পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/১১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী —আমার বালি আর জিরে-মরিচ এনেছ ? —ওই যা: ! একদম ভুলে গিয়েচি। ভুলব না ? যদি বা ছাত্রের কাকার হাত এড়িয়ে বেরুলাম, তো পড়ে গেলাম রাখাল মিত্তিরের হাতে । সব স্কুলের সব মাস্টার ওকে এড়িয়ে চলে। একবার পাকড়ালে আর নিস্তার নেই। —সে কে ? —অথর। -কী কী বই আছে ? কই, নাম শুনি নি তো ? —শুনবে কি—বঙ্কিমবাবু, না রবি ঠাকুর, ন শরৎ চাটুজ্জে ? স্কুলের—স্কুলের বই লেখে, নব কবিতাপাঠ, বাল্যবোধ—এই সব। বডড গরীব, হাতে পায়ে ধরে বই চালায়। ছিনে জোক । - —একদিন এনে না বাসায়, দেখব। আমি অথর কখনও দেখি নি—একদিন চা খাওয়াব । —রক্ষে কর । তুমি চেন না রাখাল মিভিরকে । বাসায় আনলে আর দেখতে হবে না। সে কথাই তুলে না। —বড়লোক ? —খেতে পায় না। বই চলে না । সেকেলে ধরনের বই, একালে অচল। ওই যে বললাম, নাছোড়বান্দা হয়ে ধরে-পেড়ে চলায় । অনিলার লেখাপড়ার উপর খুব অল্পরাগ দেখিয়া ক্ষেত্রবাবুর আনন্দ হয়। নিভাননী লেখাপড়া জানিতঃসামান্তই ; অনিলা মন্দ লেখাপড়া জানে না, ইংরেজীও জানে। বই পড়িতে ভালবাসে বলিয়া শাখারিটোলার লাইব্রেরী হইতে ক্ষেত্রবাবু গত মাস হইতে বই আনিয়া দেন, দুইখানা বই একদিনেই কাবার। সম্প্রতি স্কুলের লাইব্রেরী হইতে ছোট ছোট ইংরেজী বই আনেন—অনিলার সেগুলি পুড়িতে একটু সময় লাগে। অনিল সব সময় সব কথার মানে বুঝিতে পারে না। বলে, ধ্যা গা, হপ মানে কী ? বইয়েতে আছে এক জায়গায়— —লাফিয়ে লাফিয়ে চলা । —উছ, লাফানো নয়, কোন,গাছপালা হবে। লাফানো হলে সে জায়গায় মানে হয় না। —ওহে, ও একরকমের লতা, চাষ হয় ইংলণ্ডে, বিশেষ করে স্কটল্যাণ্ডে। মদ চোলাই হয় ঐ লতা থেকে, হুইস্কি বিশেষ করে— ছোট খুকী ঘুমের ঘোরে ভয় পাইয়া কাদিয়া উঠিতে অনিল চুটিয়া গেল। বেলা চারিট বাজে। হেডমাস্টারের সারকুলার বাহির হইল, ছুটির পরে জরুরী নীটিং, কোম মাস্টার যেন চলিয়া না যায়। মাস্টারদের মুখ শুকাইল। ছুইদিন আগে সাহেৰ ক্লাসে গুরিয়া পড়ানোর তদারক করিয়া গিয়াছেন, আজ সেই সব ব্যাপারের আলোচনা