আশাকানন/প্রথম কল্পনা

উইকিসংকলন থেকে

আশার সহিত সাক্ষাৎ ও পরিচয়, তাঁহার সঙ্গে আশাকাননে প্রবেশ ভিন্ন ভিন্ন দিক্ হইতে কর্ম্মক্ষেত্রাভিমুখে প্র্যণিসংপ্রবাহ।

বঙ্গে সুবিখ্যাত দামোদর নদ
ক্ষীর সম স্বাদু নীর;
বৃক্ষ নানা জাতি বিবিধ লতায়
সুশোভিত উভ তীর;
বিন্ধ্যগিরি-শিরে জনমি যে নদ
দেশ দেশান্তরে চলে;
সিকতা-সজ্জিত সুন্দর সৈকত
সুধৌত নির্ম্মল জলে;
পবিত্র করিলা যে নদের কূল
সুকবি কঙ্কণ-কবি
ফুটায়ে কবিতা কুসুম মধুর
বাণীর প্রসাদ লভি;
যে নদ নিকটে রসবিহ্বলিত
ভারত অমৃতভাষী
জনমি সুক্ষণে বাঁশীতে উন্মত্ত
করেছে গউড়বাসী।
সেই দামোদর তীরে এক দিন
অরুণ-উদয়ে উঠি,
দেখি শূন্যমার্গে ধরণী-শরীরে
কিরণ পড়িছে ফুটি;
দশ দিশ ভাতি পড়িছে কিরণ
আকাশ মেঘের গায়,
হরিদ্রা লোহিত বরণ বিবিধ
গগনে চারু শোভায়;

গগন-ললাটে চূর্ণ-কায় মেঘ
স্তরে স্তরে স্তরে ফুটে,
কিরণ মাখিয়া পবনে উড়িয়া
দিগন্তে বেড়ায় ছুটে।
পড়ে সূর্য্যরশ্মি দামোদর-জলে
আলো করি দুই কূল;
পড়ে তরু-শিরে তৃণ-লতা-দলে
রঞ্জিয়া প্রভাতী ফুল।
হেরি চারু শোভা ভ্রমি ধীরে তীরে
পরশি মৃদু পবন,
সংসার-যাতনে হৃদয় পীড়িত
চিন্তায় আকুল মন;
ভ্রমি কত বার কত ভাবি মনে,
শেষে শ্রান্তি-অভিভূত,
বসি চক্ষু মুদি কোন বৃক্ষতলে
ক্রমে তন্দ্রা আবির্ভূত;
ক্রমে নিদ্রাঘোরে অবসন্ন তনু
পরাণী আচ্ছন্ন হয়,
স্বপন-প্রমাদে সংসার-ভাবনা
পাসরিনু সমুদয়;
ভাবি যেন নব নবীন প্রদেশে
ক্রমশঃ কতই যাই,
আসি কত দূর ছাড়ি কত দেশ
কানন দেখিতে পাই;
অতি মনোহর কানন রুচির
যেন সে গগন-কোলে
কিরণে সজ্জিত ঈষৎ চঞ্চল
পবনে হেলিয়া দোলে,
বরণ হরিত বিটপে ভূষিত
সরল সুন্দর দেহ,

বৃক্ষ সারি সারি সাজায়ে তাহাতে
রোপিলা যেন বা কেহ।
শোভে বন-মাঝে বিচিত্র তড়াগ
প্রসারি বিপুল কায়;
মেঘের সদৃশ সলিল তাহাতে
দুলিছে মৃদুল বায়।
বারি শোভা করি কমল কুমুদ
কত সে তড়াগে ভাসে;
কত জলচর করি কলধ্বনি
নিয়ত খেলে উল্লাসে;
ভ্রমে রাজহংস সুখে কণ্ঠ তুলি,
মৃণাল উপাড়ি খায়;
রৌদ্র সহ মেঘ তড়াগের নীরে
ডুবিয়া প্রকাশ পায়;
তড়াগ-সলিলে প্রতিবিম্ব ফেলি
কত তরু পরকাশে;
হেলিয়া হেলিয়া তরঙ্গে তরঙ্গে
ভাঙ্গিয়া ভাঙ্গিয়া ভাসে;
দুলিয়া দুলিয়া বায়ুর হিল্লোলে
তটেতে সলিল চলে;
উড়িয়া উড়িয়া সুখে মধুকর
বেড়ায় কমলদলে;
শ্যামা দেয় শীস্‌ বন হৃষ্ট করি,
ভ্রমে সে ললিত তান;
প্রতিধ্বনি তার পূরি চারি দিক্‌
আনন্দে ছড়ায় গান;
ঝরে সুমধুর কোকিল-ঝঙ্কার
সকল কাননময়,
মধুবৃষ্টি যেন ঘন কুহুরবে
শ্রুতি বিমোহিত হয়।

তড়াগের তীরে হেরি এক প্রাণী
বসিয়া সুদিব্যকায়া,
করেতে মুকুর হাসিতে হাসিতে
হেরিছে আপন ছায়া!
মনোহর বেশ নিরখি সে প্রাণী
ক্ষণেক নহে সুস্থির,
নেহারি মুকুর নিমিষে নিমিষে
আনন্দে যেন অধীর;
অপরূপ সেই মুকুরের শোভা
কত প্রতিবিম্ব তায়
পড়িছে ফুটিয়া হেরিছে সে প্রাণী
হইয়া বিহ্বল-প্রায়।
জিজ্ঞাসি তাহারে আসিয়া নিকটে
কিবা নাম কোথা ধাম,
বসিয়া সেখানে কি হেতু সেরূপে
করি কিবা মনস্কাম।
হাসিয়া তখন কহিলা সে প্রাণী
“আমারে না জান তুমি,
আশা মম নাম স্বরগে নিবাস
এবে এ নিবাস-ভূমি;
মানবের দুঃখে অমরের পতি
পাঠাইলা ভূমণ্ডলে;
দেবরাজ দয়া করিয়া মানবে
আমায় আসিতে বলে;
থাকি চিরকাল সুখে স্বৰ্গপুরে
ধরাতে কিরূপে আসি,
মরতে কেমনে স্বর্গের বিরহ
সহিব তাঁহে জিজ্ঞাসি;
শুনি শচীপতি করি আশীর্ব্বাদ
হাতে দিলা এ দর্পণ,

কহিলা 'দেখিবে ইথে যবে মুখ
পাবে সুখ তত ক্ষণ;
যে পরাণী ইথে দেখিবে বদন
পাইবে অতুল সুখ,
যাও ধরাতলে তাপিলে হৃদয়
দর্পণে দেখিও মুখ’;
তদবধি আমি আছি ভূমণ্ডলে
পুরী সৃজি এই স্থানে;
মানবের দুঃখ নিবারি জগতে
জুড়াই তাপিতপ্রাণে;
যখন হৃদয়ে স্বর্গের সৌন্দর্য্য
দেখিতে বাসনা হয়,
নিরখি দৰ্পণ তুষি সে বাসনা,
শীতল করি হৃদয়।
হেরি চিন্তা-রেখা ললাটে তোমার,
হবে বা তাপিত জন,
ভুলিবে যাতনা ভাবনা সকলি
এ পুরী কর ভ্রমণ।”
ছাড়িয়া নিশ্বাস কহিনু আশায়,
"কিবা এ নবীন স্থান
দেখাবে আমারে, দেখেছি অনেক,
নহে এ তরুণ প্রাণ।”
আশা কহে “তবু কভু ত সে পুরী
কর নাই পরিক্রম,
চল সঙ্গে মম, দেখ একবার,
ঘুচুক চিত্তের ভ্রম।
জানি যে কারণে তাপে চিত্ত তব,
যে বাসনা ধর মনে—
পুরাব বাসনা সকল তোমার,
প্রবেশ আমার বনে;

দেখাব সেখানে কত কি অদ্ভূত,
কত কিবা অপরূপ,
দেখে নাই যাহা নয়নে কখন
স্বপনে কোন সে ভূপ;
থাকিবে কাননে স্বরগে যেমন,
কাঁদিতে হবে না আর;
শোক চিন্তা তাপ ভুলিবে সকল,
ঘুচিবে প্রাণের ভার।”
বচনে আশার পাইয়া আশ্বাস
পশ্চাতে তাহার সনে
যাই দ্রুতগতি হৈয়ে কুতূহলী
প্রবেশিতে সে কাননে।
আসি কিছু দূর দাঁড়াইলা আশা
হাসিয়া মধুর হাসি,
পরশি তর্জ্জনী মম আঁখিদ্বয়ে
কহিলা মৃদুল ভাষি;
"হের বৎস, হের সম্মুখে তোমার
আমার কাননস্থল,
কাননের ধারে হের মনোহর
ধারা কিবা নিরমল।”
নিরখি সম্মুখে আশার কানন
প্রক্ষালিত ধার-জলে;
স্বচ্ছ কাচ যেঙ্গ সলিল তাহাতে
উছলি উছলি চলে;
কখন উথলি উঠিছে আপনি,
কখন হইছে হ্রাস,
মণি-পদ্ম কত, মণির উৎপল
ধারা-অঙ্গে সুপ্রকাশ;
খেলে ধারা-নীরে তরী মনোহর
হীরকে রচিত কায়,

প্রাণী জনে জনে একে একে একে
কত যে উঠিছে তায়;
বিনা কর্ণ দণ্ড ভ্রমে সে তরণী
খেয়া দিয়া ধারা-নীরে;
উঠে ক্রমে তাহে প্রাণী যত জন
পরপারে রাখে ধীরে।
উঠে তরী'পরে প্রাণী হেন কত
যুবা বৃদ্ধ নারী নর,
মনোরথ-গতি খেলায় তরণী
ধারা-নীরে নিরন্তর।
গগনে যেমন দামিনীছটায়
কাদম্বিনী শোভা পায়,
প্রাণী সে সবার বদন তেমতি
প্রদীপ্ত সুখ-প্রভায়,
চিত-হারা হৈয়ে হেরি কত ক্ষণ
প্রাণী হেন লক্ষ লক্ষ
দশ দিক্‌ হৈতে আসে সেই স্থানে
তরণী করিয়া লক্ষ্য।
আশা কহে হাসি চাহি মুখপানে
“কি হের সম্বিদ্‌-হারা,
আমার কাননে প্রবেশে যে প্রাণী
তাহারই এমনি ধারা—
হের কিবা সুখ ভাতিছে বদনে,
নাচিছে হৃদয় কত;
বাসনা-পীযূষ পানে মত্ত মন
চলে মাতোয়ারা মত;
নন্দনে যেমন নিমেষে নূতন
নবীন কুসুম ফুটে,
নিমেষে তেমতি ইহাদের চিতে
নবীন আনন্দ উঠে;

দেখেছ কি কভু কখন কোথাও
তরী হেন চমৎকার,
পরশে পরাণে বিনাশে বিরাগ,
ঘুচায় প্রাণের ভার;
উঠ তরী’পরে, বুঝিবে তখন
এ কাননে কত সুখ;
নন্দন-সদৃশ রচেছি কানন
ঘুচাতে প্রাণীর দুখ।”
এত কৈয়ে আশা ধরিয়া আমারে
তুলিলা তরণী’পর;
অমনি সে ধারা- সলিল উথলি
চলে দ্রুত থর থর;
দেখিতে দেখিতে পূরিয়া দু কূল
ছল ছল চলে জল;
দেখিতে দেখিতে সলিল ঢাকিয়া
ফুটিল কত উৎপল;
চলিল তরণী গতি মনোহর,
মধুর মুরলীধ্বনি
বাজিতে লাগিল সহসা চৌদিকে
তরীতে সদা আপনি;
ভুলিলাম যেন এ বিশ্ব-ভুবন
করতলে স্বর্গ পাই।
চারি দিকে যেন মণিময় পুষ্প
নিরখি যেখানে চাই।
শুনি যেন কেহ কহে শ্রুতিমূলে
"দেখ রে নয়ন মেলি,
কলঙ্ক-বিহীন মানব-মণ্ডলী
ধরাতে করিছে কেলি;
স্বৰ্গতুল্য এবে হয়েছে পৃথিবী,
স্বর্গের মাধুরীময়,

দ্বেষ, হিংসা, পাপ বর্জ্জিত পরাণী,
নির্ম্মল শুচিহৃদয়।”
হেরি যেন মর্ত্ত্যে তেমতি তরুণ,
তেমতি নবীন ভাব
ধরেছে মানব যে দিন বিধির
হৃদি-পদ্মে আবির্ভাব;
নাহি যেন আর সেই মর্ত্ত্যপুরী,
যেখানে দারিদ্র্য-শিখা
ভস্ম করে নরে, হুতাশ-অঙ্গারে,
অনলে যথা মক্ষিকা;
হৃদয়-মন্দিরে যেন অভিনব
কিরণ প্রকাশ পায়,
চুরি করা ধন, ফিরে যেন কাল
কোলে আনে পুনরায়;
কত যে হৃদয়ে আনন্দ-লহরী
উঠিল তখন মম,
ভাবিলে সে সব, এখনও অন্তরে
সহসা উপজে ভ্রম!
কত দূর আসি ভাসি হেন রূপে
তরণী হইল স্থির,
পরপারে আসি আশা সহ সুখে
উতরি ধারার নীর;
তরী হৈতে তীরে নামিয়া তখন
হেরি মনোহর স্থান;
বহিছে সতত শীতল পবন
বিস্তারি মধুর ঘ্রাণ;
তরু-ডালে ডালে পূর্ণ-প্রকাশিত
সুরভি কুসুমদল;
চন্দ্রমার জ্যোতি- সদৃশ কিরণে
উজ্জল কাননস্থল;

পল্লবে বসিয়া পার্থী নানা জাতি
মধুর কৃজিত করে;
নাচিয়া নাচিয়া গ্রীবা-ভঙ্গি করি
ময়ূর পেখম ধরে;
কুছ কুহু কুহু কুহরে গলায়
কোকিল প্রমত্ত ভাব,
মুহু মুহু মুহু তনু-স্নিগ্ধকর
সুগন্ধ সুধার স্রাব;
সরোবর-কোলে প্রফুল্ল কমল,
কুমুদ, কহ্লার ফুটে,
গুঞ্জরিয়া অলি কুসুমে কুসুমে
আনন্দে বেড়ায় ছুটে;
চলেছে সেখানে প্রাণী শত শত
সদা প্রমুদিত প্রাণ,
সুমধুর সুরে পূরে বনস্থলী
আনন্দে করিয়া গান;
কেহ বা বলিছে "আজ নিরখিব
কুমুদরঞ্জন শোভা,
উঠিবে যখন গগনেতে শশী
জগজন-মনোলোভা;
আজি রে আনন্দে ধরিব হৃদয়ে
মধুর চাঁদের কর,
কোমল করিয়া কুসুম সে করে
রাখিব হৃদয়’পর;
তাহার উপরে রাখিয়া প্রিয়ারে,
কত যে পাইব সুখ।
কখন হেরিব গগনে শশাঙ্ক,
কখন তাহার মুখ।”
কহে কোন জন বেণুরবে সুখে
"কোথা পাব হেন স্থান;

জগত-দুর্লভ রাখিয়া এ নিধি
নিরখি জুড়াই প্রাণ!
দিলা যে গোঁসাই এ হেন রতন
যতনে রাখিতে ঠাঁই
ভূমণ্ডল মাঝে নিরজন হেন
নয়নে দেখিতে নাই।”
কেহ বা বলিছে "হায় কত দিনে
পাব সে কাঞ্চন-ফল;
নাহি রে সুন্দর দেখিতে তেমন
খুঁজিলে অবনীতল।
সে দুর্লভ ফল কি যে অপরূপ
দেখিতে কিবা সুন্দর,
বুঝি ক্ষিতিতলে অনুরূপ তার
নাহি কিছু সুখকর!
পাই দরশন নয়নে কেবল
না লভি আস্বাদ কভু,
হায় মধুময় কিবা সে আনন্দ,
কিবা সে আস্বাদ তবু;
না জানি সঞ্চয়ে পাব কত সুখ,
ঘুচিবে সকল ভয়,
কতু যদি পাই করিব পৃথিবী
অপূর্ব্ব সৌন্দর্য্যময়;
ভাবনা কি ছার, ছার চিন্তা, রোগ,
সে ফল যদ্যপি মিলে,
বিনিময়ে তার জীবন পরাণী
ক্ষোভ নাহি বিকাইলে।”
চলে কত জন সুখে করে গীত,
বলে “কবে পাব যশ,
পরিয়া শিরেতে শোভিব উজ্জ্বল,
ধরণী করিব বশ;

পৃথিবী-ভিতরে দ্বিতীয় রতন
কে আছে তেমন আর—
হীরা মণি হেম চিকণ মৃত্তিকা,
কেবল যখের ভার!"
বাজিছে কোথাও জয় জয় নাদে
গম্ভীর দুন্দুভি-স্বর,
চলে প্রাণিগণ করিয়া সঙ্গীত
কম্পিত মেদিনী’পর!
বলে “প্রভাকর আজি কি সুন্দর
হেরিতে গগন-ভালে,
আজি মত্ত নদী মাতঙ্গ-বিক্রমে
হের কি তরঙ্গ ঢালে!
আজি রে প্রতাপ প্রভঞ্জন তোর
হেরিতে আনন্দ কত,
আজি ধরা তব হেরি অবয়ব
কিবা সুখ অবিরত!
তোল হৈম ধ্বজা গগনের কোলে
কেতনে বিদ্যুৎ জ্বাল—
লেখ ধরাতলে কৃপাণের মুখে
মানব জিনিবে কাল;”
বলিয়া সুসজ্জ তুরঙ্গ-উপরে
ভর করি কত জন,
চলে দ্রুতবেগে শাণিত কৃপাণ
করে করি আকর্ষণ।
দশ দিক্‌ হৈতে কত হেনরূপ
সঙ্গীত শুনিতে পাই;
হরষ উল্লাসে উন্মত্ত পরাণ
প্রাণী হেরি যত যাই।
যথা সে জাহ্নবী তরঙ্গ নির্ম্মল
ছাড়িয়া শিখরতল,

ভ্রমে দেশে দেশে শীতল বারিতে,
শীতল করি অঞ্চল;—
ছোটে কল কল ধ্বনি নীরধারা
ধরণী পরশে সুখে,
বিবিধ পাদপ নানা শস্য ফল,
বিস্তৃত করিয়া বুকে;
খেলে জলচর মীন নানা জাতি
সস্তরণ করি নীরে;
পশু স্থলচর বিবিধ আকৃতি
সদা ভ্রমে সুখে তীরে;
তীর-সন্নিহিত বিটপে বিটপে
পাখী করে সুখে গান;
লতা গুল্মরাজি বিকাসে সৌরভ
প্রফুল্লিত করি প্রাণ;
ভ্রমে তটে তীরে প্রাণী লক্ষ লক্ষ
সদা প্রমুদিত মন,
আনন্দিত মনে নীরে করে স্নান
সদা সুখে নিমগন;–
যথা সে জাহ্নবী ভারত-শরীরে
বহে নিত্য সুখকর,
বহে নিত্য এথা নিরখি তেমতি
আনন্দ-সুধা-লহর।
দেখি শত পথে ছাড়ি শত দিক্‌
প্রাণিগণ চলে তায়,
যুবা বৃদ্ধ প্রাণী পুরুষ রমণী
ক্ষিতি পূর্ণ জনতায়;
চলে থাকে থাকে কাতারে কাতার
পিপীলির শ্রেণী মত;
অসংখ্য অসংখ্য প্রাণীর প্রবাহে
পরিপূর্ণ পথি যত।

নিরখি কৌতুকে চাহিয়া চৌদিকে
সাগরের যেন বালি—
চলে প্রাণিগণ ঢাকি ধরাতল,
চলে দিয়া করতালি;
অশেষ উৎসাহ আনন্দ আশ্বাসে
সকলে করে গমন,
দেখিয়া বিস্ময়ে পুরিয়া আশ্বাসে
আশারে হেরি তখন;
জিজ্ঞাসি তাহায় “এরূপ আনন্দে
প্রাণী সবে কোথা যায়,
কি বাসনা মনে চলে কোন্‌ স্থানে
কি ফল সেখানে পায়!"
আশা কহে শুনি হাসিয়া তখন
"চল বৎস, চল আগে,
প্রাণি-রঙ্গভূমি কর্ম্মক্ষেত্র নাম
নিরখিবে অমুরাগে;
প্রাণী যত তুমি হের এই সব
সেইখানে নিত্য যায়,
বাসনা কল্পনা যাদৃশ যাহার
সেইখানে গিয়া পায়।
আশা-বাণী শুনি চলি দ্রুত বেগে,
আশা চলে আগে আগে,
আসি কিছু দূর দেখি মনোহর
পুরী এক পুরোভাগে।