পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অমুকৰ্ত্তন সেই আমলের লোক, না দাদা ? নারাণবাবু বলেন, আমি তারও কত আগের। তুমি আর যদু এসেচ এই আঠারো বছর, আমি তারও বারো বছর আগে থেকে এখানে। অল্পকৃলবাবুতে আমাতে মিলে স্কুল গড়ি। ক্ষেত্রবাবু বলেন, আপনারা গড়লেন স্কুল, এখন কোথা থেকে মি: আলম আর সাহেব এসে নবাবী করচে দেখ। নারাণবাবু বলেন, আমি কিছু নই, অমুকুলবাবু গড়েন স্কুল। তার মত ক্ষমতা যার-তার থাকে না। অমুকুলবাবুর মত লোক হচ্ছে এই সাহেব। সত্যিকার ডিউটিফুল হেডমাস্টার হিসেবে সাহেব অল্পকৃলবাবুর জুড়িদার। লেখাপড়া শেখে সবাই, কিন্তু অন্যকে শেখানো সবাই পারে না। যে পারে, তাকে বলে টীচার। তুমি আমি টীচার নই–টচার ছিলেন অম্বকুলবাবু, টীচার হল এই সাহেব। হেডপণ্ডিত বলেন, না, দাদা, আপনি টীচার নিশ্চয়ই । আমরা না হতে পারি— নারাণবাবু বলেন, অত সহজে টীচার হয় না। এই শুনবে তবে অম্বকুলবাবুর দু-একট। ঘটনা ? একবার একটা ছেলে এল, তার বাবা বৰ্খায় ডাক্তারি করে, দু’পয়সা পায়। ছেলেটাকে আমাদের স্কুলে দিয়ে গেল বাংলা শিখবে বলে। বৰ্ম্মী ভাষা জানে, বাংলা ভাল শেখে নি। পয়সাওলা লোকের ছেলে, বদমাইশও খুব । স্কুল পালায়, বাবা মোটা টাকা পাঠায়—সেই টাকায় থিয়েটার দেখে, হোটেলে খায়, পড়াশুনোয় মন দেয় না। —এখানে থাকে কোথায় ? —থাকে তার আত্মীয়-বাড়ী। সেই ছেলের জন্যে অমুকুলবাবুকে রাতের পর রাত বসে ভাবতে দেখেচি। অামায় বললেন—নারাণ, মারধোর বা বকুনিতে ওকে ভাল করা যাবে না। উপায় ভাবচি। তারপর ভেবে করলেন কী, রোজ সেই ছেলেটাকে সঙ্গে নিয়ে বেড়াতে বার হতেন আর মুখে মুখে গল্প করতেন পাপের দুর্দশা, অধঃপতনের ফল—এই সব সম্বন্ধে। গল্প নিজেই বসে বসে বানাতেন রাত্রে। আমায় আবার শোনাতেন পয়েণ্টগুলো । সেই ছেলে ক্রমে শুধরে উঠল, ম্যাট্রিক পাস করে বেরুল । তার বাবা এসে অহুকুলবাবুকে একটা সোনার ঘড়ি দেয় ছেলে পাস করলে। অল্পকৃলবাধু ফিরিয়ে দিয়ে বললেন, আমায় এ কেন দিচ্ছেন ? আমার একার চেষ্টায় ও পাস করে নি, আমার স্কুলের অন্যান্য মাস্টারের কৃতিত্ব না থাকলে আমি এক কী করতে পারতাম ? তা ছাড়া, আমি কৰ্ত্তব্য পালন করেছি, ভগবানের কাছে আপনার ছেলের জন্তে আমি দায়ী ছিলাম, কারণ আমার স্কুলে তাকে ভত্তি করেছিলেন। সে দায়িত্ব পালন করেচি, তার জন্যে কোন পুরস্কারের কথা ওঠে না।– আজকাল ক’জন শিক্ষক তাদের ছাত্রের সম্বন্ধে একথা ভাবেন বলুন দিকি ? অাদর্শ শিক্ষক বলতে যা বোঝায়, তা ছিলেন তিনি। আমাদের সাহেবকে দেখি, অনেকটা সেইরকম ভাব ওঁর মধ্যে । ক্ষেত্রবাৰু ব্যঙ্গ করিয়া বলিলেন, দাদা, এতক্ষণ অমুকুলবাবুর কথা বলছিলেন বেশ লাগছিল। আবার তার সঙ্গে সুাহেবের নাম করতে যান কেন ?