আজাদী সৈনিকের ডায়েরী/সুভাষচন্দ্র কর্ত্তৃক বণিক সভায় অর্থের জন্য আবেদন
২৫শে অক্টোবর ১৯৪৩:
আজ মালয় ও সিঙ্গাপুরের ভারতীয় বণিকদের এক সভা হইল। রাওএর সঙ্গে আমি সুভাষচন্দ্রের বক্তৃতা শুনিতে গেলাম।
সুভাষচন্দ্র বলিলেন—‘যুদ্ধের সময় দেশের সমগ্র ধন-সম্পত্তি এবং নরনারীর উপর দেশ ও জাতির দাবি অগ্রগণ্য। দেশের সঙ্কটজনক মুহূর্ত্তে বৃটেন, জার্ম্মাণি, রুশিয়া প্রভৃতি দেশে জাতির সমস্ত সম্পদ, কল-কারখানা, শিল্প ও বাড়ীঘর যুদ্ধের কার্য্যে নিযুক্ত হইয়াছে। জনসাধারণ স্বেচ্ছায় অর্থদান করিতেছে এবং তাহাদের আয়ের প্রায় সবটাই দিতেছে আয়কর হিসাবে। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য আমাদের প্রয়োজন সৈন্যদল ও আধুনিক রণসম্ভার—এরোপ্লেন, ট্যাঙ্ক, কামান। ইহার জন্য আবশ্যক প্রচুর অর্থের। আমরা যদি আজ জাপানের কাছে অর্থ চাহি—তাহারা দিবে; কিন্তু তাহার বিনিময়ে হয়তো আমাদের তাহাদের কবলে পড়িতে হইবে। ইহা আমি চাহি না। আমরা যতদূর সম্ভব নিজেদের চেষ্টায় আমাদের স্বাধীনতা আনিব। বিদেশীর সাহায্য যতটা অযাচিতভাবে পাই লইতে বাধা নাই; কিন্তু আমাদের নিজেদের সামর্থ্যের উপর নির্ভর করিয়া চলিতে হইবে। ভারতীয় স্বাধীনতা সঙ্ঘ গঠনের ফলে জাপ-অধিকৃত অঞ্চলে আপনারা অন্যান্য জাতি অপেক্ষা বেশী সুবিধা ভোগ করিতেছেন এবং অর্থ উপার্জ্জন করিয়াছেন। আজাদ হিন্দ গভর্ণমেণ্ট আপনাদের ধনসম্পত্তি রক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করিয়াছে। আমি আশা করি আপনাদের অর্থের শতকরা দশ ভাগ মাত্র আজাদ হিন্দ গভর্ণমেণ্টকে দান করিবেন।’
সভার শেষে নেতাজীর গলার মালা এক লক্ষ টাকায় বিক্রীত হইল। আশা হইতেছে অনেক টাকা উঠিবে। এই অঞ্চলের ভারতবাসীদের যে এত টাকা আছে তাহা আমার ধারণা ছিল না।