পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বলিয়াও বটে, অনেক দিনের খরিদার বলিয়াও বটে। দোকানী বেঞ্চ হইতে অন্য খরিদারদের সরাইয়া দেয়, মাস্টার মহাশয়দের চায়ের প্রকৃতি কিরূপ হইবে, সে সম্বন্ধে খুঁটিনাটি প্রশ্ন করে, দুই-একটি ব্যক্তিগত প্রশ্নও করে আত্মীয়তা করিবার জন্য । অনেক সময় কাছে পয়সা না থাকিলে ধারও দেয় । যদুবাৰু বলিলেন, আমাকে একটু কড়া করে চা দিয়ে আদা দিয়ে। নারাণবাবু বলিলেন, আমার চায়েও একটু আধা দিয়ে তো। সকলের সামনে চা আসিল। সঙ্গে সঙ্গে পাশে একখানি করিয়া টেস্ট দিয়া গেল চায়ের পিরিচে প্রত্যেককে । দোকানীকে বলিতে হয় না, সে জানে, ইহারা কী খাইবেন, আজিকার খরিদার তো নন । স্কুলের হাড়ভাঙা খাটুনির পরে এবং যে যাহার টুইশানিতে যাইবার পূর্বে এখানটিতে বসিয়া আধ ঘণ্টা ধরিয়া চা খাওয়া ও গল্পগুজব প্রত্যেকের পক্ষে বড় আরামদায়ক হয় । বস্তুত মনে হয় যে, সারাদিনের মধ্যে এই সময়টুকুই অত্যন্ত আনন্দের। র্যাহারা চারিট বাঞ্জিবার পূৰ্ব্বে ঘড়ি দেখিতে পাঠান, তাহার। নিজেদের অজ্ঞাতসারে এই সময়টুকুরই প্রতীক্ষা করেন। তবে স্কুলমাস্টার হিসাবে ইহাদের দৃষ্টি সংকীর্ণ, জীবনের পরিধি স্বপ্রশস্ত নয়, স্বতরাং কথাবাৰ্ত্তা প্রতিদিন একই থাত বাহিয়া চলে। সাহেব আজ অমুক ঘণ্টায় অমুকের ক্লাসে গিয়া কী মন্তব্য করিল, অমুক ছেলেট দিন দিন খারাপ হইয়া যাইতেছে, অমুক অঙ্কট। এ ভাবে না করিয়া অন্য ভাবে কী করিয়া ব্ল্যাকবোর্ডে করা গেল ইত্যাদি। ক্ষেত্রবাবু বলিলেন, মাসটাতে ছুটিছাট। একেবারেই নেই, না নারাণবাবু ? —কই আর । সেই ছাবিবশে কী একটা মুসলমানদের পর্ব আছে, তাও যে ছুটি দেবে কি না— —ঠিক দেবে। মিঃ আলম আদায় করে নেলে । —না, এক-আধ দিন ছুটি না হলে আর চলে না। যদুবাবু বলিলেন, ওহে, হাফ কাপ একটা দাও তো। আঞ্জ চাট বেশ লাগচে– চার পয়সার বেশী খরচ করিবার সামর্থ্য কোন মাস্টারেরই নাই চায়ের দোকানে। ৰন্ধুবাবুর এই কথায় দুই-একজন বিস্মিত হইয় তাহার মুখের দিকে চাহিলেন । নারাণবাৰু বলিলেন, কি হে যদু, দমকা খরচ করে ফেললে যে ! —খাই একটু নারাণদা। আর কদিনই বা ! . যদুবাৰু একটু পেটুক ধরনের আছেন, এ কথা স্কুলে সবাই জানে। বাজার হাট ভাল করিয়া করিতে পারেন না পয়সার অভাবে, সামান্য বেতনে বাড়ীভাড়া দিয়া থাকিতে হয়— কোথা হইতে ভাল বাজার করিবেন! তবে নিমন্ত্রণ-আমন্ত্রণ পাইলে সেখানে দুইজনের খাদ্য এক উদরন্থ করেন, স্কুলে ইহা লইয়া নিজেদের মধ্যে বেশ হাসিঠাট্রা চলে। নারাণ্ডুৰুি বয়সে সৰ্ব্বাপেক্ষা প্রবীণ, প্রবীণত্বের দরুণ অপেক্ষাকৃত বয়কেনিষ্ঠদের প্রক্তি