ইন্দুমতী/জলপথে

উইকিসংকলন থেকে

সপ্তম সর্গ


জলপথে।

মাস অন্তে এক দিন বলিল নবীন
দেবব্রতে সমাদরে ডাকিয়া নিকটে,
“একি যোগ বল কিম্বা ধর্ম্ম বল,ভাই!
যাহার কৃপায় স্বাস্থ্য পাই পুনরায়
দিন দিন পাই বল? অতুল আনন্দে
হ’তেছে হৃদয় পূর্ণ। গায়ত্রীর ধ্যান
করিতে করিতে, মনে হয় যেন ওই,
সুদূর নীলিমা কোলে,শান্তি পূর্ণ এক
মহাজ্যোতির্ম্ময় দেশে,রবিকরোজ্জ্বল,
স্বচ্ছ,নীল পারাবারে যেতেছি ভাসিয়া,
শুনিতে শুনিতে এক অপূর্ব্ব সঙ্গীত।
কত শত দেববালা অলক্ষ্যে থাকিয়া,
সমস্বরে পূর্ণ কণ্ঠে গাহিতেছে গান
প্লাবিত করিয়া দেশ সুরের তরঙ্গে,
বিহ্বল করিয়া দেহ,ইন্দ্রিয় বিকল,
জাগাইয়া কত শত সুখের স্বপন,
কত সুখ স্বর্গরাজ্য ধরিয়া সম্মুখে।

স্তরে স্তরে উঠিতেছে সুর সুমধুর,
ঊর্দ্ধে, বহু ঊর্দ্ধে, ভেদি নীল নভঃস্থল,
রুদ্ধ গতি যত সব জ্যোতিষ্ক মণ্ডল,
রুদ্ধ শ্বাসে শুনিতেছে মোহিনী সঙ্গীত।
পূর্ণ বিকসিত, নীল, অসংখ্য উৎপল,
ভাসে সেই পারাবারে। গন্ধবহ ধীরে
সুগন্ধ কুসুম গন্ধে করে আমোদিত।
কোমল রবির কর, সে জ্যোতির দেশে,
কোমল মহিমাময় সকলি তথায়।
মধুর কাকলি করি কত রাজহংস
ভাসিতেছে ইতস্ততঃ। অমল ধবল
এক রাজহংসে বসি গায়ত্রী জননী,
লোহিত বরণা মাতা, অংশুমালী করে
হ’য়ে বিভূষিতা, বেদযুতা, কুশহস্তা,
বরাভয় অন্য করে, করেন আশীষ।
ভুলে যাই রোগ শোক, ভুলে যাই জ্বালা
সংসার ভুলিয়া যাই, অস্তিত্ব আপন,
সঞ্জীবিত হই ধীরে নূতন জীবনে,
সকলি নূতন দেখি চারি দিকে আর।
জানিয়া ঔষধ হেন, কেন এত দিন
বল নাই ভাই তুমি নিকটে আমার?
দেবব্রত।  নাহি বলিবার ছিল অনেক কারণ,

সময় হয়নি তাই বলিনি তখন।
বলিলে তখন কোন হইত না ফল
ভিন্ন মুখী মতি গতি ছিল আপনার,
আস্থাহীন ছিলেন যে ব্রাহ্মণের কাজে।
অনন্ত যাতনা পূর্ণ রোগ মধ্য দিয়া
অনন্তের দ্বার দেশে হ’য়ে উপস্থিত,
সম্মুখে দেখিয়া সেই ভীমা বৈতরণী,
তরঙ্গসঙ্কুলা সদা, তপ্তা, খরস্রোতা,
গভীর কল্লোলে পূর্ণ জীব আর্ত্তনাদে,
তমোময় মহাশূন্য পরপারে তার;
আপনার ছায়া পুনঃ দেখিয়া পশ্চাতে,
বুঝেছেন শূন্য গর্ভ সংসার এখন,
সংসারের সুখ দুঃখ শুধু মরীচিকা,
মৃগতৃষ্ণিকায় শুধু গিয়াছে জীবন।
এত ধন জন এত সাধের সংসার,
এত যে বাসনা পূর্ণ মানব জীবন,
সকলি ছাড়িয়া হায়! আপনি এখন
অন্ধের মতন একা আঁধারে আঁধারে,
চলেছেন মহাপথে জীবনের পারে।
কেহই, কিছুই, সেই আপনার গতি
পারিল না রোধিবারে। এই ত সংসার!
ভীষণ আতঙ্কে তাই শিহরিল দেহ,

দারুণ তরাসে তাই কাঁদিল পরাণ,
আলোময়, শান্তিময় পথের উদ্দেশে,
মনেতে পড়িল তাই সেই হিন্দু ধর্ম্ম,
অনাথের নাথ, আর অগতির গতি,
নিরাশ্রয়ের আশ্রয় সেই ভগবান।
নবীন। মেঘেতে বিজলী মত, মাঝে মাঝে হেরি,
স্বরগের আলো এক সম্মুখে আমার,
সহসা হইয়া দীপ্ত মিলাইয়া যায়,
ধাঁধিঁয়া নয়ন মন, কে জানে কোথায়।
কোথা হ’তে আসে তাহা, কেন আসে, কেন
মিলাইয়া যায় পুনঃ বুঝিবারে না’রি।
শুধু এই বুঝি, সুখ আর শান্তি পূর্ণ
পবিত্র জীবন পথে চলিয়াছি এবে।
দেবব্রত। কিছু দিন পরে পুনঃ দেখিবেন আর
করিলে বিপ্রের কাজ ফল আপনার।
নবীন। রাধিকার দেখিতেছি ঘোর ভাবান্তর।
বসন ভূষণে আর নাহি অনুরাগ,
নাহি অনুরাগ তা’র কবরী বন্ধনে
কারুকার্য্য, আর কোন বিলাসে তাহার।
সদাই উদাস দৃষ্টি, সদা বিষাদিতা,
কি এক গভীর ভাবে আকুল হৃদয়।
মম পাদোদক পান করিয়া প্রভাতে,

মস্তকে লইয়া মম চরণের ধূলি
সংসারের কাজে তবে হয় অগ্রসর।
কোমলতা পূর্ণ এবে প্রকৃতি তাহার।
দেব।  পাতিব্রত্য ধর্ম্মে তাঁ’রে করেছি দীক্ষিতা,
তাই এবে হইতেছে এই ভাবান্তর।
কিছু দিন পরে পুনঃ পাবেন দেখিতে
দেবীরূপে পরিণতি হইয়াছে তাঁ’র।
 আর এক আছে কথা। কিছু দিন ধরি
করিতে হইবে এবে বিদেশ ভ্রমণ।
বিমুক্ত প্রান্তর কিম্বা নদীর উপরে
অনন্ত সৌন্দর্য্য পূর্ণ প্রকৃতির কোলে,
উজ্জ্বল, অনন্ত, নীল, গগনের তলে,
থাকিতে হইবে ছাড়ি এই রুদ্ধ গৃহ,
কোলাহল পূর্ণ আর এই রাজধানী।
 কিছুক্ষণ পরামর্শ করিয়া দুজনে
করিলেন এইস্থির, এবে নৌকাযোগে
জলপথে কিছুদিন করিয়া যাপন,
তীর্থ পর্য্যটনে শেষে যা’বেন সকলে।
 আয়োজন হ’লে, শেষে সুদিন দেখিয়া,
সস্ত্রীক নবীনে লয়ে দেবব্রত তবে
সুন্দর সজ্জিত তরি করি আরোহণ,
চলিলেন ধীরে ধীরে গঙ্গার উত্তরে।

 রাজধানী ছাড়ি তা’রা লাগিল দেখিতে
নির্ম্মলসলিলা গঙ্গা মন্থর প্রবাহে,
সুন্দর উভয় তট করি প্রক্ষালন,
হৃদয় দর্পনে ধরি আকাশের ছায়া,
অনন্ত বিরাটরূপ ওই নীলিমার;
কিম্বা ওই সৌধরাজি, শ্যামল সুন্দর
বনরাজি তটযুগে শোভিতেছে যাহা,
ধরিয়া তা’দের ছায়া হৃদয়ে আপন
নীরবে বহিয়া যায়। কোথা সুবিস্তৃতা,
কোথা সঙ্কুচিতা অতি। দুইকূলে তা’র
ইষ্টক নির্ম্মিত কত রয়েছে সোপান,
ছোট বড় কত শত সুন্দর আলয়,
ফলের ফুলের আর উদ্যান সুন্দর।
অনন্ত বৃক্ষের শ্রেণী সরল রেখায়,
ব্যবধান নাহি কোথা, গিয়াছে মিশিয়া
সুদূর আকাশ কোলে ধূমরেখা প্রায়।
ছোট বড় কত শত ভেসে যায় তরি,
প্রতিভাতি প্রতিবিম্ব সলিলের গায়।
রবির কিরণে জল, সারাদিনমান
তরল রাজত সম উজ্জ্বল দেখায়।
পবন বহিলে বেগে উঠে বীচি মালা,
আকুল করিয়া তুলি দুকূল সলিল,

নাচায়ে তরণী কত সোহাগের ভরে,
অনন্ত প্রেমের গান তাহারে শুনায়।
নির্ম্মল শীতল বায়ু,যেন সুধাধারা।
ঢালিয়া মানব প্রাণ করে শান্তিময়।
 রজনী আসিলে সব লুকাইয়া যায়,
তিমিরে ঢাকিয়া ফেলে প্রকৃতি বদন।
ফুটে উঠে কত তারা আকাশ উপরে,
প্রতিবিম্ব কাঁপে ধীরে সলিল ভিতরে।
আকাশ নামিয়া এসে সলিলের সাথে
মিলাইয়া যায় তা’র প্রেম পারাবারে।
 তাহারা সকলে দেখে মহিমা মণ্ডিত
প্রকৃতির এই খেলা। বোধ হয় যেন
এক সুরে আছে বাঁধা আকাশ,পাতাল,
অনল,অনীল আর সারাটি সংসার,
বিহগ কূজন, আর পল্লব মর্ম্মর;
জলস্থল,মানবের হৃদয়-ঝঙ্কার,
ইহকাল,পরকাল,জন্ম,জন্মান্তর,
পরস্পর সাথে আছে এক সুরে বাঁধা।
 দেবব্রত এই সব বিষয় লইয়া
আলোচনা করিতেন তাঁ’দের সহিত,
ঢালিয়া দিতেন প্রাণে সুখ শান্তি ধারা,
রাধিকা,নবীন কত হ’ত বিমোহিত।

 রাধিকা কখন পূর্ব্বে দেখিনি শ্মশান।
একদা নিশিথে হেরি গঙ্গার সৈকতে
প্রজ্জ্বলিত চিতানল,সুধাইল ধীরে,
চাহি দেবব্রত প্রতি, তাহার কারণ।
দেবব্রত বলিলেন বুঝায়ে সকল।
মরণ কাহাকে বলে,আর স্থূলদেহ,
জীবাত্মা,সংসার,আর জন্ম জন্মান্তর,
বিষয় লইয়া কত প্রাঞ্জল ভাষায়
কহিলেন তা’রে। জীবনের কর্ম্মফল,
কেমনে সূচিত করে জীবাত্মার গতি,
মানব বাসনা বশে কেন পুনঃ পুনঃ
জনম গ্রহণ করে সংসার মাঝারে,
রোগ,শোক,জরা,মৃত্যু কেন করে ভোগ
বলিলেন সে সকল জানিতেন যাহা।
গম্ভীর বদনে রাধা শুনিল সকল।
এক দৃষ্টে চিতা পানে রহিল চাহিয়া,
দেখিতে লাগিল চিতা জ্বলিছে কেমন,
লেলিহান বহ্নিশিখা কেমনে উঠিছে
চিতা ধূম সাথে তাহা ঊর্দ্ধে বহুদূরে,
নিথর গঙ্গার জল করিয়া রঞ্জিত,
ঈষৎ কাঁপিয়া ধীরে সলিল প্রবাহে।
দেখিতে দেখিতে রাধা বলিল শিহরি—

“মরিতে হইবে তবে, ছাড়িতে সংসার?
পাশরিতে হবে সব আশা,ভালবাসা,
অতৃপ্ত বাসনা যত প্রাণের আমার?
এই দেহ, এত রূপ, চিতার অনলে
চির তরে হ’বে শেষে ভস্মে পরিণত,
মুষ্টিমেয় ক্ষার মাত্র পরিণাম তা’র?
অবিনাশী আত্মা মম রহিবে কেবল?
জীবনের কর্ম্মফল করিবে সূচিত
জীবাত্মার গতি,আর জন্মান্তর মম?
উদ্দাম বাসনা ল’য়ে অন্য জন্মে পুনঃ
এমনি করিয়া শুধু পুড়িয়া পুড়িয়া,
করিব কি হাহাকার এ জন্মের মত?
পা’বনা কখন তাহা যাহার সন্ধানে,
মরিব ঘুরিয়া এই পৃথিবী ভিতরে?
এ জন্ম এরূপে গেল, হায় ভগবান!
কি হ’বে আমার দশা মরণের পর।”
 শুনি ইহা দেবব্রত বুঝিল তখন
শ্মশান-বৈরাগ্য এবে হয়েছে রাধার;
হইলে বৈরাগ্য ভাব স্থায়ী তা’র মনে
পরম পবিত্র হ’বে চরিত্র তাহার।
 ভাসিতে ভাসিতে তরি হ’ল উপনীত
তিনটী বরষ আগে যেথা দেবব্রত

ইন্দুমতী সাথে হায়! ডুবিল সলিলে,
প্রবল ঝটিকা বেগে তরণী সহিত।
বিস্তীর্ণ সৈকত ওই,তটের উপরে
ওই সেই গণ্ডগ্রাম। বৃক্ষ অন্তরালে
ওই দেখা যায় পথ,আঁকিয়া বাঁকিয়া,
কোমল কঠিন কত চরণ আঘাতে
মার্জ্জিত সুন্দর ওই সেই গ্রাম্য-পথ।
ওই সেই বৃক্ষ-চূড়,তলদেশে যা’র,
জীবন রক্ষক সেই ধীববের গৃহ,
যেখানে করিল রক্ষা জীবন তাহার
সলিল-সমাধি হ’তে তুলিয়া ধীবর।
 অদূরে নির্জ্জন ওই নদীর সৈকতে—
ওই যে রয়েছে পড়ি ব্যাপি বহুদূর,
সদাই করিছে ধূ ধূ,বৃক্ষ তৃণ হীন,—
দেবব্রত ভ্রমিতেন ইন্দুর সন্ধানে।
মানবের পদরেখা বালুকা উপরে
দেখিলে চকিত হ’য়ে চাহি চারি ধার,
করিতেন মনে মনে কত অনুমান।
এই যে চরণচিহ্ন ইহা কি ইন্দুর?
কুসুম-কোমল পদ তাঁহার ইন্দুর
পারে কি করিতে রেখা এতই গভীর?
সেই পদরেখা তিনি চাহিয়া চাহিয়া

আশায় করিয়া ভর হয়ে অগ্রসর,
যাইতেন ততদূর,যতদূর গিয়া
মিলা’য়ে যাইত দাগ তৃণের উপর।
 জোছনা নিশীথে তিনি একাকী ওখানে,
জুড়া’তে তাপিত প্রাণ,আসিতেন সদা,
বসিতেন একা ওই বৃক্ষের তলায়।
অনিমেষ নেত্রে চাহি নীলিমার পানে,
কখন নদীর দিকে,পুলিনে,প্রান্তরে,
আকাশে পাতালে,যেন তন্ন তন্ন করি,
অন্বেষণ করিতেন তাঁহার ইন্দুর।
উজ্জ্বল তারকা পানে কখন চাহিয়া,
মোহিনী মূরতি তা’তে গড়িয়া ইন্দুর,
প্রেমের অমিয় দিয়া করি সঞ্জীবিতা,
কহিতেন কত কথা আকুল পরাণে
যখন পশিত কাণে কোমল সঙ্গীত,
সুদূর হইতে কোন সুমধুর তান;
মনেতে হইত যেন ত্রিদিব হইতে
গাহিছে তাঁহার ইন্দু বিষাদের গান।
 সে স্থান দেখিবা মাত্র তাই দেবব্রত
চিনিলেন,অশ্রুজলে ভিজিল নয়ন!
বিষাদ কাহিনী তাঁ’র একে একে সব
কহিলেন সবিস্তারে রাধিকা নবীনে।

রাধিকা গম্ভীরা হ’য়ে চাহি এক দৃষ্টে
রহিল নদীর পানে। নবীন কাঁদিল
প্রথমা বনিতা স্মৃতি করিয়া স্মরণ।
 দেখিতে ধীবরে পুনঃ দেবব্রত তবে
নামিল তরণী হ’তে। নবীন এখন
পূর্ণরূপে রোগ মুক্ত,হাঁটিতে সক্ষম,
দেবব্রত সাথে সাথে চলিলেন তীরে।
 যথাকালে গেল তা'রা ধীবর কুটিরে,
পর্ণের কুটির কিবা দেখিতে সুন্দর!
ধীবর দেখিয়া তাঁ’রে,পরম উল্লাসে
আসিল নিকটে,নিজ পুত্রকন্যাসহ।
একে একে শুধাইল তাঁহার বারতা,
বলিল অনেক কথা।বলিল তাঁহাকে,
“রাণীমার অনুচর এসেছিল হেথা
করিতে সন্ধান তব চলে গেলে তুমি।
শুনিয়া সকল কথা সেই অনুচর
আমারে লইয়া গেলে রাণীমা প্রাসাদে,
ভাগিরথী পরপারে।নিদর্শন তব
সুবর্ণ অঙ্গুরী সেই চাহিয়া লইয়া,
দিল বহু ধন মোরে বিনিময়ে তা’র,
বলিল করিতে আর তোমার সন্ধান।”
 বিস্মিত হইয়া শুনি এই সব কথা

নবীন ও দেবব্রত লইয়া ধীবরে
তখনি চলিয়া গেল নদী পরপারে,
রাণীমা উদ্দেশে,তাঁ’র প্রাসাদে সুন্দর।
শুনিল রাণীমা আর নাহি এ সংসারে।
নগেন্দ্র এখন রাজা,তিনিও আবার
সম্প্রতি গেছেন নানা তীর্থ পর্য্যটনে।
আর ইন্দু? ইন্দুমতী নাহি কেহ তথা,
আছে এক ইন্দুরাণী অদূর প্রাসাদে।
 ভাবিতে ভাবিতে ধীরে তাঁহারা তখন
চলিলেন রাণী ইন্দুদেবীর প্রাসাদে।
পাইলেন পরিচয় সেখানে ইন্দুর।
শুনিলেন আর, রাজা নগেন্দ্রের সাথে,
গিয়াছেন ইন্দুরাণী তীর্থ পর্য্যটনে।
বলিতে কেহই কিন্তু পারিলনা এবে
কোন্ তীর্থে আছে রাণী। শুনিয়া সকল,
কিছুক্ষণ চিন্তাকরি দেবব্রত তবে,
উঠিল সেখান হ’তে নবীন সহিত,
ধীবরে লইয়া আর। কোন পরিচয়
দিলনা ইন্দুর কোন কর্ম্মচারী কাছে।
ধীবরে বিদায় দিয়া যোগ্য পুরস্কারে
ফিরিল তাহারা সবে নৌকায় এখন।
 নবীন বিস্মিত হয়ে বলিল তখন,

“পরিচয় দিতে কেন করিলে নিষেধ,
পরিচয় নিজে কেন দিলেনা তা’দের?”
বলিল বিষাদ ভরে দেবব্রত তাঁ’রে—
“কাঙ্গালিনী ইন্দুমতী এবে রাজরাণী,
রাজা নগেন্দ্রের সাথে তীর্থ পর্য্যটনে
গিয়াছেন তিনি কোথা, কেহ নাহি জানে।
দুর্ব্বল মানব চিত, দুর্ব্বলা রমণী।”
শুনিয়া নবীন ইহা লাগিল ভাবিতে।
 দেবব্রত আজ্ঞা দিল নাবিকে তখন
কলিকাতা অভিমুখে ফিরা’তে তরণী।