পাতা:সংবাদপত্রে সেকালের কথা প্রথম খণ্ড.djvu/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভূমিকা ২৩ একমাত্র অবলম্বন ছিল। ‘সমাচার দর্পণে এমন অনেক পুস্তকের উল্লেখ আছে যাহার নাম লঙের তালিকায় পাওয়া যাইবে না । ‘সমাচার দর্পণে মাঝে মাঝে পূৰ্ব্ব বৎসরে প্রকাশিত পুস্তকের তালিকা মুদ্রিত হইত। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস-লেখকের নিকট এ-সকল তালিকার মূল্য খুব বেশী। ১৮২৫, ১৮২৬ ও ১৮৩৭ সনে যে-তিনটি তালিকা প্রকাশিত হইয়াছিল, তাহ ৭৫-৭৭, ৮২-৮৪ ও ৯৫-৯৭ পৃষ্ঠায় উদ্ধৃত হইয়াছে। এই সকল তালিকায় এবং সংবাদে রামমোহন রায়, রাধাকাস্ত দেব, গঙ্গাকিশোর ভট্টাচাৰ্য্য, প্রাণকৃষ্ণ বিশ্বাস, নীলরত্ন হালদার প্রভৃতি লিখিত অনেকগুলি বইয়ের নাম পাওয়া যায়। ৬৪ পৃষ্ঠায় উদ্ধৃত অংশে বাঙালী কর্তৃক লিখিত প্রথম ইংরেজী কাব্যের সংবাদ দেওয়া হইয়াছে, এবং সম্পাদক এই প্রসঙ্গে এদেশে ইংরেজী ভাষার প্রসার সম্বন্ধে আলোচনা করিয়াছেন । ইহা হইতে আমরা জানিতে পারি যে পূৰ্ব্ব যুগের তুলনায় ১৮২০ হইতে ১৮৩০ সনে এদেশে ইংরেজী ভাষাজ্ঞানের অনেক বেশী বিস্তার হইয়াছিল । সাহিত্য-বিভাগের শেষে ৯৭-১০৪ পৃষ্ঠায় সে-যুগের সাময়িক পত্র সম্বন্ধে ‘সমাচার দর্পণে যে-সকল সংবাদ প্রকাশিত হইয়াছিল তাহ উদ্ধৃত হইয়াছে। তাহা হইতে বাংলা, উর্দু, ফারসী, হিন্দী ও ইংরেজী ভাষায় প্রকাশিত অনেকগুলি সংবাদপত্রের নাম পাওয়া যায়। ইহার মধ্যে ‘সম্বাদ কৌমুদী,’ ‘সমাচার চন্দ্রিক,’ ‘সম্বাদ তিমিরনাশক প্রভৃতি বিখ্যাত বাংলা পত্রিকার, প্রথম হিন্দী সংবাদপত্র ‘উদন্ত মাৰ্ত্তণ্ডের, এবং কয়েক জন হিন্দুযুবক কর্তৃক প্রকাশিত ও ডিরোজিও কর্তৃক সম্পাদিত ইংরেজী কাগজ ‘পার্থিননে’র নাম আছে । এই সমাচারপত্রগুলির সঠিক প্রকাশকাল পূর্বে আমাদের জানা ছিল না । এই পুস্তকের তৃতীয় বিভাগের নাম দেওয়া হইয়াছে ‘সমাজ । কিন্তু উহাতে কেবল সামাজিক আচার-ব্যবহার ভিন্ন অন্যান্য বহু বিষয়েরও সংবাদ পাওয়া যাইবে । আমি এই সব তথ্যকে মোটামুটি এই সাতটি ভাগে বিন্যস্ত করিয়াছি—নৈতিক অবস্থা, আমোদ-প্রমোদ, জনহিতকর অনুষ্ঠান, আর্থিক অবস্থা, শাসন, স্বাস্থ্য, এবং সম্রাস্ত ব্যক্তি । ইহার প্রত্যেকটির সম্বন্ধেই কিছু বলা প্রয়োজন। ‘নৈতিক অবস্থা’ এই শিরোনামা দিয়া আমি যে-সংবাদগুলি একত্র করিয়াছি উহাতে উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে বাঙালী-জীবনের ধারা কি ভাবে চলিতেছিল তাহার পরিচয় পাওয়া যাইবে । যেমন শিক্ষায় তেমনই সমাজেও সেই যুগ নূতনত্বের যুগ। ইংরেজী শিক্ষা ও আচার-ব্যবহারের প্রভাবে তখন বাঙালীর আচারব্যবহারেরও একটু একটু পরিবর্তন হইতে আরম্ভ করিয়াছে। কাহারও এই পরিবর্তন ভাল লাগিত, কাহারও আবার তাহা ভাল লাগিত না । র্যাহাদের ভাল লাগিত না তাহারা নববাবুদের চলাফেরা লইয়া পরিহাস করিতেন, আবার নব্যপন্থীরাও পুরাতনপন্থীদের উপর ঝাল ঝাড়িতে ছাড়িতেন না। এইরূপ অনেকগুলি সামাজিক ব্যঙ্গ বা রঙ্গ চিত্র এই খণ্ডের ১০৮-২৮ পৃষ্ঠায় সন্নিবেশিত হইয়াছে। এগুলি হইতে জানা যাইবে যে টেকচাঁদ ঠাকুরের ‘আলালের ঘরের দুলাল’ হইতেই বাংলা ভাষায় সামাজিক