পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/১০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী এ দিন এই পৰ্য্যস্ত। মেয়েটি আর আসিল না সারাদিনের মধ্যে। কিন্তু ক্ষেত্রবাবুর মন যেন তাহার জন্ম উংস্থক হইয়া রহিল সারাদিন। মুখখানি বেশ।" সেই মেয়েটি নাকি ? কী জানি । লজ্জায় কথাটা কাহাকেও জিজ্ঞাসা করিতে পারিলেন না। পরে আরও দুই দিন গেল, মেয়েটির কোন চিহ্ন নাই কোন দিকে। হঠাৎ তৃতীয় দিনে মেয়েটি সকালে চায়ের পেয়ালা রাখিয়া গেল সামনে। ক্ষেত্রবাবুর বুকের মধ্যে কিসের একটা ঢেউ চলকিয়া উঠিল । মেয়েটি দোরের কাছে একটুখানি দাড়াইয়া চলিয়া গেল এবং আর কিছুক্ষণ পরে অাবার আসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, আপনাকে কি আর এক পেয়ালা চা দেবি ? —চা ! তা বেশ । —আনব? -ईT1 ।। মেয়েটি এবার চলিয়া যাইতেই ক্ষেত্রবাৰু ভাবিলেন, লজ্জা কিসের—এবার তিনি জিজ্ঞাসা করিবেনই। সেই মেয়েটি নয়, ও অন্য কেউ, পাশের কোন বাসার মেয়ে। কী জাতি, তাহারই বা ঠিক কী। তা হোক, একটু আলাপ করিতে দোষ নাই। এবার চা আনিতেই ক্ষেত্রবাবু লাজুকতা প্রাণপণে চাপিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, আপনি বুঝি পাশের বাসাতেই থাকেন ? মেয়েটি যেন এতদিন ক্ষেত্রবাবুর কথা কহিবার আশায় ছিল, বহুবিলম্বিত ব্যাপারের অপ্রত্যাশিত সংঘটনে প্রথমটা নিজে যেন কিছু থতমত খাইয়া গেল। পরে বেশ সপ্রতিভ ভাবেই আজুল তুলিয়া অনির্দেগু একটা বাসার দিকে দেখাইয়া বলিল, পাশে না, ও-ই দিকে আমাদের বাসা । —s ক্ষেত্রবাবু আর কথা খুজিয়া পান না। মেয়েটি যেন আশা করিয়াই দাড়াইয়া আছে, তিনি আবার কথা বলিবেন। ক্ষেত্রবাবু পুনরায় মরীয়া হইয়া বলিলেন, আপনার বাবা বুঝি রেলে কাজ করেন ? —পার্গেল-আপিসে কাজ করেন। --বেশ । মেয়েটি তখনও দাড়াইয়া আছে দেখিয়া ক্ষেত্রবাৰু আকাশ-পাতাল ভাবিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, আপনি পড়েন বুঝি ? —এখন বাড়ীতেই পড়ি, গার্লস স্কুলে থার্ড ক্লাস পর্য্যস্ত পড়েছিলাম, এখন বড় হয়েছি তাই আর স্কুলে যাই নে। মেয়েটি ষে কয়টি ইংরেজী কথা বলিল, সবগুলির উচ্চারণ স্পষ্ট ও জড়তাশূন্ত, অশিক্ষিত উচ্চারণ নয়। ইংরেজী-জানা যেয়ে ক্ষেত্রবাবু এ পর্য্যন্ত দেখেন নাই, মেয়েটির প্রতি সপ্রশংস দৃষ্টিতে চাহিয়া বলিলেন, এখানে বুঝি গার্লস স্কুল আছে ? —বেশ বড় স্কুল তো, আড়াইশো মেয়ে পড়ে।