পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/১৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ক্রীক লেনে এক বন্ধুর বাড়ী ছুটি-ছাটার দিন যন্থবাৰু সন্ধ্যাৰেল গিয়া চাট-আসটা খান, গল্প-গুজব করেন। ভাবিতে ভাবিতে সেখানেই গিয়া পৌছিলেন । বন্ধু বাহিরের ঘরে বসিয়া নিজের ছেলেদের পড়াইতেছেন। যন্ধুবাবুকে দেখিয়া বলিলেন, এস ভায়া। বোস। আজ অসময়ে যে ? ছেলে পড়াতে বেরোও নি ? —সেখান থেকেই আসছি। —একটু চা করতে বলে আয় তো তোর কাকাবাবুর জন্তে । আমার আবার বাড়ীর সবাই কাল যাচ্ছে মধুপুর। সব ব্যস্ত রয়েছে। বাধা-ছাদা— যদুবাবুর বুকের মধ্যে ছাত করিয়া উঠিল। বলিলেন, কেন ? কেন ? —সবাই বলছে, জাপানীরা যে-কোন সময়ে নাকি এয়ার রেড করতে পারে, তাই মেয়েদের সরিয়ে দিচ্ছি। যন্ধুবাবুর মনে বড় ভয় হইল, জিজ্ঞাসা করিলেন, কে বললে । —বললে কেউ না। কিন্তু গতিক সেই রকমই। এর পরে রাস্তাঘাট বদ্ধ হয়ে যাবে। —বলো কী ! —তাই তো সবাই বলচে । কলকাতা থেকে অনেকে যাচ্ছে চলে। হাওড়া স্টেশনে গিয়ে দেখ গে লোকের ভিড় । যদুবাবু আর সেখানে না দাড়াইয়া বাড়ী চলিয়া আসিলেন। বাসার দরজায় দেখিলেন, দুইখানি ঘোড়ার গাড়ী দাড়াইয়। বাড়ীওলার বড় ছেলে ধরাধরি করিয়া বিছানার মোট ও ট্রাঙ্ক গাড়ীর মাথায় উঠাইতেছে। যদুবাবু বলিলেন, এসব কী হে যতীন, কোথায় যাচ্চ ? যতীন বাইশ-তেইশ বছরের ছোকরা, কলেজে পড়ে। বলিল, ও, আমরা –দেশে যাচ্চি মাস্টার মশায়। সকলে বলছে, কলকাতাটা এ সময় সেফ, নয়। তাই মা আর বউরিদিদের— —তুমি, তোমার বাবা, এরাও নাকি ? —আমি পৌঁছে দিয়ে আবার আসব। কী জানেন, পুরুষমাস্থ্য আমরা দৌড়েও এক দিকে না এক দিকে পালাতে পারব। হাই এক্সপ্লোসিভ বম্ব, পড়লে এ বাড়ীম্বর কিছু কি থাকবে ভাবছেন ? বোমার ঝাপটা লেগেই মাস্থ্য দম ফেটে মারা যায়। সে সব অবস্থায়— যদুবাৰুর পাঠক্ ঠক্‌ করিয়া কঁাপিতে লাগিল। বলিলেন, বল কী ? —বলি তো তাই। গবর্মেন্ট বলছে, একখানা করে পেতলের চাকতিতে নামধাম লিখে প্রত্যেকে যেন পকেটে করে বেড়ায়। এয়ার রেডের পরে ওইখানা দেখে ডেড, বডি লনাক্ত করা— যদুবাবুর তালু শুকাইয়া গিয়াছে। এখনই যেন তাহার মাথায় জাপানী বোমা পড়পড় হইয়াছে। বলিলেন, আচ্ছা যতীন, তোমরা তো ইয়ং ম্যান, পাচ জায়গায় বেড়াও। তোমার কি মনে হয়, বোমা শীগগির পড়তে পারে ?