আত্মচরিত (প্রফুল্লচন্দ্র রায়)/পঞ্চবিংশ পরিচ্ছেদ
পঞ্চবিংশ পরিচ্ছেদ
বাংলার তিনটি জেলার আর্থিক অবস্থা
বাংলায় ২৮টি জেলা আছে। তাহার প্রত্যেকটি জেলার আর্থিক অবস্থার বর্ণনা করিতে গেলে, পাঠকদের পক্ষে তাহা প্রীতিকর হইবে না। সেই কারণে আমি বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলের তিনটি জেলা বাছিয়া লইয়াছি—যথা—পশ্চিম বঙ্গে বাঁকুড়া, পূর্ব বঙ্গে ফরিদপুর এবং উত্তর বঙ্গে রংপুর।
(১) ব্রিটিশ আমলে বাঁকুড়া—বাংলার একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত জেলা
হিন্দু ও মুসলমান রাজত্বে, নিয়মিত ভাবে পুষ্করিণী ও খাল কাটা হইত, বড় বড় বাঁধ দিয়া গ্রীষ্মকালের জন্য জল ধরিয়া রাখা হইত। কিন্তু বাংলায় ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার সঙ্গে বাংলার স্বাস্থ্য ও আর্থিক উন্নতির পক্ষে একান্ত প্রয়োজনীয় এই প্রথা লোপ পাইতে লাগিল। পলাশীর যুদ্ধের ৪০ বৎসর পরে কোলব্রুক লিখিয়াছিলেন, “বাঁধ, পুকুর, জলপথ প্রভৃতির উন্নতি হওয়া দূরে থাকুক, ঐ গুলির অবনতিই হইতেছে।” ১৭৭০ খৃষ্টাব্দ হইতে আরম্ভ করিয়া বাঁকুড়ার অবস্থার আলোচনা করিলেই বিষয়টি বুঝা যাইবে।
১৭৬৯-৭০ সালের দুর্ভিক্ষে (‘ছিয়াত্তরের মন্বন্তর’) বাংলার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ লোক মরিয়া গিয়াছিল। বাঁকুড়া ও তাহার সংলগ্ন বীরভূমের উপর ইহার আক্রমণ প্রবল ভাবেই হইয়াছিল। তৎপূর্বে মারাঠা অভিযানের ফলে এই অঞ্চল বিধস্ত হইয়াছিল। এই দুর্ভিক্ষের শোচনীয় পরিণাম বর্ণনা করিবার ভাষা নাই। “বাংলার প্রাচীন পরিবার সমূহ, যাহারা মোগল আমলে অর্ধ্ব স্বাধীন ছিল, এবং ব্রিটিশ গবর্ণমেণ্ট পরে যাহাদিগকে জমিদার বা জমির মালিক বলিয়া স্বীকার করিয়া লইয়াছিলেন, তাহাদের অবস্থাই অধিকতর শোচনীয় হইল। ১৭৭০ খৃষ্টাব্দ হইতে আরম্ভ করিয়া বাংলার প্রাচীন বনিয়াদী সম্প্রদায়ের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ধ্বংস প্রাপ্ত হইল।[১] কিন্তু তৎসত্ত্বেও জমিদার ও জোতদারদের নিকট হইতে পাই পয়সা পর্যন্ত হিসাব করিয়া নিঃশেষে খাজনা আদায় করা হইল। লর্ড কর্ণওয়ালিস এইরূপ ধ্বংসপ্রাপ্ত কয়েকটি স্থান পরিদর্শন করিয়া ১৭৮৯ খৃষ্টাব্দে বলেন,—“জমি চাষ করা হয় নাই। বাংলায় কোম্পানীর সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশ শ্বাপদসংকুল অরণ্যে পরিণত হইয়াছে।”[২]
ইতিহাসে লিখিত আছে যে, বীরভূমের রাজা সাবালক হওয়ায় এক বৎসরের মধ্যেই বাকী খাজনার দায়ে কারারুদ্ধ হন এবং বিষ্ণুপুরের সম্ভ্রান্ত রাজা, বহু বৎসর কষ্টভোগ করিবার পর কারামুক্ত হন ও অল্প দিনের মধ্যেই মারা যান।
এই খানেই শেষ নয়। বিষ্ণুপুরের রাজার বংশধরেরা ক্রমে ক্রমে নিঃস্ব ও সর্বস্বান্ত হইয়া যান এবং যে বিশাল রাজ্যের উপরে তাঁহারা এক কালে প্রভুত্ব করিতেন, তাহা খণ্ড খণ্ড হইয়া নূতন জমিদারদের হস্তে যাইয়া পড়ে। ১৮০৬ খৃষ্টাব্দে বর্ধমানের মহারাজা ইহার একটি বৃহৎ অংশ ক্রয় করেন। ১৮১৯ সালের ৮নং রেগুলেশান, বিশেষভাবে বর্দ্ধমানরাজের স্বার্থরক্ষার জন্যই প্রবর্তিত হয় এবং এই রেগুলেশানের বলে বর্দ্ধমানের মহারাজা চিরস্থায়ী খাজনা বন্দোবস্তে ৩৪১টি পত্তনী তালুক ইজারা দেন। পত্তনিদারেরা আবার দরপত্তনিদারদের ইজারা দেয়। এইরূপে যে প্রথা প্রবর্তিত হয়, তাহার ফলে বাঁকুড়ার অধিবাসীরা, এবং কিয়ৎ পরিমাণে অন্যান্য জেলার লোকেরাও বহু দুঃখ ভোগ করিয়া আসিতেছে।
বিষ্ণুপুরের রাজা বিষ্ণুপুরেই থাকিতেন এবং প্রজাদের শাসন করিতেন। তিনি হাজার হাজার বাঁধ নির্মাণ করিয়াছিলেন। বর্ষাকালে এই সব বাঁধে জল ভর্তি হইয়া থাকিত এবং গ্রীষ্মকালে জলাভাবের সময়ে তাহা কাজে লাগিত। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী সর্বাপেক্ষা বড় প্রবাসী ভূস্বামী হইয়া উঠিলেন। জগতে এরূপ অস্বাভাবিক দৃষ্টান্ত দেখা যায় নাই। প্রসিদ্ধ ‘সূর্যাস্ত আইনের’ বলে—রাজস্ব সংগ্রহ বিষয়ে তাঁহারা নিশ্চিন্ত হইলেন। কোম্পানীর অধীনে আবার জমিদারেরা ছিলেন, তাঁহারাও জোতদারদের নিকট খাজনা আদায় সম্বন্ধে নিশ্চিন্ত হইলেন। প্রবাদ আছে, যাহা সকলের কাজ তাহা কাহারও কাজ নয়,—‘ভাগের মা গঙ্গা পায় না’। সুতরাং যে জলসেচ প্রণালী বহু যত্নে, কৌশলে ও দূরদর্শিতার সহিত প্রবর্তিত হইয়াছিল, তাহা উপেক্ষিত ও পরিত্যক্ত হইল।
মিঃ গুরুসদয় দত্ত বাঁকুড়ার ম্যাজিষ্ট্রেট ও কালেক্টররূপে কতকগুলি সমবায় সমিতি গঠন করিয়া ঐ জেলার কতকগুলি পুরাতন বাঁধ সংস্কার করিতে বিশেষ চেষ্টা করিয়াছিলেন। তিনি লিখিয়াছেন:—
“পশ্চিম বঙ্গে পুকুর, বাঁধ প্রভৃতি জলসেচ প্রণালীর ধ্বংসের সহিত তাহার পল্লিধ্বংসের কাহিনী ঘনিষ্ঠ ভাবে জড়িত। পশ্চিম বঙ্গের যে কোন জেলায় গেলে দেখা যাইবে, অনাবৃষ্টির পরিণাম হইতে আত্মরক্ষার জন্য জল সঞ্চয় করিয়া রাখিবার উদ্দেশ্যে, সেকালের জমিদারেরা অসাধারণ দূরদর্শিতা ও বুদ্ধিমত্তার সহিত—অসংখ্য বাঁধ ও পুকুর কাটিয়াছিলেন। এই বাঁধ ও পুকুর নির্মাণের জন্য বাঁকুড়াই বিখ্যাত ছিল,—একদিকে মল্লভূমির জমিদারেরা, অন্যদিকে বিষ্ণুপুরের রাজারা এই কার্যে বিশেষ রূপে উদ্যোগী ছিলেন। আবার ইঁহাদেরই বংশধরদের অদূরদর্শিতা, সঙ্কীর্ণতা, ও আত্মহত্যাকর নীতির ফলে এই সব অসংখ্য বাঁধ ও পুকুর—যাহার উপর সমগ্র জেলার স্বাস্থ্য নির্ভর করিত—ক্রমে ক্রমে ধ্বংস হইয়া গেল। ছোট ছোট খাল দ্বারা বড় বড় বাঁধগুলি পুষ্ট হইত এবং এই সব বড় বড় বাঁধ হইতে চতুর্দিকের জমিতে জল সেচন করা হইত। এই সব বাঁধে কেবল জমিতেই জল সেচন করা হইত না, মানুষ ও পশুর পানীয় জলের জন্যও ইহা ব্যবহৃত হইত।
“পরবর্তী বংশধরেরা তাহাদের স্বাস্থ্য ও ঐশ্বর্যের উৎস স্বরূপ এই সব বাঁধ ও পুকুরকে উপেক্ষা করিতে লাগিল। তাহাদের অকর্মণ্যতা ও ঔদাসীন্যের ফলে বৎসরের পর বৎসর পলি পড়িয়া এই সব জলাধার ভরাট হইতে লাগিল, অবশেষে ঐগুলি সম্পূর্ণ শুষ্ক ভূমি অথবা ছোট ছোট ডোবাতে পরিণত হইল। চারিপাশের উচ্চ বাঁধগুলি পতিত জমি হইয়া দাঁড়াইল।”
অন্য এক স্থানে মিঃ দত্ত লিখিয়াছেন,—“ইহার ফলে বাঁকুড়া আজ মরা পুকুরের দেশ। বহু বাঁধ একেবারে লুপ্ত হইয়া গিয়াছে; কতকগুলির সামান্য চিহ্ন মাত্র অবশিষ্ট আছে। কোন কোনটি পঙ্কিল জল পূর্ণ সামান্য ডোবাতে পরিণত হইয়াছে। এক বাঁকুড়া জেলাতেই প্রায় ৩০।৪০ হাজার বাঁধ, পুকুর প্রভৃতি ছিল; উপেক্ষা, অকর্মণ্যতা ও ঔদাসীন্যের ফলে ঐগুলি ধ্বংস হইয়া গিয়াছে; এবং বাঁকুড়া জেলাতে আজ যে দারিদ্র্য, ব্যাধি, অজন্মা, ম্যালেরিয়া, কুষ্ঠ ব্যাধি প্রভৃতির প্রাদুর্ভাব হইয়াছে, তাহা ঐ প্রাচীন জল সরবরাহের ব্যবস্থা নষ্ট হইয়া যাইবারই প্রত্যক্ষ ফল।”
বাংলায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে গবর্ণমেণ্টকে নির্দিষ্ট রাজস্বের জন্য চিন্তা করিতে হয় না, এবং জলসেচের ব্যবস্থার ফলে জমির যদি উন্নতি হয়, তাহা হইলেও এই রাজস্ব বৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা নাই। এই কারণেই জলসেচ ব্যবস্থার প্রতি শাসকগণের এমন ঔদাসীন্য। আমাদের গবর্ণমেণ্টের উদার শাসন প্রণালীতে লোকের শ্রী ও কল্যাণের মূল্য কিছুই নাই বলিলে হয়। ইহার তুলনায় সিন্ধু দেশের শুষ্ক মরুভূমির জন্য গবর্ণমেণ্টের অতিমাত্র কর্মোৎসাহ লক্ষ্য করিবার বিষয়। সুক্কুর বাঁধের স্কীমে বহুবিস্তৃত স্থানে জলসেচের ব্যবস্থা হইবে এবং উহার জন্য ব্যয় পড়িবে প্রায় ২০।২৫ কোটী টাকা। অবশ্য, স্কীমের ফলে উৎপন্ন খাদ্য শস্যের (গমের) পরিমাণ বৃদ্ধি পাইবে, কিন্তু এই স্কীমের মূলে আর একটি উদ্দেশ্য আছে। সুক্কুর বাঁধের ফলে যে জমির উন্নতি হইবে, সেখানে লম্বা আঁশযুক্ত তূলার চাষ ভাল হইবে। ল্যাঙ্কাশায়ার, তূলার জন্য আর আমেরিকার মুখাপেক্ষী হইয়া থাকিতে চায় না। এই কারণে একদিকে সুদানের উপর তাহাদের বজ্রমুষ্টি নিবন্ধ হইয়াছে, অন্যদিকে ভারতের করদাতাদের কষ্টলব্ধ অর্থ বেপরোয়া ভাবে ব্যয় করা হইতেছে। এখানেও সাম্রাজ্যনীতিই প্রভাব বিস্তার করিয়াছে।
একথা কেহই বলিবে না যে, ব্রিটিশ গবর্ণমেণ্ট দুষ্ট বৃদ্ধির প্রেরণায় ইচ্ছা করিয়া এই উর্বরা জেলার (বাঁকুড়ার) ধ্বংস সাধন করিয়াছেন; কিন্তু তাঁহাদের উপেক্ষা ও ঔদাসীন্যই যে ইহার জন্য বহুল পরিমাণে দায়ী, তাহাতে সন্দেহ নাই। মিঃ দত্ত ব্যাধির মূল নির্ণয় করিতে গিয়া অর্দ্ধ পথে থামিয়া গিয়াছেন। একজন ‘ব্যুরোক্রাট’ হিসাবে স্বভাবতই তিনি এ কার্যে অক্ষমতা প্রদর্শন করিয়াছেন।
আমাদের অর্থনৈতিক দুর্গতি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সঙ্গে সর্বত্রই জড়িত; ‘শ্বেত জাতির দায়িত্ব’ আমদানী হইবার সঙ্গে সঙ্গে এই সুন্দর বাঁকুড়া জেলা নিশ্চিতরূপে ধ্বংসের পথে গিয়াছে। প্রতিহিংসাপরায়ণ দেবদূতের পক্ষসঞ্চালনে যেমন চারিদিক শুকাইয়া যায়, ইহাও তেমনি শোচনীয় ব্যাপার। কার্যকারণ সম্বন্ধ এক্ষেত্রে স্পষ্টরূপেই প্রমাণ করা যাইতে পারে।
আমেরিকাতে সমবায় প্রণালী যে আশ্চর্যরূপ সুফল প্রসব করিয়াছে, মিঃ দত্ত তাহার একটি চমৎকার বর্ণনা প্রদান করিয়াছেন। যথা:—
“আমেরিকায় কৃষিকার্যে সমবায় প্রণালীর কার্যকারিতা বর্ণনা করিতে গিয়া হ্যারল্ড পাওয়েল বলিয়াছেন যে, ১৯১৯ সালে আমেরিকার সমগ্র কর্ষণযোগ্য ভূমির (১ কোটী ৪০ লক্ষ একর) প্রায় এক-তৃতীয়াংশেই সমবায় প্রণালীতে কাজ হইয়াছিল। আমার বিশ্বাস আমেরিকার জলসেচ ব্যবস্থায় সমবায় প্রণালী যে ভাবে প্রচলিত হইয়াছে, এমন আর কিছুতে নহে। আমেরিকার এই সমবায় প্রণালী পশ্চিম বঙ্গ এবং ভারতের অন্যান্য স্থানের পক্ষে বিশেষ ভাবে লক্ষ্য করিবার বিষয়। আমেরিকার সমবায় প্রণালী জলহীন মরুভূমিবৎ উটা প্রদেশের উন্নতি কল্পেই প্রথম আরম্ভ হইয়াছিল। পশ্চিম বঙ্গ ও বিহারের বর্তমান অবস্থার চেয়ে উটা প্রবেশ তখন অধিকতর জলাভাব-গ্রস্ত ছিল।
“সমবায় প্রণালীই উটা প্রদেশের উন্নতির মূল কারণ একথা বলা যাইতে পারে। এই প্রণালীতে জলসেচ ব্যবস্থা এখানে যেরূপ সাফল্য লাভ করিয়াছিল, তাহার ফলে উহা অন্যান্য শিল্পেও অবলম্বিত হয়। ইহার প্রমাণ, আমেরিকাতে অসংখ্য সর ও মাখনের ব্যবসা, ফলের ব্যবসা, ষ্টোর প্রভৃতি সমবায় প্রণালীতে চলিতেছে।”
মিঃ দত্ত বাঁকুড়ার অধিবাসীদিগকে মর্মস্পর্শী ভাষায় উটার অধিবাসীদের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করিতে বলিয়াছেন, কিন্তু তিনি ব্যাধির মূল কারণ দেখাইতে পারেন নাই; এই জায়গায় তিনি পুরোদস্তুর সরকারী কর্মচারী হিসাবে নিজের স্বরূপ প্রকাশ করিয়া ফেলিয়াছেন। তিনি ইচ্ছা করিয়াই ভুলিয়া গিয়াছেন যে, উটার অধিবাসীরা অ্যাংলো-স্যাক্সন জাতীয়, তাহাদের মধ্যে বহু কাল হইতে স্বায়ত্তশাসন এবং আত্মনির্ভরতার নীতি প্রচলিত আছে। ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যের ভাবও তাহাদের মধ্যে সুদৃঢ়। পক্ষান্তরে ভারতবাসীদের মধ্যে যাহা কিছু স্বায়ত্তশাসনের ভাব ছিল, তাহা বিদেশী শাসনের আমলে প্রাচীন গ্রাম্য পঞ্চায়েৎ ধ্বংস হইবার সঙ্গে সঙ্গে লোপ পাইয়াছে।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ও তাহার আধুনিক অসংখ্য জোতদারী (বা পত্তনীদারী) ও দরজোতদারীর ব্যবস্থাই বাঁকুড়ার দুর্ভাগ্য ও বিপত্তির কারণ, ইহা আমি দেখিয়াছি। এই অংশ লিখিত হইবার পর আমি স্যার উইলিয়াম উইলকক্সের বহি পাঠ করিয়াছি। তিনিও বাংলাদেশের এই দুর্গতির মূল নির্ণয় করিতে গিয়া বলিয়াছেন,—
“আপনাদের ভূমি রাজস্বের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত, মূলতঃ কৃষকদের মঙ্গলের জন্যই প্রবর্তিত হইয়াছিল বটে, কিন্তু উহার ফল অনিষ্টকর হইয়াছে; আপনাদের বংশপরম্পরাগত সহযোগিতার শক্তি উহাতে নষ্ট হইয়া গিয়াছে, জলসেচ ব্যবস্থা লুপ্ত হইয়াছে এবং ম্যালেরিয়া ও দারিদ্র্যের আবির্ভাব হইয়াছে—The Restoration of the Ancient Irrigation of Bengal, p. 24.
এই বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি আরও বলিয়াছেন:—
“বাংলাদেশ এত কাল ধরিয়া সমগ্র ভারতের সাধারণ তহবিলে লক্ষ লক্ষ টাকা যোগাইয়াছে; কিন্তু পূর্ব ও পশ্চিম বঙ্গ বাংলার এই দুই অংশই এই দেড়শত বৎসর ধরিয়া, গবর্ণমেণ্টের রাজধানী থাকা সত্ত্বেও অধিকতর দারিদ্র্যপীড়িত ও অস্বাস্থ্যকর হইয়া উঠিয়াছে। ভারতে একটা প্রবাদ আছে—‘প্রদীপের নীচেই অন্ধকার’; এক্ষেত্রে তাহা বিশেষ ভাবেই খাটে।”
এদেশে জলসেচের প্রয়োজনীয়তা এবং অধিবাসীদের জন্য স্বল্প ব্যয়ে প্রচুর জল সরবরাহের উপযোগিতা মুসলমান শাসকেরা বুঝিতে পারিয়াছিলেন। আর একজন ইংরাজ লেখক তাঁহাদের সম্বন্ধে লিখিয়াছেন:—
“কোন নিরপেক্ষ ঐতিহাসিক কি অস্বীকার করিতে পারেন যে, ১৪শ শতাব্দীর পাঠান শাসকেরা ইংরাজ আমলের বণিকরাজগণের অপেক্ষা অধিকতর দূরদর্শী, উদারনীতিক, লোকহিতপ্রবণ, এবং প্রজাদের প্রীতি ও শ্রদ্ধার পাত্র ছিল? বণিক রাজগণ, আত্মপ্রশংসাতেই তৃপ্ত, প্রজাদের উন্নতিকর কোন ব্যবস্থার প্রতি তাঁহারা উদাসীন, এমন কি তৎসম্বন্ধে অবজ্ঞার ভাবই পোষণ করিয়াছেন, এবং তাঁহাদের চোখের সম্মুখে যে অপূর্ব সভ্যতা ও শিল্পৈশ্বর্য ক্রমে ক্রমে নষ্ট হইয়া গিয়াছে, সেজন্য তাঁহারা বিন্দুমাত্র লজ্জা অনুভব করেন নাই। সেই প্রাচীন সভ্যতার স্মৃতিচিহ্ন এখনো বর্তমান রহিয়াছে। কিরূপে তাহা জলসেচের ব্যবস্থা করিয়া শুষ্ক মরুভূমিবৎ স্থান সমূহকেও পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম উর্বর ও ঐশ্বর্যশালী প্রদেশে পরিণত করিয়াছিল, তাহার প্রমাণ এখনও আছে।......
“যাঁহারা নিরপেক্ষ ও ধীর ভাবে ভারতের বর্তমান জনহিতকর কার্যাবলী পরীক্ষা করিবেন, তাঁহারাই স্বীকার করিতে বাধ্য হইবেন যে, ভারতের লক্ষ লক্ষ লোকের পক্ষে পাঠান ফিরোজের ৩৯ বৎসরের শাসনকাল, ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর এক শতাব্দী ব্যাপী শাসনকাল অপেক্ষা অধিকতর কল্যাণকর ছিল। এই এক শতাব্দীকাল বলিতে গেলে ভারতের পক্ষে সম্পূর্ণ অপব্যয় স্বরূপ হইয়াছে।”—১৯২৯, ১৫ই জুনের ‘ওয়েল ফেয়ারে’, বি. ডি. বসু কর্তৃক উদ্ধৃত।
একখানি সরকারী দলিলে লিখিত আছে:—
“সুলতান অত্যন্ত জলাভাব দেখিয়া মহানুভবতার সঙ্গে হিসার ফিরোজা এবং ফতেবাদ সহরে জল সরবরাহের ব্যবস্থা করিবার সঙ্কল্প করিলেন। তিনি যমুনা ও শতদ্রু এই দুই নদী হইতে দুইটি জল প্রবাহ সহরে আনিলেন। যমুনাগত জল প্রবাহের নাম রাজিওয়া, অন্যটির আলগখানি। এই দুইটি জল প্রবাহই কর্ণালের নিকট দিয়া আসিয়াছিল এবং ৮০ ক্লোশ চলিবার পর একটি খাল দিয়া হিসার সহরে জল যোগাইয়াছিল।... ইহার পূর্বে চৈত্রের ফসল নষ্ট হইত, কেন না জল ব্যতীত গম জন্মিতে পারে না। খাল কাটিবার পর, ফসল ভাল হইতে লাগিল। ... আরও বহু জলপ্রবাহ এই সহরে আনিবার ব্যবস্থা হইল এবং ফলে এই অঞ্চলের ৮০।৯০ ক্রোশ ব্যাপী স্থান কর্ষণযোগ্য হইয়া উঠিল।[৩]
“রোটক খালের উৎপত্তি এইরূপে হইয়াছিল। ১৬৪৩ খৃষ্টাব্দে হিসার ফিরোজা (ফিরোজাবাদ) হইতে দিল্লী সহর পর্যন্ত জলসেচের জন্য একটি খাল খনন করা হয়। আলিমর্দান খাঁ আড়াই শত বৎসর পূর্বে তৈরী এই খালের সাহায্য যতদূর সম্ভব লইয়াছিলেন এবং তাহা হইতে নূতন খাল কাটিয়াছিলেন।”—Rohtak District Gazetteer, 1884, p. 3.
এই সমস্ত কথা এখন উপন্যাস বলিয়াই মনে হয়। আমাদের সভ্য গবর্ণমেণ্ট কুপার্স হিল কলেজে এবং পরবর্তী কালে ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে শিক্ষিত ইঞ্জিনিয়ারদের গর্ব করিয়া থাকেন,—কিন্তু তৎসত্ত্বেও ১৪শ শতাব্দীর মুসলমান শাসকদের নিকট হইতে তাঁহাদের অনেক কিছু শিখিবার আছে।
জলসেচের এই অবস্থা! কিন্তু এই অভিশপ্ত জেলার (বাঁকুড়ার) দুঃখ দুর্দশা, আরও নানা কারণে এখন চরম সীমায় পৌঁছিয়াছে। রেশমের গুটী হইতে সূতাকাটা এবং বস্ত্রবয়ন এই জেলার একটি প্রধান শিল্প ছিল। সহস্র সহস্র লোক এই বৃত্তির দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করিত। পিতল ও কাঁসার শিল্পের দ্বারাও বহু সহস্র লোকের (কাঁসারীদের) অন্ন সংস্থান হইত। কিন্তু এই দুই শিল্পই এখন ধ্বংসোন্মুখ।
রেশম বস্ত্রের শিল্পই বোধহয় বাঁকুড়ার সর্বাপেক্ষা প্রধান শিল্প। শত শত পরিবার ইহার উপর নির্ভর করিয়া থাকে। বিষ্ণুপুর, সোনামুখী এবং বীরসিংহের তাঁতিরা, লাল, হলদে, নীল, বেগ্নি, সবুজ রঙের রেশমের শাড়ী এবং বিবাহের জন্য রেশমের ‘জোড়’ তৈরী করিয়া থাকে। স্থানীয় মহাজনেরা এই সব রেশমের কাপড় ভারতের নানা স্থানে রপ্তানী করিয়া থাকে। এদেশে মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের লোকেরা বিবাহ উপলক্ষে এই সব রেশমের শাড়ী ও জোড় বহুল পরিমাণে ব্যবহার করিয়া থাকে। পাঁচ ছয় বৎসর পূর্বেও, প্রত্যেক তাঁতিপরিবার তাঁত পিছু দৈনিক দুই টাকা হইতে তিন টাকা পর্যন্ত রোজগার করিত। ব্রিটিশ সাম্রাজ্য প্রদর্শনী হইবার কয়েক মাস পর হইতেই বিষ্ণুপুরের রেশমের কাপড়ের মূল্য হ্রাস হইতে থাকে। রেশমের সূতা, জরী প্রভৃতি কাঁচা মালের মূল্য পূর্ববৎই থাকে। রেশমের কাপড়ের মূল্য কমিতে কমিতে এতদূর নামিয়া আসিয়াছে যে, তাঁতিরা অনেকস্থলে বাধ্য হইয়া কাপড় বোনা ছাড়িয়া দিয়াছে।
“দেশের প্রধান ব্যক্তিগণ বা গবর্ণমেণ্ট এ পর্যন্ত এই দূরবস্থার কারণ নির্ণয় করিতে চেষ্টা করেন নাই। বিষ্ণুপুর শিল্পপ্রধান সহর। এ স্থানের অধিকাংশ লোক তন্তুবায়, কর্মকার বা শাঁখারী। এই তাঁতিদের এবং কামারদের অত্যন্ত দুর্দশা হইয়াছে।
“পিতল শিল্পের বাজার অত্যন্ত মন্দা। বিদেশ হইতে অ্যালুমিনিয়াম ও এনামেলের বাসন আমদানীর ফলে এই শিল্পের অবনতি হইয়াছে; এই শিল্পের পুনরুদ্ধারের আশা নাই।
“প্রাচীন বিষ্ণুপুর সহরের দুইটি প্রধান শিল্প এইভাবে নষ্ট হওয়াতে, এই স্থানের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় হইয়াছে এবং শিল্পী ও ব্যবসায়ীরা বিষ্ণুপুর ত্যাগ করিয়া অন্যত্র চলিয়া যাইতেছে। বিষ্ণুপুর সহরের শতকরা ৭০ জন লোক এজন্য দুর্গতিগ্রস্ত হইয়াছে।”[৪]
(২) ফরিদপুর—বাংলায় খাদ্যাভাব
আমি উপরে যে জেলার অবস্থা বর্ণনা করিয়াছি, তাহা বর্ষাকাল ব্যতীত অন্য সময়ে শুষ্ক ও জলহীন, এবং অনেক সময়ে বৃষ্টিও ঐ অঞ্চলে ভাল হয় না। পক্ষান্তরে অন্য একটি জেলার কথা বলিব, যাহা গঙ্গার বদ্বীপ অঞ্চলে অবস্থিত এবং প্রকৃতি যাহার উপর সদয়। এখানে বর্ষার সময়ে জমির উপর পলিমাটী পড়িয়া তাহার উর্বরাশক্তি বৃদ্ধি করে। আরও একটি কারণে, এই জেলার কথা বলিতেছি;—আমি কয়েকবার এই জেলায় ভ্রমণ করিয়াছি, এবং লোকের প্রকৃত অবস্থা পর্যবেক্ষণ করিবার সুযোগ পাইয়াছি। একটা প্রধান কথা মনে রাখিতে হইবে,—বাংলার সর্বত্র কৃষিজাত দ্রব্যই আয়ের একমাত্র পথ,—১৮৭০ সালের কোঠা পর্যন্ত যে সমস্ত আনুষঙ্গিক বৃত্তি সহস্র সহস্র লোক অবলম্বন করিয়া বাঁচিত, তাহা সর্বত্রই নষ্ট হইয়া গিয়াছে। বয়নশিল্প দ্রুত লোপ পাইতেছে,—পূর্বে নদীতে মাল ও যাত্রী বহনের জন্য যে সব বড় বড় নৌকা চলিত, বিদেশী কোম্পানীর জাহাজ তাহার স্থান অধিকার করিয়াছে। যে সব তাঁতি, জোলা ও মাঝি মাল্লাদের মুখের অন্ন কাড়িয়া লওয়া হইয়াছে, তাহারা সকলে এখন কৃষিবৃত্তি অবলম্বন করিয়াছে। ফলে জমির উপর অতিরিক্ত চাপ পড়িয়াছে।[৫]
অধুনাতন রিপোর্ট হইতে, জেলার (ফরিদপুর) উৎপন্ন কৃষিজাত দ্রব্যের একটা তালিকা দেওয়া হইল:—
ফরিদপুরের কৃষিজাত পণ্য[৬]
ফসলের নাম | জমির পরিমাণ | প্রতি একরে উৎপন্ন |
মোট উৎপন্ন | প্রতি মণের দর | মোট মূল্য | |||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
(একর) | মণ | সে | ছ | (মণ) | টা | আঃ | পাঃ | |||
আশু ধান | ২,৩৯,৩০০ | ১০ | ৩০ | ০ | ২৫,৭২,৪৭৫ | ৬ | ১৩ | ০ | ১,৭৫,২৪,৯৮৫ | |
আমন ধান | ৭,৫৯,৯০০ | ১২ | ২০ | ০ | ৯৪,৯৮,৭৫০ | ৭ | ৪ | ০ | ৬,৮৮,৬৫,৯৩৭ | |
বোরো ধান | ১৪,৪০০ | ১৪ | ০ | ০ | ২,০১,৬০০ | ৪ | ০ | ০ | ৮,০৬, ৪০০ | |
গম | ২,৭০০ | ৮ | ৩০ | ০ | ২৩,৬২৫ | ৪ | ১৪ | ০ | ১,১৫,১৭১ | |
যব | ১১,৭০০ | ১০ | ৩০ | ০ | ১,২৫,৭৭৫ | ৩ | ৬ | ০ | ৪,২৪,৪৯০ | |
ছোলা | ৩,৫০০ | ৯ | ৩০ | ০ | ৩৪,১২৫ | ৪ | ৮ | ০ | ১,৫৩,৫৬২ | |
ডাল | ১,০১,২০০ | ১০ | ৩০ | ০ | ১০,৮৭,৯০০ | ৪ | ০ | ০ | ৪৩,৫১,৬০০ | |
তিসি | ৬,০০০ | ৫ | ৩০ | ০ | ৩৪,৫০০ | ৭ | ০ | ০ | ২,৪১,৫০০ | |
তিল | ১১,২০০ | ৬ | ০ | ০ | ৬৭,২০০ | ৬ | ০ | ০ | ৪,০৩,২০০ | |
সরিষা | ২৪,৬০০ | ৬ | ০ | ০ | ১,৪৭,৬০০ | ৭ | ২ | ০ | ১০,৫১,৬৫০ | |
মসলা | ২৮,৩০০ | প্রতি একর | ২৫ | ০ | ০ | ৭,০৭,৫০০ | ||||
গুড় | ৭,৪০০ | ৩৭ | ০ | ০ | ২,৭৩,৮০০ | ৯ | ৭ | ০ | ২৫,৮৩,৯৮৭ | |
পাট | ২,১১,৭০০ | ১৬ | ১০ | ১০ | ৩৪,২২,২৬২ | ৯ | ৬ | ০ | ৩,২০,৮৩,৭১৩ | |
তামাক | ৪,৪০০ | ৬ | ০ | ০ | ২৬,৪০০ | ১৮ | ০ | ০ | ৪,৯০,০৫০ | |
ফল ও শাক সব্জী | ৬২,২০০ | প্রতি একর | ১৫ | ০ | ০ | ৯,৩৩,০০০ | ||||
মোট টাকা | ১৩,০৭,৩৬,৭৪৫ |
উপরে লিখিত হিসাব হইতে দেখা যাইবে যে, ফরিদপুরের লোকের মাথা পিছু বার্ষিক আয় ৫৭৲ হইতে ৫৮৲ টাকা,—(ফরিদপুরের লোকসংখ্যা ২২ লক্ষ)। জ্যাক ও ও’মালী সকল শ্রেণীর লোকের হিসাব ধরিয়া বার্ষিক আয় মাথা পিছু গড়ে ৫২৲ টাকা, ঋণ ১১৲ টাকা এবং কর ২৸৹ আনা ঠিক করিয়াছেন।[৭] জ্যাক বলেন, যে সব লোক শিল্পকার্যে নিযুক্ত আছে, তাহাদের সংখ্যা শতকরা ৮ জনের বেশী হইবে না, এবং এই অল্প সংখ্যক লোকের মধ্যেও এক-তৃতীয়াংশ লোককেও ‘কারিগর’ বলা যায় না। অধিকাংশ শ্রমিক কুলীর কাজ অথবা রাস্তা বা পুকুরে মাটি কাটার কাজ করে। তাহারা ভাল উপায় করে, কাজের মরসামে দৈনিক এক টাকা অথবা মাসিক গড়ে ১৫৲ টাকা হইতে ২০৲ টাকা পর্যন্ত রোজগার করে। কিন্তু এই কাজের মরসুম বৎসরে দুইমাস থাকে কি না সন্দেহ। কেবল ফসল বোনা ও কাটার সময়ে মজুরের প্রয়োজন হয়। একথা সত্য যে, কতকগুলি ভদ্রলোক কেরাণী বা উকীলও কিছু পয়সা উপার্জন করে, কিন্তু তাহারা সাধারণতঃ গ্রামের অধিবাসী নহে। পক্ষান্তরে, বড় বড় জমিদারীর মালিকেরা তাঁহাদের জমিদারীতে বাস করেন না এবং তাঁহাদের জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা গ্রাম হইতে শোষণ করিয়া কলিকাতায় চালান হয়।[৮] ইহাও বিবেচ্য যে, প্রধান খাদ্যশস্য সম্বন্ধে ফরিদপুর জেলা আত্মনির্ভরক্ষম নহে। কেবলমাত্র ইহাই তত বেশী চিন্তার কারণ নহে। বস্তুতঃ, পাট উৎপাদনকারী জেলাগুলির পক্ষে ইহাকে সুলক্ষণও বলা যাইতে পারে, কেননা তাহারা তাহাদের বাড়তি টাকা দিয়া বাখরগঞ্জ, খুলনা প্রভৃতি জেলা হইতে চাউল কিনিতে পারে। কিন্তু যদি আমরা সমগ্র বাংলার মোট উৎপন্ন চাউলের হিসাব করি, তাহা হইলে স্তম্ভিত হইতে হয়। কেন-না যে বাংলা ভারতের মধ্যে একটি শ্রেষ্ঠ ঐশ্বর্যশালী প্রদেশ বলিয়া পরিচিত, সেখানে উৎপন্ন খাদ্য শস্যের পরিমাণ সমগ্র লোক সংখ্যার পক্ষে যথেষ্ট নহে। বাংলাদেশে মোট উৎপন্ন চাউলের পরিমাণ ২৭,৭৩,৭৬,৭০২ মণ। দুর্ভিক্ষ কমিশনের রিপোর্ট অনুসারে মাথা পিছু বার্ষিক ৭ মণ চাউল প্রয়োজন হয়। বাংলার লোকসংখ্যা ৪,৫৭,৯১,৬৮৯। সুতরাং বাংলার পক্ষে বার্ষিক ৩২,০৫,৪১,৮২৩ মণ চাউলের প্রয়োজন। অতএব বাংলাদেশে মোট ৪,৩১,৬৫,১২১ মণ চাউল কম পড়ে—অর্থাৎ মাথা পিছু বার্ষিক প্রায় এক মণ—অর্থাৎ মাথা পিছু দৈনিক খাদ্যের পরিমাণ ৩/৪ সের।[৯]
বাংলার একটি অন্যতম উর্বর জেলার অধিবাসীদের মাথা পিছু আয় এত কম, একথা আশ্চর্য মনে হইতে পারে। ইহার কারণ, লোক বসতির ঘনতা; এখানে প্রতি বর্গ মাইলে লোকসংখ্যা গড়ে ১৪৯ জন। হাওড়া (প্রতি বর্গ মাইলে ১,৮৮২ জন), ঢাকা (প্রতি বর্গ মাইলে ১,১৪৮ জন) এবং ত্রিপুরার (১৭২ জন) পরই ফরিদপুর বাংলা দেশের মধ্যে সর্বাপেক্ষা লোকবসতিপূর্ণ স্থান। এবং যদি কেবলমাত্র কর্ষণযোগ্য জমির হিসাব ধরা যায়, তবে ফরিদপুরের লোকবসতি প্রতি বর্গ মাইলে ১,২০২ হইয়া দাঁড়ায়। মিঃ টমসন ১৯২১ সালে বাংলার আদমসুমারির সুপারিন্টেণ্ডেণ্ট ছিলেন। তিনি বলেন যে, এই জেলার অবস্থা শীঘ্রই এমন দাঁড়াইবে যে, জমির উপর আর বেশী চাপ দেওয়ার উপায় থাকিবে না, অর্থাৎ কৃষিযোগ্য জমি আর পাওয়া যাইবে না। “পাশ্চাত্য দেশ সমূহে কৃষিজীবীদের মধ্যে লোকবসতির পরিমাণ সাধারণতঃ প্রতি বর্গ মাইলে ২৫০ জন। তদতিরিক্ত লোক শিল্প ও বাণিজ্য দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু গঙ্গার এই বদ্বীপ অঞ্চলে প্রতি বর্গ মাইলে লোকবসতির পরিমাণ তাহা অপেক্ষা তিন চার গুণ। ....... ইহা ছাড়া, এই অঞ্চলকে কেবল যে স্বাভাবিক নিয়ম অনুসারে বাড়তি লোকই পোষণ করিতে হয়, তাহা নহে, বাহির হইতে যে সব লোক আমদানী হয়, তাহাদিগকেও পোষণ করিতে হয়, এবং এই শ্রেণীর বাহিরের লোকের সংখ্যা বাংলাদেশে ক্রমেই বৃদ্ধি পাইতেছে। যুক্তপ্রদেশ এবং বিহার-উড়িষ্যায় লোকবসতির পরিমাণ বেশী এবং সেখানকার আর্থিক অবস্থাও ভাল নহে। সেই কারণে ঐ দুই প্রদেশ হইতে বাংলাদেশে ক্রমাগত লোক আমদানী হইতেছে। ১৯০১—১১ এবং ১৯১১—২১, এই দুই দশকে গড়ে ৫ লক্ষ করিয়া লোক ঐ সব অঞ্চল হইতে বাংলায় আমদানী হইয়াছে।” (পানাণ্ডিকর)
জমির উপর চাপ ক্রমেই বাড়িতেছে। ইহার ফলে জমি অতিরিক্ত রকমে ভাগ হইয়া যাইতেছে। বাংলার অধিকাংশ জেলায় কৃষকের জমির আয়তন গড়ে ২.২ একর। হিন্দু আইন অনুসারে উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সমান ভাগে জমি বণ্টন হয়, মুসলমান আইন অনুসারে জমি বিভাগ আরও বেশী হয়। ইহার ফলে জমি ক্রমাগত ভাগ হইতে হইতে আয়তন আধ একর পর্যন্ত হইয়া দাঁড়ায়। তুলনার সবিধার জন্য, অন্যান্য কয়েকটি দেশে কৃষকের জমির আয়তন নিম্নে দেওয়া হইল:—
ইংলণ্ড | ৬২.০০ একর |
জার্মানী | ২১.৫০ একর” |
ফ্রান্স | ২০.২৫ একর” |
ডেনমার্ক | ৪০.০০ একর” |
বেলজিয়াম | ১৪.৫০ একর” |
হল্যাণ্ড | ২৬.০০ একর” |
যুক্তরাষ্ট্র (আমেরিকা) | ১৪৮.০০ একর” |
জাপান | ৩.০০ একর” |
চীন | ৩.২৫ একর” |
(৩) রংপরের আর্থিক অবস্থা
তাজহাট এস্টেটের সহকারী ম্যানেজার শ্রীযুক্ত প্রমথনাথ মৈত্র ১৯১৯ সালের রংপর জেলার শিল্প সমূহের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণী প্রস্তুত করেন। এই রিপোর্টের স্থূল মর্ম এই যে, জেলার অধিকাংশ শিল্প নষ্ট হইয়া গিয়াছে, ফলে জমির উপর অতিরিক্ত চাপ পড়িয়াছে। রিপোর্ট হইতে উদ্ধৃত নিম্নলিখিত বিবরণ হইতে এই শোচনীয় অবস্থার কিছু, পরিচয় পাওয়া যাইবে:—
“রংপরের সমস্ত শিল্পই হাতের কাজ। ইহার প্রায় সকলই নষ্ট হইয়া গিয়াছে, কেবল চট বোনা ও গুড় তৈরীর কাজ কিছু কিছু আছে। স্থানীয় লোকেরাই এই সব শিল্পজাত ক্রয় করিত এবং নিকটবর্তী হাটেই উহা বিক্রয় হইত। সস্তা দামের বিদেশী পণ্য আমদানী হওয়াতে, ঐ সব শিল্পজাত আর বিক্রয় হয় না, সুতরাং শিল্পীদিগকে নিজ নিজ বৃত্তি ত্যাগ করিয়া কৃষিকার্য অবলম্বন করিতে হইয়াছে। এখনও অবসর সময়ে তাহারা এই সব শিল্পকার্য কিছু কিছু করে, তবে বেশীর ভাগ ফরমাইজি জিনিষই তৈরী করিয়া থাকে। রংপুরের সতরঞ্চ বাংলার সর্বত্র বিখ্যাত ছিল। কিন্তু দেশের সর্বত্র রেলপথে যাতায়াতের সুবিধা হওয়াতে, বিহার ও যুক্তপ্রদেশের নিকৃষ্ট ও সস্তা সতরঞ্চ, রংপুরের সতরঞ্চকে লোপ করিয়া দিয়াছে।
“চট শিল্প:—জেলার স্ত্রীলোকেরাই পূর্বে চট বুনিত, এখনও তাহারাই বুনিয়া থাকে। তাহারা নিজেরাই পাট হইতে সূতা কাটে এবং তদ্দ্বারা চট বুনে। পূর্বে এই চটের খুব চাহিদা ছিল। কৃষকদের মধ্যে জীবিকার আদর্শ যখন খুব নীচু ছিল, তখন তাহারা শীত কালে রাত্রে এই চট গায়ে দিয়াই শীত নিবারণ করিত। দুই তিন খানি একত্রে সেলাই করিলে লেপের কাজ হইত। কিন্তু এখন সস্তা বিদেশী কম্বল চটের স্থান অধিকার করিয়াছে।
“এণ্ডি শিল্প:—এই শিল্প দ্রুত লোপ পাইতেছে।
“তুলা বয়ন শিল্প:—এই শিল্প প্রায় লোপ পাইয়াছে।
“কাঁসা শিল্প:—এই শিল্প প্রধানতঃ জেলার পূর্বাঞ্চলে প্রচলিত ছিল। ইহাও প্রায় লুপ্ত হইয়া গিয়াছে।
“চিনি ও গুড় শিল্প:—বহু বৎসর পূর্বে রংপুর বাংলার অন্যতম প্রধান গুড় উৎপাদনকারী জেলা ছিল। চিনির কারখানার চিহ্ন এখনও দেখিতে পাওয়া যায়, কিন্তু এই সব কারখানায় কখনও কল ব্যবহৃত হইত না। চিনি এখন অল্প পরিমাণে তৈরী হয় এবং পূজা পার্বণ প্রভৃতিতে ঐ চিনি ব্যবহৃত হয়। বিদেশ হইতে আমদানী সস্তা চিনি রংপুরের চিনি শিল্পকে লোপ করিয়া দিয়াছে।
“রংপুরের লোকসংখ্যা ২৩ লক্ষ এবং ইহা কৃষিপ্রধান জেলা। মিঃ জে. এন. গুপ্ত এম. এ., আই. সি. এস. কমিশনারের হিসাব মতে এই জেলার কৃষিজাত সম্পদের মূল্য প্রায় ৯ ১/২ কোটী টাকা। সুতরাং এখানকার অধিবাসীদের বার্ষিক আয় মাথা পিছু প্রায় ৪০৲ টাকা, মাসে ৩৷৵৹ এবং দৈনিক প্রায় ৭ পয়সা। জমির উপর চাপ ক্রমেই বৃদ্ধি পাইতেছে এবং এই চাপ কমাইবার জন্য শিল্পের উন্নতি ও প্রসার বিশেষ প্রয়োজন। অন্যথা জমি লইয়া বিবাদ বিসম্বাদ, মামলা মোকদ্দমা সর্বদা হইতে থাকিবে।”
বাংলাদেশে বৈদেশিক শাসন প্রত্যেক কুটীর শিল্পকে লোপ করিবার জন্য যথাসাধ্য করিয়াছে, কেননা ‘হোম’ হইতে কলের তৈরী জিনিষ এদেশে আমদানী করিতে হইবে।— পক্ষান্তরে, জাপান কুটীর শিল্পের উন্নতি করিবার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করিয়াছে ও করিতেছে।
উদ্ধৃত বিবরণ হইতে বুঝা যাইবে যে, সভ্য বৈদেশিক শাসনে ‘বৈজ্ঞানিক উন্নতি’ এবং সর্বত্র রেল ও ষ্টীমারে যাতায়াতের সুবিধা হওয়াতেও কৃষকদের অবস্থার কোন উন্নতি হয় নাই। র্যামজে ম্যাকডোনাল্ড রাষ্ট্রনীতিকের দূরদৃষ্টি লইয়া এই অবস্থা যথার্থরূপে উপলব্ধি করিয়াছিলেন এবং বলিয়াছিলেন, “পাশ্চাত্য প্রাচ্যদেশে বিষম ভ্রম করিতেছে।”—অ্যাডাম স্মিথ ও রিকার্ডোর গ্রন্থ হইতে ধার করা মতামত একটি সরল প্রাচীনপন্থী জাতির ঘাড়ে চাপাইলে, ফল শোচনীয় হয়। আমাদের দেশেও তাহাই ঘটিয়াছে।
- ↑ Hunter—Annals of Rural Bengal.
- ↑ “অষ্টাদশ শতাব্দীতে ঐ সম্প্রদায় দ্রুত ধ্বংস পাইতে লাগিল। মহারাষ্ট্রীয়েরা তাহাদের বিধ্বস্ত করিয়াছিল। ১৭৭০ খৃস্টাব্দের দুর্ভিক্ষে তাহাদের রাজ্য জনশূন্য হইয়াছিল, এবং ইংরাজেরা এই সব করদ নৃপতিকে জমিদার রূপে গণ্য করিয়া তাহাদিগকে অধিকতর দায়গ্রস্ত এবং ধংসের মুখে প্রেরণ করিল।”—Hunter.
- ↑ “লম্বার্ডি প্রদেশে গ্রীষ্মকালে নিম্ন আল্প্স পর্বতের বাহিরে জলাভাব ঘটে, কিন্তু মধ্য যুগ হইতে এখানে এমন চমৎকার জলসেচের ব্যবস্থা আছে, যাহা ইয়োরোপের কুত্রাপি নাই। সুতরাং এখানে ফসল নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।”
- ↑ অমৃত বাজার পত্রিকা—৫ই জুলাই, ১৯২৮ তারিখে প্রকাশিত পত্র দ্রষ্টব্য।
- ↑ “বয়নশিল্প বাংলার একটা বড় শিল্প ছিল, বিদেশী কাপড়ের আমদানী ঐ শিল্প নষ্ট হইবার অন্যতম কারণ”।—Jack: The Economic Life of a Bengal District.
“এই জেলায় পদ্মা, মেঘনা, মধুমতী প্রভৃতি বড় বড় নদীতে ষ্টীমার চলাচল করে, জেলার অভ্যন্তরে আরও অনেক নদীতে ষ্টীমার যায়।”—O’ Malley; Faridpore (1925)
“মাছ ধরিয়া প্রায় ৪৭ হাজার লোক জীবিকা নির্বাহ করে, যাহারা মাছ ধরে ও যাহারা উহা বিক্রয় করে, তাহারা সকলেই এই শ্রেণীর অন্তর্গত ...... জেলার প্রধান ব্যবসা—কৃষিজাত পণ্য লইয়া।”—O’ Malley. - ↑ ১৯২৪-২৫ হইতে ১৯২৮-২৯ এই পাঁচ বৎসরের বাজার দরের গড় হইতে এই হিসাব সংকলিত হইয়াছে। এই ব্যাপারে ফরিদপুর কৃষি ফার্মের শ্রীযুক্ত দেবেন্দ্রনাথ মিত্র আমাকে যে সাহায্য করিয়াছেন তাহা কৃতজ্ঞতার সহিত স্মরণ করি।
- ↑ ১৯২৪-২৯ এই পাঁচ বৎসর পাটের দর খুব চড়িয়াছিল, সুতরাং জ্যাকের হিসাবের চেয়ে আমার প্রদত্ত হিসাবে আর বেশী ধরা হইয়াছে। বর্তমান বৎসরে (১৯৩২) পাট, চাউল এবং অন্যান্য কৃষিজাত দ্রব্যের মূল্য খুব কম, গত দশ বৎসরের মধ্যে এরূপ হয় নাই। এবং যদি বর্তমান বাজার দর অনুসারে হিসাব করা যায়, তবে মাথা পিছু গড় আর আরও কমিয়া যাইবে, এমন কি অর্ধেক হইবে।
- ↑ সমস্ত বড় জমিদারীই কলিকাতাবাসী জমিদারদের অধিকৃত। নিম্নে কতকগুলি বড় জমিদারীর তালিকা দেওয়া হইল:—তেলিহাটী আমিরাবাদ—৭২,০০০ একর; হাভেলী—৬০,৯০০ একর; কোটালীপাড়া—৩৪,৬০০ একর; ইদিলপুরে—৩৩,২০০ একর। (২য় পরিচ্ছেদ দ্রষ্টব্য)
- ↑ এই সব তথ্য কৃষিবিভাগ হইতে প্রকাশিত রিপোর্ট হইতে গৃহীত। প্রত্যেক জেলার উৎপন্ন ধান্যের হিসাব ধরিয়া মোট উৎপন্নের পরিমাণ ঠিক করা হইয়াছে। এই সব তথ্য হইতে লতিফের মন্তব্য সত্য বলিয়া প্রমাণিত হয়—“বাংলাদেশে মোট উৎপন্ন চাউল, সমগ্ন অধিবাসীদের প্রয়োজন মিটাইতে পারে না।” (Economic Aspect of the Indian Rice Export Trade, 1923.) লতিফের হিসাব মতে, ভারতের অধিবাসীদের জন্য মোট ৩ কোটী ৩৫.১ লক্ষ টন চাউলের প্রয়োজন হয়, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে উৎপন্ন হয় ৩ কোটী ২০.২ লক্ষ টন চাউল। সুতরাং ১৫.৫ লক্ষ টন চাউলের ঘাটতি পড়ে। “অতএব দেখা যাইতেছে যে, বর্মা চাউল আমদানী না হইলে পরিণাম অতি শোচনীয় হইত।”
পানাণ্ডিকর বলেন—“দেখা গিয়াছে যে, পুরুষের পক্ষে দৈনিক আধ সের এবং স্ত্রীলোক বা বালক বালিকাদের পক্ষে তার চেয়ে কিছু কম চাউল হইলেই অনাহারে মৃত্যু নিবারণ করা যায়। .... কিন্তু এই পরিমাণ চাউল কোন পরিবারের লোকদের শরীরের পুষ্টি ও বলের পক্ষে যথেষ্ট নহে।”
ব্যানার্জী (Fiscal Policy in India) বলেন,—“স্বাভাবিক অবস্থায় দেশে যে খাদ্যশস্য উৎপন্ন হয়, তদ্বারা সমস্ত অভাব মিটাইয়া বিদেশে রপ্তানী করিবার মত কিছু উদ্বৃত্ত থাকে কিনা সন্দেহ। বিশেষজ্ঞেরা বলেন যে, ভারতে যে মোট খাদ্যশস্য উৎপন্ন হয়, তাহা ভারতবাসীদের পক্ষে পর্যাপ্ত নহে এবং যদি প্রত্যেক লোককেই উপযুক্ত পরিমাণ খাদ্য দেওয়া যাইত, তবে ভারতকে খাদ্যশস্য আমদানী করিতে হইত, সে উহা রপ্তানী করিতে পারিত না।”
“ভারতে উৎপন্ন খাদ্যশস্যের পরিমাণ ৪ কোটী ৮৭ লক্ষ টন, কিন্তু ভারতের পক্ষে ৮ কোটী ১০ লক্ষ টন খাদ্যশস্যের প্রয়োজন। সুতরাং তাহার খাদ্যশস্য শতকরা ৪০ ভাগ কম পড়ে। ইহা হইতে স্পষ্টই বুঝা যায় যে, ভারতবাসীরা পর্যাপ্ত খাদ্য পায় না।”—C. N. Zutshi, Modern Review, Sept., 1927.
সুতরাং এ বিষয়ে যাঁহারা আলোচনা ও চিন্তা করিয়াছেন, তাঁহাদের সকলেরই মত এই যে—কেবল বাংলাদেশে নয়, সমগ্র ভারতবর্ষে খাদ্যশস্যের ঘাটতি পড়ে।