পাতা:দেওয়ানা - হরিসাধন মুখোপাধ্যায়.pdf/৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দেওয়ানা

তাহার সুন্দর মুখখানি মীর লতিফের ইচ্ছা সাধিত এই অপমানে লাল হইয়া উঠিল। তাহার প্রাণের মধ্যে একটা অনুশোচনার ঝড় উঠিল। সে ঝড়ের বেগ সে সহিতে পারিল না।

 সে দিন রাত্রে, আনার একটুকুও ঘুমাইতে পারিল না। সমস্ত রাত্রিটা শয্যায় শুইয়া সে খুব কাঁদিল। কান্নাতে তাহার প্রাণের তার যেন অনেকটা কমিয়া গেল। বুকের ভিতর যে ঝড়টা শক্তি সঞ্চয় করিতেছিল— তাহা যেন অন্যদিকে চলিয়া গেল।

 অবশ্য এ কান্নাটা অভিমানের ফল। অভিমানের উদ্ভবক্ষেত্র হইতেছে—ক্রোধ। ক্রোধের মাত্রাটা কমিয়া গেলে,অভিমানটাও সেই সঙ্গে সঙ্গে যেন একটু কমিয়া আসে।

 আনারউন্নিসা মীর লতিফের সেই পত্রখানির কথাগুলি ধীর ভাবে আলোচনা করিয়া, আর নানাদিক দিয়া ভাবিবার পর বুঝিল, মীর লতিফ যাহা বলিয়াছে, তাহাই ঠিক। সে যাহা সংকল্প করিয়াছে, সত্যই তাহা আত্মত্যাগের জ্বলন্ত পরিচয়। পাছে সে আমার ভবিষ্যৎ সুখের পথে অন্তরায় হইয়া পড়ে, এই জন্যই সে দূরে যাইতে চায়। স্মৃতির মৃত্যু ঘটাইতে চায় বলিয়াই সে আমার দৃষ্টির সম্মুখ হইতে সরিয়া গিয়া, তাহার হৃদয়ের সহিত মহাসংগ্রামে প্রস্তুত হইতে উদ্যত।

 যে মীর লতিফকে একটু আগে সে অকৃতজ্ঞ ভাবিয়া মনে মনে খুবই তিরস্কার করিয়াছিল, এখন এইরূপ আলোচনার ফলে, নিজের ভ্রম বুঝিতে পারিয়া, সে নিজেকে বড়ই অপরাধী মনে করিল। সে কেবলমাত্র বলিল— “লতিফ! এত মহৎ তুমি!”

৯৫