আজাদী সৈনিকের ডায়েরী/ব্যাঙ্ককে ভারতীয় সম্মেলনে যোগদান
৯ই জুন ১৯৪২:
আজ ব্যানার্জি বলিলেন—‘ব্যাঙ্ককে আমাদের একটা বিরাট সম্মেলন হইবে। রাসবিহারী বাবু উপস্থিত থাকিবেন। আপনি যদি যাইতে চাহেন আমি লইয়া যাইতে পারি।’
রেঙ্গুন আর ভালো লাগিতেছে না—রাজি হইলাম।
১০ই জুন ১৯৪২:
আজ খুব ভোরে আমি, ব্যানার্জি ও আরও দুইজন একসঙ্গে একটা মোটরে এরোড্রামে গেলাম।
এরোপ্লেন্টির ভিতরে আটজনের বসিবার জায়গা। প্রত্যেকটি চেয়ারে গদি আঁটা— সামনে একটুখানি টেবিল। বেশ আরামে যাওয়া যাইবে।
১৫ই জুন ১৯৪২: ব্যাঙ্কক্:
আজ সম্মেলনের সভাপতি রাসবিহারী বসু বিবর্ণ রঞ্জিত কংগ্রেস-পতাকা উত্তোলন করিলেন। সভাস্থলে মহাত্মা গান্ধীর এক প্রকাণ্ড ছবি রহিয়াছে।
সভায় এক শত দশজন প্রতিনিধি আসিয়াছেন; জাপান, চীন, জাভা, ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জ, বোর্ণিও, সুমাত্রা, ইন্দোচীন, থাইল্যাণ্ড, বার্মা প্রভৃতি নানা দেশ হইতে।
ব্যানার্জি বলিলেন—‘ইংরেজরা যখন জাপানীদের কাছে আত্মসমর্পণ করে, তখন অনেক ভারতীয় সৈনিক ধরা পড়ে। ইহাদের মধ্যে অনেকে স্বেচ্ছায় ভারতের স্বাধীনতা সঙ্ঘে যোগদান করিয়াছে।
কর্ণেল মোহন সিং, কর্ণেল জি. কিউ. গিলানি এবং কর্ণেল এন্. এস্. গিল্কে দেখিলাম। মালয়ের এন্ রাঘবন, দেবনাথ দাস এবং এ. এম. সহায় রাসবিহারী বসুর নিকটে বসিয়াছিলেন। দেখিলাম—ব্যানার্জির বেশ খাতির।
২৩শে জুন ১৯৪২:
নয় দিন অধিবেশনের পর আজ সম্মেলন শেষ হইল। ইণ্ডিয়ান্ ইণ্ডিপেণ্ডেন্স লীগ পূর্ব্বেই প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল; এই অধিবেশনে উহা ঘোষণা করা হইল। রাসবিহারী বসু সভাপতি নির্ব্বাচিত হইলেন। সভার প্রধান অফিস হইবে সিঙ্গাপুরে।
এই কয়দিন সভায় প্রায় ৬০।৭০ টি প্রস্তাব পাশ হইয়াছে। তাহার মধ্যে এই কয়টি উল্লেখযোগ্য:—
(ক) পুর্ব্ব-এশিয়ার সকল প্রবাসী ভারতীয়দের বিশেষত অসামরিক ব্যক্তিগণকে সঙ্ঘবদ্ধ করিতে হইবে এবং এমন একটি সঙ্ঘ স্থাপন করিতে হইবে যাহা ভারতবাসীগণের ধন-সম্পত্তির নিরাপত্তা রক্ষা ও তাহাদের মঙ্গল করিতে পারে। এই সঙ্ঘের নাম হইল ইণ্ডিয়ান ইণ্ডিপেণ্ডেন্স লীগ। প্রত্যেক দেশে ইহার একটি করিয়া শাখা থাকিবে।
(খ) ভারতীয় স্বাধীনতা সঙ্ঘের কার্য্য ভারতীয় ভিত্তিতে চলিবে—সাম্প্রদায়িকভাবে নয়।
(গ) ভারতীয় স্বাধীনতা সদ্য কংগ্রেসের নীতি অনুসারে পরিচালিত হইবে।
(ঘ) ভারতের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামের উদ্দেশ্যে ভারতীয় বাহিনী গঠিত হইবে এবং মোহন সিং হইবেন তাহার অধিনায়ক (জি. ও. সি.)। ভারতীয় স্বাধীনতা সঙ্ঘ ইহার জন্য সৈন্য, অর্থ, পোষাক ও খাদ্য সরবরাহ করিবে এবং প্রয়োজন হইলে জাপানী গভর্ণমেণ্টের নিকট হইতে প্রয়োজনীয় অস্ত্রাদি, জাহাজ ও এরোপ্লেন্ লওয়া হইবে। ইহা কেবলমাত্র ভারতীয়গণের নেতৃত্বে এবং ভারতীয় স্বার্থে চালিত হইবে।
সেনাদলের জন্য পূর্ব এশিয়ার প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্য হইতে লোক সংগ্রহে সচেষ্ট হইতে আবেদন জানাইলেন মোহন সিং।