পাতা:ঊর্ম্মিমুখর.djvu/৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রমথ বিশী এবং সবাই হাজির। পরিমল বল্লে, আপনার দৃষ্টপ্রদীপ পড়েচি, কাল রাত্রে। বড় ভাল লেগেচে। আরও গল্প গুজব চলুল । আমি গিয়ে বৌঠাকরুনের সঙ্গে দেখা করে এলুম। তারপর ওখান থেকে পার্ক সার্কাসে মণীন্দ্র বসুর বাড়ীতে চা-পাটতে এলুম, কারণ সেখানে জ্যোৎস্নার বিবাহের কথা হবে অন্নদাশঙ্করেরর আত্মীয়ের সঙ্গে এবং আমিই তার ঘটক। পার্ক সার্কাসে বাস থেকে নেমে যখন মণীন্দ্র বসুর বাড়ী যাচ্ছি, তখন ছিন্নভিন্ন বালা মেঘের অন্তরালে প্রতিপদের চাদ উঠছে, সে যে কি এক সৌন্দৰ্য্যভরা ছবি, না দেখলে বোঝানো যাবে না। তখনই আমার বিহারের জঙ্গলের ও তার হতভাগ্য দরিদ্র নরনারীদের কথা কি জানি হঠাৎ মনে পড়ল, তাদের মধ্যে ছ’ বছর থেকেচি, তাদের সব অবস্থাতে দেখেচি, জানি । আর সেই নির্জন বনানী ! রাত্রে পরিপূর্ণ জ্যোৎস্না উঠেচে যখন বিছানাতে এসে শুই ; মনীন্দ্র বাবুর বাড়ীতে চারু রায়, সুরেন্দ্র মৈত্র এদের সঙ্গে spiritualism নিয়ে ঘোর বাদানুবাদ করে বড় ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। তারপর হিমালয়ের শৃঙ্গরাজি ও গঙ্গার উৎপত্তিস্থান সম্বন্ধে আর একপাল বাদামুবাদ। আজ ট্রামে স্কুল থেকে গেলুষ গঙ্গার ধারে। গিরিজা প্রসন্ন সেনের কবিরাজি ডিসপেনসারির মধ্যে অয়েল পেটিংখানা ঠিক সেই জায়গাটতে আছে—পাবার সঙ্গে কতবার ভগবতী প্রসন্ন কবিরাজের কাছে আসতুম | বাড়ীটা সেইরকমই আছে, তবে খুব পুরোনো হয়ে পড়েচে । ভাবলুম আল এই যে এই ঘরে ঢুকলুম, জীবনে যা কিছু সব হয়েচে সেবার এই ঘর }ে বার হবার ও এবার পুণরায় ঢুকবার মধ্যে—সেই যে ছেলেবেলায় কিশোর কাক সত্য নারায়ণের পুথি পড়তেন তাও,.যুগল ককাদের টেকশেলে আমি, ভরত, নেদ্রা বাদলার দিনে খেলা করতাম তাও, খাবার সঙ্গে আমি ছকের দোকানে বসে লুচি পেয়েছিলুম তাও, .প্রথম যেদিন ধানবনের মধ্যে দিয়ে স্কুলে ভৰ্ত্তি হতে যাই বনগায়ে তাও, সব কিছু—সব কিছু কত কথা মনে হ’ল, সারা জীবনটা যেন এক চমকে দেখতে পেলুম গঙ্গাপ্রসাদ সেনের বড় অয়েল পেটিংটার সামনে বসে। e তারপর গিরিজ। বাবুর সঙ্গে ওদের বৈঠকখানায় অনেকক্ষণ বসে গল্প করি। কত পুরোনো আমলের ছবি টাঙ্গানো যা সব ছবি আর এখন মেলে না।