পাতা:মানসী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
বিরহানন্দ
২৭

মুছালে দুখনীর দুখিনীর আঁখিটি
জাগিত মনে ত্বরা দয়া-ভরা তোর সুখ।

সারাটা দিনমান রচি গান  কত-না,
তোমার পাশে রহি যেন কহি বেদনা।
কানন মরমরে কত স্বরে কহিত,
ধ্বনিত যেন দিশে তোমারি সে রচনা।
সতত দূরে কাছে আগে পাছে বহিত
তোমারি যত কথা পাতা-লতা ঝরনা।

তোমারে আঁকিতাম, রাখিতাম ধরিয়া
বিরহ ছায়াতল সুশীতল করিয়া
কখনো দেখি যেন ম্লান-হেন মুখানি,
কখনো আঁখিপুটে হাসি উঠে ভরিয়া।
কখনো সারা রাত ধরি হাত  দুখানি
রহি গো বেশবাসে কেশপাশে মরিয়া।

বিরহ সুমধুর হল দূর কেন রে।
মিলনদাবানলে গেল জ্বলে যেন রে।
কই সে দেবী কই, হেরো ওই একাকার—
শ্মশানবিলাসিনী বিবাসিনী বিহরে।
নাই গো দয়ামায়া, স্নেহছায়া নাহি আর—
সকলি করে ধু ধু,  প্রাণ শুধু  শিহরে।

জ্যৈষ্ঠ ১৮৮৭