পাতা:সতী-দীনেশচন্দ্র সেন.djvu/৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
ভূমিকা

ভাগ- হইতে বর্জ্জন করিয়াছি। সংস্কৃত পুরাণ ও তন্ত্র আলোচনা করিলে দেখা যাইবে, একমাত্র মহাভাগবতপুরাণে দশমহাবিদ্যার আবির্ভাব সম্বন্ধে উক্তপ্রকার আখ্যায়িকা পরিদৃষ্ট হয়, অন্য কোন প্রাচীন গ্রন্থে তাহা নাই। কুব্জিকাতন্ত্র, স্বতন্ত্র তন্ত্র, নারদপঞ্চরাত্র প্রভৃতি বহুসংখ্যক প্রাচীন সংস্কৃত গ্রন্থে দশমহাবিদ্যার আবির্ভাবের কারণ ভিন্নরূপ নির্দিষ্ট হইয়াছে। এই সকল গ্রন্থের অনেক স্থলেই দৃষ্ট হয় বিশেষ বিশেষ অসুর নিধনকালে কিংবা অপর কোন প্রকার ঘটনায় পড়িয়া দেবী দশমহাবিদ্যার ভিন্ন ভিন্ন নাম পরিগ্রহ করিয়াছিলেন—দক্ষালয়ে যাওয়ার উপলক্ষে তাঁহার দশমূর্ত্তির কল্পনা একমাত্র পূর্ব্বকথিত মহাভাগবতপুরাণেই দৃষ্ট হয়; দক্ষযজ্ঞের সম্বন্ধে শিবপুরাণ ও শ্রীমদ্ভাগবতের আখ্যায়িকাই বিশেষরূপ উল্লেখযোগ্য, তাহাতে দশমহাবিদ্যার কল্পনা নাই। শুদ্ধ মহাভাগবত-পুরাণের উপর নির্ভর করিয়া ভারতচন্দ্র প্রভৃতি প্রাচীন বঙ্গীয় কবিগণ দশমহাবিদ্যার বৃত্তান্ত সঙ্কলন করিয়া গিয়াছেন এবং তজ্জন্যই এ দেশে সেই ধারণাটি বদ্ধমূল হইয়াছে।

 আশা করা যায়, একমাত্র সংস্কৃত পুরাণের নজির গ্রহণ না করার অপরাধে গল্পলেখককে বিশেষরূপে দোষী সাব্যস্ত করা হইবে না। কবিবর হেমচন্দ্র তাঁহার দশমহাবিদ্যানামক কাব্যে দশমহাবিদ্যার আবির্ভাব সতীর দেহত্যাগের পরবর্ত্তী বলিয়া কল্পনা করিয়াছেন, তাহা সম্পূর্ণরূপে তাঁহার কল্পনায় সৃষ্টি। আমি সতীর চিত্র যে ভাবে চিত্রণ করিতে চেষ্টা পাইয়াছি, তাহাতে দশমহাবিদ্যার সঙ্গতি রক্ষণ করা আমার পক্ষে কঠিন হইত, এজন্যই আমি উহা বর্জ্জন করিয়াছি এবং এ সম্বন্ধে প্রায় সমস্ত সংস্কৃত গ্রন্থোক্ত বিবরণ যখন আমার অনুকুলে, তখন আমি লিখিতে যাইয়া স্বয়ং কোনরূপ দ্বিধা বোধ করি নাই।