পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

করছে। এবং বিভূতিবাবুও ঠিক এমনি পরিবেশেই নিজের আসল শিল্প ক্ষেত্রটিকে খুজে পান। এই পরিবেশে শিল্পীরূপে তিনি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেন। সেইজন্যই শহরের বড় রাস্ত থেকে তিনি গলির ভিতরে প্রবেশ করে শিক্ষকদের অথবা দরিদ্র পাঠ্যপুস্তক-লেখকের প্রকৃত অবস্থার মধ্যে পাঠককে টেনে নিয়ে গেছেন বারবার। এমন কি কারো বা দম-বন্ধকরা রান্নাঘরের মধ্যেও প্রবেশ করে তিনি তার দৈন্তের চেহারাটা উদঘাটিত করেছেন। এজন্য তিনি যদুমাস্টারকে পাড়াগ পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেছেন । শিক্ষকেরা কেউ বা তার হীনতাকে মেনে নিয়েছে, তা নিয়ে কারো বিরুদ্ধে তাদের বিশেষ কোনো অভিযোগ নেই। কেউ ব: তাদের দুরবস্থার প্রতিকার চায় অথচ প্রতিকার আদায়ের সাহস নেই, সামর্থ্য নেই। কত নিচের ধাপে নামলে একজন শিক্ষক ছাত্রের জন্য বাদ পয়সা অথবা খাবার চুরি করতে পারে সে দৃশু অতি করুণ। প্রবীণ নারান মাস্টার সৎ লোক, কিন্তু টিউশন করতে গিয়ে ধনী গৃহিণীর অপমান নীরবে মেনে নেয়, এর প্রধান কারণ ছাত্র চুনির প্রতি তার বাৎসল্যের আকর্ষণ । (এই ঘটনাটি বিভূতিবাবুর তখনকার নিজের অপূর্ণ বাৎসল্যের স্পষ্ট প্রতিফলন। তিনি নিজে ক্লাসঘরে দুএকজন ছাত্রের প্রতি বিষম আকৃষ্ট ছিলেন। সবার সামনে তাদের কাছে ডেকে আপন সস্তানের মতো আদর করতেন। আমাকে সেকথা অনেকবার তিনি বলেছেন। ) স্নেহকাঙাল হৃদয় সর্বত্র এরই সন্ধানে ঘুরে বেড়িয়েছে। কিন্তু এটি তার চরিত্রের একটি দিক মাত্র। দশ দিকের খবর এটা নয়। যেখানে তিনি শিল্পী, সেখানে দেখা যাবে সবার সকল পরিবেশে তার মানসবাস স্থায়ী নয়। যেখানে তার পূর্ণ প্রতিষ্ঠা সে হচ্ছে দীনঙ্গীন হতভাগ্যদের পরিবেশ । অথবা এলোমেলো প্রকৃতিপরিবেশ। এইখানে তিনি তাদের একজন, তাদের পরম আত্মীয়। এই পরিবেশে তিনি পরম নিশ্চিন্ত । হতভাগ্য যদু মুখুজের মতো একটি ট্রাজিক চরিত্র স্বষ্টি বিভূতিবাবুর অসাধারণ ক্ষমতার পরিচয় । এবং সে হতভাগ্য বলেই তা এমন জীবস্ত, এমন human, এমন সফল। সে কোনো অপমানে বিচলিত হয়না, অভাবের জালায় স্ত্রীকে আর এক দরিদ্র আত্মীয়ের বাড়িতে: ফেলে আসে, উদ্ধারের নামও করে না, চিঠি দিলে উত্তর দেয় না। অবনী নামক আর এক হতভাগাকে এর সঙ্গে জুড়ে অদ্ভুত এক লুকোচুরির ছবি আঁকা হয়েছে। যদুমাস্টার যত ট্রাজিক, ততটাই কমিকও ৷ যদুমাস্টার স্মরণীয় চরিত্র। অস্তিমকালে সে চিস্তা করছে : "দুই একটা অন্যায় কাজ, দুই একটা—চুরি ঠিক বলা যায় না—চুরি নয়, তবে ই, একটুআধটু খারাপ কাজ যে না করিয়াছেন এমন নয়। তিনি তাহা স্বীকারই করিতেছেন। ভগবান গরিব মানুষের অপরাধ ক্ষমা করিবেন।” এ অসামান্য সমাপ্তি। এ শুধু যছ মুখুজের নিজের প্রতি করুণা নয়, যদু মুখুজ্জের প্রতি বিভূতিবাক্টও এটি এক উদার করুণা। এই কথা কট পড়ে আমি স্তন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। বিভূতিবাবুর মানুষের প্রতি মমত্ববোধ