পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/১০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অম্নবর্তন লাগিল পরস্পর। একটি ছেলে ভয়ে ভয়ে দাড়াইয়া উঠিয়াবলিল, আজ তোপুরনাে পড়ার কথা ছিল না তার ! যন্ধুবাবু দাত খি চাইয়া বলিলেন, পুরনো পড়া আবার বলা থাকবে কী ? ও যে দিন ধরব, সেই দিনই বলতে হবে—দেখাচ্ছি সব মজা, কোন ক্লাসের ছেলে স্কুলে আসেনি, ওঁর। এসেছেন—ওঁদের পড়বার চার কত । ছাল তুলছি আজ পড না পারলে— দুই-একটি বুদ্ধিমান ছেলে ততক্ষণ র্তাহার রাগের কারণ খানিকট বুঝিয়াছে। একজন বলিল, স্তার, না এলে বাড়ীতে বকে, বলে—ওপবের ক্লাসের ছেলেরা স্ট্রাইক করেছে তা তোদের কী ? সেই আষাঢ় মাসে স্ট্রাইকের সময় এরকম হয়েছিল— আর একটি অপেক্ষাকৃত বুদ্ধিমান ছেলে বলিল, স্তার, বলেন তো পালাই। যদুবাৰু স্বর নরম করিয়া বলিলেন, পালাবি কোথা দিয়ে ইস্কুলের গেটে হেডমাস্টার তালা দিয়ে রেখেছেন। ক্লাসস্থদ্ধ ছেলে বলিয়া উঠিল প্রায় সমস্বরে, গেটের দরকার কী স্তার ? আপনি বলুন, টিনের বেড়া রয়েছে পেছনে, ওর তল দিয়ে গলে বেরিয়ে যাব । —তবে তাই যা। কাউকে বলিস নে। রেজেক্ট্রি হয় নি তো এখনও—পালা। একে একে যা । নীচের তলায় আশপাশের ক্লাসে ছেলে নাই, কারণ সেগুলি বড় ছেলেদের ক্লাস। কেবল পূৰ্ব্বদিকের কোণে হল-ঘরের পাশের ক্লাসে গুটি-কয়েক ছোট ছেলে লইয়া জ্যোতিবিনোদ বিরক্তমুখে বসিয়া আছে। যদুবাবু বলিলেন, ওহে জ্যোতিবিনোদ, ওগুলোকে যেতে দাও না। জ্যোতির্বিবনোদ যেন দৈববাণী শুনিল, এরূপভাবে লাফাইয়া উঠিয়া আগ্রহের স্বরে বলিল, দেব ছেড়ে ? সাহেব কিছু বলবে না তো ? যদুবাবু মুখে কোনদিন খাটো নহেন, ব্যঙ্গের স্বরে বলিলেন, ও সব ভাবলে তবে বলে ক্লাস করো সেই বেল তিনটে পৰ্য্যন্ত (ছোট ছেলেদের তিনটার সময় ছুটি হইয়া যায় )। এই তো আমি ছেড়ে দিলাম— —আপনার সব বড় বড়, আমরা হলাম চুনোপুটি, সুব তাতেই দোষ হৰে আমাদের। —কিছু না, ছেড়ে দাও সব। এই, যা সব পালা—টিনের পার্টিশনের তলা দিয়ে পালা। স্ট্রাইকের দিন স্কুল করতে এসেছে ! ভারি পড়ার চাড় ! জ্যোতির্বিবনোদও স্বরে স্বর মিলাইয়া বলিঙ্গ, দেখুন দিকি কাও যত—পড়ে তো সব উণ্টে যাচ্ছেন একেবারে । যা সব একে একে রোতে, গোল করবি তো হাড় ভাঙব মেরে, কেউ টের না পায়— কথা শেষ হইবার সঙ্গে সঙ্গে ক্লাস প্রায় খালি হইয়া গেল। ধৰ্ছবাৰু উপরে গিয়া বলিলেন, কোথায় ছেলে ? দু-একটা এসেছিল, কে কোথা দিয়ে পালিয়ে গেল ধরতেই পারা গেল না—