দিয়ে আপনার সেই লোহায় উনুনটি মাজিয়ে ধুইয়ে নিয়েচি, চাল আছে, ডাল আছে, আলু, পটল, ঘি, তেল, নুন, সমস্ত মজুত আছে,—পেতলের হাঁড়িটা এনে দিচ্চি। আপনি শুধু একটু জল দিয়ে ধুয়ে নিয়ে চড়িয়ে দেবেন এই বলিয়া সে মুখের দিকে চাহিয়া রহিল।

শক্ত কাজ নয়। আমি সমস্ত দেখিয়ে দেব, আপনি শুধু চড়াবেন আর নামাবেন। আজকের মত এই কষ্টটি করুন, কাল অন্য ব্যবস্থা হবে।

 তাহার কণ্ঠস্বরের ঐকান্তিক ব্যাকুলতা অপূর্ব্বকে হঠাৎ যেন একটা ধাক্কা মারিল। সে ক্ষণকাল মৌন থাকিয়া জিজ্ঞাসা করিল, কিন্তু আপনার খাবার ব্যবস্থা কি রকম হয়? কখন বাসায় যান?

 ভারতী কহিল, বাসায় নাই গেলাম, কিন্তু আমাদের খাবার ভাবনা আছে নাকি? এই বলিয়া সে কথাটা উড়াইয়া দিয়া প্রয়োজনীয় জিনিসগুলি আনিতে তাড়াতাড়ি নীচে নামিয়া গেল।

 ঘণ্টাখানের পরে অপূর্ব্ব রাঁধিতে বসিলে সে ঘরের চৌকাঠের বাহিরে দাঁড়াইয়া কহিল, এখানে দাঁড়ালে দোষ হয় না তা’ জানেন ত?

 অপূর্ব্ব কহিল, জানি, কারণ, হলে আপনি দাঁড়াতেন না। জীবনে সে এই প্রথম রাঁধিতে বসিয়াছে, অপটু হস্তের সহস্র ত্রুটিতে মাঝে মাঝে ভারতীর ধৈর্য্যচ্যুতি হইতে লাগিল, কিন্তু রাঁধা ডাল বাটিতে ঢালিতে গিয়া যখন বাটি ছাড়া আর সর্ব্বত্রই ছড়াইয়া পড়িল তখন সে আর সহিতে পারিল না। রাগ করিয়া হঠাৎ বলিয়া ফেলিল, আচ্ছা, আপনাদের মত অকর্ম্মা লোকগুলোকে কি ভগবান সৃষ্টি করেন শুধু আমাদের জব্দ করতে? খাবেন কি করে বলুন ত?’

 অপূর্ব্ব নিজেই অপ্রতিভ হইয়াছিল, কহিল, এ যে হাঁড়ির ওদিক দিয়ে না পড়ে এদিক দিয়ে গড়িয়ে পড়বে কি করে জানব বলুন? আচ্ছা, ওপর থেকে একটু তুলে নেব?

 ভারতী হাসিয়া ফেলিয়া বলিল, নেবেন বই কি! নইলে আর বিচার থাকবে কি করে! নিন উঠুন, জল দিয়ে ওসব ধুয়ে ফেলে দিয়ে এই আলু-পটলগুলো তেল আর জল দিয়ে সেদ্ধ করে ফেলুন। গুঁড়ো মশলা ওই শিশিটাতে আছে, নুন দেবার সময়ে আমি না হয় দেখিয়ে দেব—তরকারী বলে ওই দিয়ে আজ আপনাকে খেতে হবে। ভাতের ফ্যান ত সব ভাতের মধ্যেই আছে, নেহাৎ মন্দ হবে না। আঃ— দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আপনার রান্না দেখার চেয়ে বরং নরক ভোগ ভাল।

 ইহার ঘণ্টা-দেড়েক পরে অপূর্ব্বর আহার শেষ হইলে সে কৃতজ্ঞতার আবেগ দমন করিয়া শান্ত মৃদুকণ্ঠে কহিল, আপনাকে আমি যে কি বলব ভেবে পাইনে, কিন্তু এবার আপনি বাসায় যান। এখন থেকে আমিই দেখতে পারবো, আর আপনাকে বোধ হয় এত দুঃখ ভোগ করতে হবে না।

 ভারতী চুপ করিয়া রহিল। অপূর্ব্ব নিজেও ক্ষণকাল মৌন থাকিয়া বলিতে লাগিল, কিন্তু ব্যাপারটা আমাকে খুলে বলুন। এদিকে আরও দশজনের বসন্ত হচ্চে তেওয়ারীরও হয়েচে—এ পর্য্যন্ত খুব সোজা। কিন্তু এ বাসা থেকে আপনাদের সবাই চলে গেলে এই নির্ব্বান্ধব দেশে এবং ততোধিক বন্ধুহীন পুরীতে আপনি কি করে যে তার প্রাণ দিতে রয়ে গেলেন এইটেই আমি কোনমতে ভেবে পাইনে। জোসেফ সাহেবও কি আপত্তি করেননি?

 ভারতী কহিল, বাবা বেঁচে নেই, তিনি হাসপাতালেই মারা গেছেন।

 মারা গেছেন? অপূর্ব্ব অনেকক্ষণ স্থিরভাবে বসিয়া থাকিয়া বলিল, আপনার কালো কাপড় দেখে এমনি কোন একটা ভয়ানক দুর্ঘটনা আমার পূর্ব্বেই অনুমান করা উচিত ছিল।

 ভারতী কহিল, তার চেয়েও বড় দুর্ঘটনা হঠাৎ মা যখন মারা গেলেন—

 মা মারা গেছেন? অপূর্ব্ব স্তব্ধ অসাড় হইয়া বসিয়া রহিল। নিজের মায়ের কথা মনে পড়িয়া তাহার বুকের মধ্যে কি একরকম করিতে লাগিল যা কখনো সে পূর্ব্বে অনুভব করে নাই। ভারতী নিজেও জানালার বাহিরে মিনিট-দুই নিঃশব্দে চাহিয়া থাকিয়া অশ্রু সংবরণ করিল। মুখ ঘুরাইতে গিয়া দেখিল অপূর্ব্ব সজলচক্ষে তাহার প্রতি একদৃষ্টে চাহিয়া আছে। আবার তাহাকে জানালার বাহিয়ে চোখ ফিরাইয়া চুপ করিয়া বসিয়া থাকিতে হইল। কাহারো কাছেই অশ্রুপাত করিতে তাহার অত্যন্ত লজ্জা করিত। কিন্তু আপনাকে শান্ত করিয়া লইতেও তাহার বিলম্ব হইত না, মিনিট দুই-তিন পরে ধীরে ধীরে বলিল, তেওয়ারী বড় ভাল লোক। আমার মা অনেকদিন থেকেই শয্যাগত ছিলেন, যে কোন সময়েই তাঁর মৃত্যু হতে পারে আমরা সবাই জানতুম। তেওয়ারী আমাদের অনেক করেচে। আমরা চলে যাবার সময় সে কাঁদতে লাগলো, কিন্তু এত ভাড়া আমি কোথা থেকে দেব?

 অপূর্ব্ব নীরবে শুনিতে লাগিল। ভারতী হঠাৎ বলিয়া উঠিল, আপনায় সেই চুরি ধরা পড়েছে, টাকা, বোতাম পুলিশে জমা আছে আপনি খবর পেয়েচেন?

 কই না!

 হাঁ, ধরা পড়েচে। ওকে যারা সেদিন তামাসা দেখাতে নিয়ে গিয়েছিল তাদেরই দল। আরও কার কার চুরি করার পরে, বোধ হয় ভাগাভাগি নিয়ে বনিবনা না হওয়াতেই একজন সমস্ত বলে দিয়েচে। এক চেঠির দোকানে যা কিছু জমা রেখেছিল পুলিশ সমস্ত উদ্ধার করেছে। আমি একজন সাক্ষী, এইখানে সন্ধান নিয়ে তারা একদিন আমার কাছে উপস্থিত—সেই খবরটা দিতে এসেই ত দেখি এই ব্যাপার। কবে মকদ্দমা ঠিক জানি নে, কিন্তু সমস্ত ফিরে পাওয়া যাবে শুনেছি।

 এই শেষ কথাটা হয়ত সে না বলিলেই পারিত, কারণ লজ্জায় অপূর্ব্বর মুখ শুধু আরক্তই হইল না, এই ব্যাপারে নিজের সেই সকল ব্যক্ত ও অব্যক্ত ইঙ্গিতগুলা মনে করিয়া তাহার গায়ে কাঁটা দিল। কিন্তু ভারতী এ সব লক্ষ্য করিল না, বলিতে লাগিল, ভেতর থেকে দোর বন্ধ, কিন্তু হাজার ডাকাডাকিতেও কেউ সাড়া দিলে না। আমাদের উপরের ঘরের চাবিটা আমার কাছে ছিল, খুলে ভিতরে গেলাম। মেঝেতে আমার একটা প্রসিদ্ধ ফুটো আছে—বলিয়া সে একটুখানি লজ্জার মৃদু হাসি গোপন করিয়া কহিল, তার মধ্যে দিয়ে আপনার ঘরের সমস্ত দেখা যায়, দেখি সমস্ত জানালা বন্ধ, অৎকারে কে একজন আগাগোড়া মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে,—তেওয়ারী বলেই বোধ হ’ল। সেই ফুটো দিয়ে চেঁচিয়ে একশ’বার বললাম, তেওয়ারী, আমি, আমি ভারতী, কি হয়েচে? দোর খোল। নিচে এসে আবার তেমনি ডাকাডাকি করতে লাগলাম, মিনিট-কুড়ি পরে তেওয়ারী হামাগুড়ি দিয়ে এসে কোনমতে দোর খুলে দিলে। তার চেহারা দেখে আমার বলবার কিছু আর রইল না। দিন-চারেক পূর্ব্বে সুমুখের বাড়ির নীচের ঘর থেকে বসন্তরুগী জন-দুই তেলেগু কুলিকে পুলিশের লোকে হাসপাতালে ধরে নিয়ে গিয়েছিল, তাদের কান্না আর অনুনয়-বিনয় তেওয়ারী নিজের চোখেই দেখেচে,—আমার পা দুটো সে দুহাতে চেপে ধরে একেবারে হাউ হাউ করে কেঁদে উঠে বললে, মাইজী! আমাকে পেলেগ হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়ো না, তাহলে আমি আর বাঁচব না। কথাটা মিথ্যে নেহাৎ নয়, ফিরতে কাউকে বড় শোনা যায় না। সেই ভয়ে সে দোর জানালা দিবারাত্রি বন্ধ করে পড়ে আছে—পাড়ায় কেউ ঘুণাক্ষরে জানলে আর রক্ষে নেই।

 অপূর্ব্ব অভিভূতের ন্যায় তাহার মুখের দিকে চাহিয়া ছিল, কহিল, আর সেই থেকে আপনি একলা দিনরাত আছেন—আমাকে একটা খবর পাঠালেন না কেন? আমাদের আফিসের তলওয়ারকরবাবুকে ত জানেন। তাঁকে বলে পাঠালেন না কেন? ভারতী কহিল, কে যাবে? লোক কই? ভেবেছিলাম, হয়ত খবর নিতে একদিন তিনি আসবেন, কিন্তু এলেন না। এ বিপদ যে ঘটেচে তিনিই বা কি করে ভাববেন? তা ছাড়া জানাজানি হয়ে যাবার ভয় আছে।

 তা বটে। বলিয়া অপূর্ব্ব একটা দীর্ঘশ্বাস মোচন করিয়া নিস্তব্ধ হইয়া বসিয়া রহিল। অনেকক্ষণ পরে কহিল, আপনার নিজের চেহারা কি হয়ে গেছে দেখেচেন?

 ভারতী একটু হাসিয়া বলিল, অর্থাৎ এর চেয়ে আগে ঢের ভাল ছিল?

 অপূর্ব্বর মুখে সহসা এ কথার উত্তর যোগাইল না, কিন্তু তাহার দুই চোখের মুগ্ধ দৃষ্টি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার গঙ্গাজল দিয়া যেন এই তরুণীর সর্ব্বাঙ্গের সকল গ্লানি, সকল ক্লান্তি ধুইয়া মুছিয়া দিতে চাহিল। অনেকক্ষণ পরে কহিল, মানুষে যা করে না, তা আপনি করেচেন, কিন্তু এবার আপনার ছুটি। তেওয়ারী শুধু আমার চাকর নয়, সে আমার বন্ধু, আমার আত্মীয়—তার কোলে-পিঠে চড়ে আমি বড় হয়েছি। এখন থেকে তার রোগে আমিই সেবা করব—কিন্তু তার জন্যে আপনাকে আমি পীড়িত হতে দিতে পারব না। এখনো আপনার স্নানাহার হয়নি, আপনি বাসায় যান। সে কি এখান থেকে বেশি দূরে?

 ভারতী মাথা নাড়িয়া কহিল, আচ্ছা। বাসা আমার তেলের কারখানার পাশে, নদীর ধারে। আমি কাল আবার আসবো। দুইজনে নীচে নামিয়া আসিল; তালা খুলিয়া উভয়ে ঘরে প্রবেশ করিল। তেওয়ারীর সাড়া নাই, ঘুম ভাঙ্গিলেও সে অধিকাংশ সময় অজ্ঞান আচ্ছন্নের মত পড়িয়া থাকে। অপূর্ব্ব গিয়া তাহার বিছানার পাশে বসিল এবং যে দুই-চারিটি অপরিষ্কার পাত্র তখনও মাজিয়া ধুইয়া রাখা হয় নাই, সেইগুলি হাতে লইয়া ভারতী স্নানের ঘরে প্রবেশ করিল। তাহার ইচ্ছা ছিল যাইবার পূর্ব্বে রোগীর সম্বন্ধে গোটা কয়েক প্রয়োজনীয় উপদেশ দিয়া এই দুর্দ্দান্ত ভয়ানক রোগের মধ্যে আপনাকে সাবধানে রাখিবার অত্যাবশ্যকতা বারবার স্মরণ করাইয়া দিয়া যায়। হাতের কাজ শেষ করিয়া সে এই কথাগুলিই মনে মনে আবৃত্তি করিয়া এ ঘরে ফিরিয়া আসিয়া দেখিল অপূর্ব্ব অচেতন তেওয়ারীর অতি বিকৃত মুখের প্রতি একদৃষ্টে চাহিয়া যেন পাথরের মূর্ত্তির মত বসিয়া আছে, তাহার নিজের মুখ একেবারে ছাইয়ের মত সাদা। বসন্ত রোগ সে জীবনে দেখে নাই, ইহার ভীষণতা তাহার কল্পনার অগম্য। ভারতী কাছে গিয়া দাঁড়াইতে সে মুখ তুলিয়া চাহিল। তাহার দুই চক্ষু ছলছল করিয়া আসিল এবং সেই চক্ষে পলক না পড়িতেই ঠিক ছেলেমানুষের মতই ব্যাকুলকণ্ঠে বলিয়া উঠিল, আমি পারব না।