অশ্বঘোষের বুদ্ধচরিত (প্রথম খণ্ড)/ষষ্ঠ সর্গ
ষষ্ঠ সর্গ
পরমুহূর্তে, জগজ্জনের নয়নসদৃশ সূর্য উদিত হইলে, সেই নরোত্তম, ভার্গব মুনির আশ্রম দেখিতে পাইলেন॥১॥
তথায় পরম বিশ্বাসের সহিত সুপ্ত মৃগযূথ, ও শাস্তিতে অবস্থিত বিহঙ্গকুল দেখিয়া তাঁহারও বিশ্রাম করিবার ইচ্ছা হইল। এবং নিজেকে তিনি কৃতার্থ মনে করিলেন॥২॥
ঔদ্ধত্য পরিহার নিমিত্ত, তপস্যার প্রতি শ্রদ্ধাহেতু, এবং নিজ (স্বাভাবিক) বিনয়বশত, তিনি অশ্ব হইতে অবতরণ করিলেন॥৩॥
অবতীর্ণ হইয়া, অশ্ব স্পর্শ করত, “নিস্তার পাইলাম” এই বাক্য উচ্চারণপূর্বক, প্রীতিবশত নেত্রের দ্বারা স্নান করাইয়াই যেন তিনি ছন্দককে বলিলেন॥৪॥
“হে সৌম্য, সুপর্ণের ন্যায় দ্রুতগতি এই তুরঙ্গমকে অনুগমন করিয়া, তুমি আমার প্রতি ভক্তি ও আপনার বিক্রম প্রকাশ করিয়াছ॥৫॥
“অন্য কার্যে সম্পূর্ণ মগ্ন হইলেও, তোমার এইরূপ প্রভুপ্রীতি এবং সামর্থ্য, আমার হৃদয় হরণ করিয়াছে॥৬॥
“অনেকের স্নেহ নাই, কিন্তু সামর্থ্য আছে, অনেকের সামর্থ্য নাই, কিন্তু স্নেহ ভক্তি আছে, কিন্তু তোমার ন্যায় স্নেহভক্তিমান এবং সমর্থ পুরুষ, পৃথিবীতে অত্যন্ত দুর্লভ॥৭॥
“তোমার এই মহান কর্মে আমি প্রীত হইয়াছি। আমার প্রতি তোমার এই প্রীতি একান্তই নিষ্কাম। ঐশ্বর্য সম্পন্ন ব্যক্তির অভিমুখী কে না হয়। কিন্তু ঐশ্বর্যবিরহিত ব্যক্তির স্বজনও পর হইয়া যায় ॥৮-৯॥
“পিতা পুত্রকে কুলার্থে (নিজ বংশরক্ষার জন্য) পালন করেন। পুত্র পিতাকে নিজ ভরণপোষণের জন্য সেবা করে। জগৎ আশার বশেই স্নেহ প্রকাশ করে। পৃথিবীতে অকারণ আত্মীয়তা কোথাও নাই॥ ১০॥
“অধিক কী কহিব। তুমি আমার অত্যন্ত প্রিয় কার্য করিয়াছ। আমি অভিলষিত স্থান প্রাপ্ত হইয়াছি। তুমি অশ্ব লইয়া প্রত্যাবর্তন করো”॥১১॥
এই বলিয়া সেই মহাবাহু, ভূষণ সমূহ মোচন করিয়া, উপকার-আকাঙ্ক্ষায়, সন্তপ্তচিত্ত ছন্দককে তাহা প্রদান করিলেন॥১২॥
মুকুট হইতে দীপের ন্যায় উজ্জ্বল মণি গ্রহণপূর্বক, সূর্যসহ মন্দার পর্বতের ন্যায় অবস্থিত হইয়া বলিলেন ॥১৩॥
“হে ছন্দক, এই মণিসহ নৃপতিকে বার বার প্রণাম করিয়া, তাঁহার সন্তাপনিবৃত্তির জন্য, তুমি পরম বিশ্বাসের সহিত ইহা জ্ঞাপন করিবে— আমি জরামরণ নাশের জন্যই তপোবনে প্রবেশ করিয়াছি। স্বর্গলাভের তৃষ্ণায়, স্নেহের অভাবে, বা ক্রোধবশত নহে॥১৪-১৫॥
“আমি অভিনিষ্ক্রান্ত হইয়াছি বলিয়া, আমার জন্য শোক করা উচিত নহে। মিলন দীর্ঘকাল স্থায়ী হইলেও তাহা এক সময়ে ছিন্ন হয়ই হয় ॥১৬॥
“বিচ্ছেদ ধ্রুব বলিয়াই, আমার মোক্ষে মতি হইয়াছে। 'আর যাহাতে স্বজন বিচ্ছেদ না হয়॥১৭॥
“আমি শোক দূর করিবার জন্য নিষ্ক্রান্ত হইয়াছি। আমার জন্য শোক করা উচিত নহে। শোকের মূল-বিষয়ভোগে আসক্ত অনুরাগী ব্যক্তির জন্যই শোক করা উচিত॥১৮॥
“আমাদের পূর্বপুরুষগণের ইহাই স্থির সিদ্ধান্ত ছিল। তাঁহাদের উত্তরাধিকার মার্গাবলম্বী আমার জন্য শোক করা উচিত নহে॥ ১৯॥
“মানুষের মৃত্যুতে, তাহার অর্থের উত্তরাধিকারী বহু পাওয়া যায়, কিন্তু পৃথিবীতে ধর্মের উত্তরাধিকারী অত্যন্ত দুর্লভ, হয়তো বা একেবারেই নাই॥২০॥
যদি বল, 'ইনি অসময়ে বনে গমন করিতেছেন' তাহার উত্তর এই যে—‘এই চঞ্চলজীবনে ধর্মের অসময় নাই'॥২১॥
“অতএব, 'অদ্যই আমার পরম কল্যাণ অর্জন করিতে হইবে', এইরূপই আমার সিদ্ধান্ত। মৃত্যু যখন প্রতিদ্বন্দ্বীরূপে দণ্ডায়মান, তখন জীবনে আস্থা কোথায়॥২২॥
“হে সৌম্য, তুমি বসুধাধিপকে এই সমস্ত কথা জানাইবে। তিনি যাহাতে আমাকে স্মরণ না করেন তাহার চেষ্টা করিবে॥২৩॥
“তুমি বরং নৃপতিকে আমার গুণহীনতার বিষয় বলিবে। গুণহীনতাহেতু স্নেহ চলিয়া যায়, এবং স্নেহ চলিয়া গেলে, শোকও থাকে না॥ ২৪॥
এই বাক্য শ্রবণ করিয়া, সন্তাপক্লিষ্ট ছন্দক, কৃতাঞ্জলিপুটে বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে প্রত্যুত্তর করিল॥২৫॥
“প্রভু, বান্ধবগণের ক্লেশকর আপনার এই মনোভাবে, নদীপঙ্কে পতিত হস্তীর ন্যায়, আমার চিত্ত অবসন্ন হইতেছে॥২৬॥
“আপনার এই প্রতিজ্ঞা শুনিয়া, হায়, কাহার চক্ষু শুষ্ক থাকিবে। যাহার হৃদয় লৌহের ন্যায়, তাহারও অশ্রু নির্গত হইবে। যাহার স্নেহকাতর হৃদয় তাহার তো কথাই নাই ॥২৭॥
“রাজপ্রাসাদে শয়নার্হ এই সুকুমার দেহ কি তীক্ষ্ণদর্ভাঙ্কুরসংকুল তপোবনভূমিতে শয়ন করিতে পারে॥২৮॥
“আপনার অভিপ্রায় শুনিয়াও, এই যে আমি অশ্ব লইয়া আসিয়াছি, ইহা স্বেচ্ছায় নহে, প্রভু, দৈব আমায় বলপূর্বক ইহা করাইয়াছে॥২৯॥
“হায়, আমি যদি আমার বশে থাকিতাম, তবে কি সমস্ত কপিলবস্তুর শোকস্বরূপ এই অশ্বকে আনিতে পারিতাম॥৩০॥
“হে মহাবাহো, সদ্ধর্মত্যাগী নাস্তিকের ন্যায়, পুত্রলোভাতুর স্নেহশীল বৃদ্ধ রাজাকে পরিত্যাগ করা আপনার উচিত নহে॥৩১॥
“কৃতঘ্ন যেরূপ সৎক্রিয়া বিস্মৃত হয়, হে দেব, সংবর্ধনপরিশ্রান্তা, দ্বিতীয়া জননীকে, তেমনি ভাবে বিস্মৃত হওয়া আপনার উচিত নহে॥ ৩২॥
“ক্লীব যেমন লব্ধ লক্ষ্মীকে পরিত্যাগ করে, শিশুপুত্রের জননী, গুণবতী, কুলোত্তমা, পতিব্রতা দেবীকে, আপনার তেমনি ভাবে পরিত্যাগ করা উচিত নহে॥৩৩॥
“যশস্বী ও ধার্মিকগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হইয়া, ব্যসনী যেরূপ তাহার উৎকৃষ্ট যশোরাশি ত্যাগ করে, সেইরূপ যশোধরার গর্ভজাত শ্লাঘ্য শিশুপুত্রকে ত্যাগ করা আপনার উচিত নহে॥৩৪॥
“প্রভু, বন্ধু ও রাজ্যত্যাগে কৃতসংকল্প হইলেও আপনার আমাকে ত্যাগ করা উচিত নহে। আপনার চরণযুগলই আমার একমাত্র গতি॥৩৫॥
“রাঘবকে পরিত্যাগ করিয়া প্রত্যাবর্তন করিতে সুমন্ত্র যেরূপ অসমর্থ হইয়াছিলেন, আপনাকে অরণ্যে পরিত্যাগ করিয়া, দহ্যমান চিত্তে নগরে যাইতে আমিও সেইরূপ অসমর্থ ॥৩৬॥
“আপনাকে পরিত্যাগ করিয়া নগরে গমন করিলে, রাজা আমাকে কী বলিবেন। আমি আমার কর্তব্য দেখাইতে অন্তঃপুরেই বা কী বলিব ॥৩৭॥
“আপনি বলিলেন 'নরপতিকে আমার গুণহীনতার কথা বলিবে'। কিন্তু নির্দোষ মুনিসদৃশ আপনার সম্বন্ধে আমি কি - মিথ্যা বলিব॥৩৮॥
“সলজ্জ হৃদয়ে, জড়িমাযুক্ত জিহ্বায়, আমি যদি বা তাহাই বলি, কে তাহাতে শ্রদ্ধা করিবে ॥৩৯॥
“যে চন্দ্রমার উত্তাপের কথা বলে, বা যে তাহাতে বিশ্বাস করে, হে দোষজ্ঞ, সেই আপনার দোষের কথা বলিতে পারে॥৪০॥
“আপনি সতত অনুকম্পান্বিত এবং নিত্য করুণার্দ্রহৃদয়। স্নেহশীল জনগণকে ত্যাগ করা আপনার যোগ্য নহে। হে ধীর, প্রসন্ন হউন, গৃহে প্রত্যাবর্তন করুন”॥৪১॥
শোকাভিভূত ছন্দকের এই বাক্য শ্রবণ করিয়া, বাগ্মিশ্রেষ্ঠ, স্থিরচিত্ত কুমার, পরমধীরতার সহিত বলিলেন॥৪২॥
“হে ছন্দক, আমার বিয়োগজনিত এই সন্তাপ পরিত্যাগ করো। পৃথক পৃথক জন্মবিশিষ্ট জীবগণের বিচ্ছেদ নিয়তই দৃষ্ট হইতেছে ॥৪৩॥
“আমি যদি স্নেহবশত স্বজনগণকে ত্যাগ নাও করি, শক্তিহীন আমাদিগকে মৃত্যু বলপূর্বক পরস্পর হইতে বিচ্ছিন্ন করিবে॥৪৪॥
“মহতী তৃষ্ণা ও বহু দুঃখের সহিত যিনি আমাকে গর্ভে ধারণ করিয়াছিলেন, আমার সেই ব্যর্থপ্রযত্না জননী আজ কোথায়। আর আমিই বা কোথায় ॥৪৫॥
“পক্ষিগণ যেমন বাস-বৃক্ষে সমাগত হইয়া, পরে অন্যত্র চলিয়া যায়, জীবসমাগমও সেইরূপ নিয়ত বিয়োগান্ত॥৪৬॥
“মেঘসমূহ যেরূপ সমাগত হইয়া পুনরায় অপগত হয়, মনে হইতেছে প্রাণিগণের মিলন ও বিরহও ঠিক সেইরূপ ॥৪৭॥
“যখন পরস্পরকে বিচ্ছিন্ন করিয়াই এই জগৎ চলিতেছে, তখন এই স্বপ্নসম সমাগমের সময়, কাহাকেও নিজের জ্ঞান করা উচিত নহে ॥৪৮॥
“পাদপগণের যখন সহজাত পর্ণরাগের সহিতও বিচ্ছেদ হয়, তখন পরস্পর ভিন্নপ্রকৃতি মানবগণের মধ্যে কেননা বিচ্ছেদ হইবে ॥৪১॥
“হে সৌম্য, জগৎ যখন এইরূপ, তখন আর সন্তাপ করিয়ো না। নিবৃত্ত হও। তোমার স্নেহ যদি স্থায়ী হয়, এখন নিবৃত্ত হইয়া পুনরায় আগমন করিয়ো ॥৫০॥
“কপিলবস্তুতে আমার জন্য বাঁহারা পথ চাহিয়া বসিয়া আছেন, তাঁহাদের বলিয়ো— 'তাঁহার প্রতি স্নেহ পরিত্যাগ করুন এবং তাঁহার প্রতিজ্ঞা শ্রবণ করুন ॥৫১ ॥
“হয় তিনি জরা মরণ ক্ষয় করিয়া শীঘ্রই এখানে আগমন করিবেন, নয় জ্ঞাতিবন্ধুহীন একাকী অকৃতার্থ হইয়া বিনষ্ট হইবেন” ॥৫২॥
তাঁহার এই বাক্য শুনিয়া তুরগোত্তম কন্থক, জিহ্বার দ্বারা তাঁহার পদলেহন করিল, এবং উষ্ণ বাষ্প মোচন করিতে লাগিল ॥৫৩॥
কুমার, জালবদ্ধ স্বস্তিক চিহ্নিত, মধ্যে চক্রসমন্বিত, পাণির দ্বারা তাহাকে স্পর্শ করিয়া বয়স্যের ন্যায় বলিলেন ॥৫৪॥
“হে কন্থক, তুমি অতি উৎকৃষ্ট অশ্ব। তোমার আচরণে তাহা প্রকাশ পাইয়াছে। বাষ্প মোচন করিয়ো না। সহিষ্ণুতা অবলম্বন করো। তোমার এই শ্রম শীঘ্রই সফল হইবে” ॥৫৫॥
অনন্তর সেই ধীরকুমার, ছন্দককরস্থিত, মণিভূষিতমুষ্টি, স্বর্ণখচিত, সুচিত্রিত, শাণিত অসি, গ্রহণ করিয়া, বিল হইতে সর্পের ন্যায়, কোষ হইতে তাহাকে বহির্গত করিলেন ॥৫৬॥
নীলোৎপলপত্রের ন্যায় নীলবর্ণ সেই অসি নিষ্কাশিত করিয়া, মনোরম কেশচূড় ছেদনপূর্বক, অংশুবিকিরণকারী সেই অসি, সরোবরে হংসের ন্যায়, অন্তরীক্ষে নিক্ষেপ করিলেন॥৫৭॥
স্বর্গবাসিগণ সেই উৎক্ষিপ্ত অসি, পুজাভিলাষে ভক্তির সহিত গ্রহণ করিলেন। দ্যুলোকে দেবগণ দিব্য অনুষ্ঠানসহ তাহার যথোচিত পূজা করিলেন ॥৫৮॥
অলংকারসমূহ পরিত্যাগ করিয়া, শিরোদেশ হইতে শ্রী নির্বাসিত করিয়া, নিজ কাঞ্চনহংসচিত্রিত বসন লক্ষ্য করিয়া, সেই ধীর, তপোবনবাসোপযোগী বাস আকাঙ্ক্ষা করিলেন॥৫৯॥
বিশুদ্ধভাব এক দেবতা, তাঁহার মনোভাব বিদিত হইয়া মৃগব্যাধবেশে, কাষায় বস্ত্র পরিধান পূর্বক তাঁহার সমীপে উপস্থিত হইলেন। শাক্যরাজতনয় তাঁহাকে বলিলেন॥৬০॥
“এই মাঙ্গলিক কাষায় বস্ত্র ঋষির চিহ্ন, ইহা এবং তোমার হিংস্র ধনু একত্রে থাকিবার যোগ্য নহে। অতএব হৈ সৌম্য, যদি তোমার ইহাতে আসক্তি না থাকে, আমাকে ইহা দান করো এবং আমার এই বস্ত্র গ্রহণ করো”॥৬১॥
ব্যাধ বলিলেন— “হে কামদ, ইহার দ্বারা বিশ্বাস জন্মাইয়া, মৃগগণের সমীপস্থ হইয়া, আমি তাহাদের হনন করি। তথাপি তোমার যদি ইহাতে প্রয়োজন থাকে, হে শক্রোপম, গ্রহণ করো ও তোমার শুক্লবাস আমাকে প্রদান করো”॥৬২॥
অনন্তর, তিনি অতি আনন্দের সহিত, সেই তপোবনোপযোগী বসন গ্রহণ ও নিজ বসন পরিত্যাগ করিলেন। ব্যাধও সেই শুক্ল বসন গ্রহণ করিয়া, দিব্যশরীর ধারণপূর্বক, স্বর্গে গমন করিলেন॥৬৩॥
তখন কুমার ও সেই অশ্বরক্ষক, তাঁহাকে সেইভাবে যাইতে দেখিয়া, বিস্মিত হইলেন এবং সেই আরণ্যক (কাষায়) বস্ত্রকে তৎক্ষণাৎ বারংবার ভক্তি প্রদর্শন করিলেন ॥৬৪॥
অনন্তর, অশ্রুপরিপ্লুত ছন্দককে পরিত্যাগ করিয়া, কাষায়ধারী ধীর, কীর্তিমান, মহাত্মা, সন্ধ্যাকালীন মেঘাবৃত চন্দ্রমার হ্যায়, তপোবনাভিমুখে প্রস্থান করিলেন॥৬৫॥
অতঃপর মলিনবসনধারী, রাজ্যস্পৃহাহীন প্রভুকে তপোবনে গমন করিতে দেখিয়া, সেই অশ্বরক্ষক হস্তদ্বয় ঊর্ধ্বে উত্তোলনপূর্বক, ভীষণ রোদন করিতে করিতে, ভূমিতে নিপতিত হইল ॥৬৬॥
প্রভুর প্রতি পুনর্বার দৃষ্টিপাত করত, বাহুর দ্বারা কন্থককে আলিঙ্গন করিয়া, সে সশব্দে রোদন করিতে লাগিল। অবশেষে নিরাশ হৃদয়ে বারংবার বিলাপ করিতে করিতে দেহখানা কোনোরূপে বহন করিয়া, নগরাভিমুখে গমন করিল। মন তাহার সেখানেই পড়িয়া রহিল ॥৬৭॥
পথে, কখনো সে ভাবিতে লাগিল। কখনো বিলাপ করিতে লাগিল। কখনো স্খলিত হইল। কখনো বা নিপতিত হইল। ভক্তিবশত, শোকার্ত হইয়া চলিতে চলিতে, অবশচিত্তে এইরূপ বহু ক্রিয়াই সে করিতে লাগিল ॥৬৮॥